নাটোরে ভর্তির টাকা যোগাতে হলুদ ক্ষেতে কাজ করছেন জিপিএ-৫ পাওয়া রুবেল

মঞ্জুরুল আলম মাসুম, বাগাতিপাড়াঃ
প্রাইভেট বা কোচিং করা ভাগ্যে জোটেনি। তবে শুধুমাত্র নিয়মিত ক্লাস করেই এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন রুবেল হোসেন। কিন্তু ভালো ফলাফল করেও শুধুমাত্র অর্থাভাবের কারণে এখন উচ্চ শিক্ষা (অনার্স) নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

রুবেল হোসেন চলতি বছর নাটোরের বাগাতিপাড়ার তকিনগর আইডিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

শনিবার (২০ জুলাই) উপজেলার তকিনগর মাঠে হলুদ ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করার সময় কথা হয় রুবেলের সঙ্গে।

রুবেল জানান, তার বাড়ি বাগাতিপাড়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলার কামারহাটি গ্রামে এবং দিনমজুর এনামুল হকের ছেলে। তিনি বাগাতিপাড়ার তকিনগর গ্রামে স্থানীয় আবুল কালামের বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করছেন। অভাব অনটনের কারণে মাঠে শ্রমিকের কাজ করতে হয় তাকে। আর তা থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে পড়ালেখা করেন তিনি।

জানা গেছে, একই প্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি শাখার কম্পিউটার ট্রেডে এসএসসি পরীক্ষাও জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন রুবেল। এবার কারিগরি বিএম শাখার হিসাবরক্ষণ ট্রেড থেকে জিপিএ-৫ পেলেন তিনি।

রুবেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে অনার্স পড়তে চান। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তির জন্যও কোনো কোচিং করতে পারছেন না।

এদিকে দিনমজুর বাবা এনামুল হকের একার পক্ষে সংসারের খরচের পাশাপাশি ছোট বোন ইমা খাতুন ও রুবেলের পড়া-লেখার খরচ জোগাড় করা একেবারেই অসম্ভব।

তবে কী অভাবের কাছে হার মানবে রুবেলের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা? এমন প্রশ্ন তার মা সাবিনা বেগমের।

তিনি বলেন, ‘ছেলে ভালো ছাত্র। নিজের চেষ্টায় এ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। এখন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য মানুষের হলুদের ক্ষেতে কাজ করছে। কিন্তু সেই টাকায় কী বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব। আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবে কেউ সাহায্য করলে ছেলের স্বপ্ন হয়তো পূরণ হতো। বিভিন্ন জায়গায় ভর্তির পরীক্ষাগুলো দিতে পারত।’

নাটোরের বাগাতিপাড়ার তকিনগর আইডিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের হিসাবরক্ষণ ট্রেডের শিক্ষক রেজাউল করিম জানান, রুবেল অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। সুযোগ পেলে জীবনে অনেক বড় কিছু করতে পারবে সে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *