৭১ এর শহীদ নাট্য কর্মী মন্মথ প্রামানিকের স্বীকৃতি মেলেনি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নাটোর অফিস ॥
স্বাধীনতার ৫২ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন ১৯৭১ এর শহীদ পরিবারের মর্যাদার জন্য। যার পদচারনা ছিল সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সেই ৭১ এর শহীদ নাট্যশিল্পি মন্মথ প্রামানিকের নাম এক সময় হারিয়ে যাবে। সেই পরিবারের সন্তানরা তাদের বাবার জন্য রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতির জন্য দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ফিরছেন। মন্মথ প্রামানিক ৭১ এর শহীদ হিসেবে যেটুকু সম্মান পেয়েছেন সেটি ছিল বঙ্গবন্ধুর লেখা একটি পত্রের জন্য। ১৯৭২ সালে ওই পত্র দেখিয়ে শহীদ মন্মথ প্রামানিকের পরিবার পেয়েছিলেন দু’হাজার টাকা সরকারী সহায়তা। আর পেয়েছে নাটোরের নাট্যঙ্গনের ‘সাকাম’নাট্য সংস্থার নামকরনে নামের প্রথম অক্ষর সংযোজন। মন্মথ প্রামানিক সহ নাটোরের নাট্যাঙ্গনের প্রয়াত তিন নাট্যকর্মী সাদেক-উন-নবী,কালীদাস রায় এবং মন্মথ প্রামানিকের নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘সাকাম’ নামে একটি নাট্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। শহীদ মন্মথ প্রামানিকের ৯ সন্তানের ৩ জন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে জড়িত। বর্তমানে ৫ সন্তান জীবিত রয়েছেন। এদের একজন দিলীপ কুমার প্রামানিক একজন তবলা বাদক। যিনি তবলা প্রশিক্ষক হিসেবে নাটোরের মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিত।
দিলীপ প্রামানিক জানান, তার বাবা একজন অভিনেতা ছিলেন। তার এক ভাই ছিলেন পেইন্টার ও ড্রেসার। তিনিও নাটক ও যাত্রার সাথে জড়িত ছিলেন। কবছর আগে তিনি পরলোকগমণ করেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধের সময় আমাদের দুই ভাইকে রক্ষা করার জন্য শহরে আসার পথে আমাদের বাবা শহীদ মন্মথ প্রামানিককে পাকসেনারা গুলি করে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাবা-মা সহ পরিবারের সদস্যরা শহরের বাড়ি থেকে গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার গোবিন্দপুরে চলে যান। একাত্তরের সেদিন ছিল ১২ এপ্রিল। মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ টিকিয়ে রাখতে না পেরে নিরাপদ দুরত্বে চলে গেলে পাকসেনা নাটোরে প্রবেশ করে। এদিন নাটোরে প্রবেশ করার সময় ব্যাপহারে গুলি বর্ষন করে পাকসেনারা। আমরা দু‘ভাই আতংকিত হয়ে শহরের বাড়ি ছেড়ে হাজরা নাটোর হয়ে গ্রামের বাড়িতে যাই। ইতিমধ্যে নিজের দুই সন্তানের কথা চিন্তিা করে বাবা আমাদের নিতে একটি রিক্সায় চেপে শহরের দিকে আসছিলেন। পথে বর্তমানে নাটোর টিভি সেন্টারের কাছে বাবা ধুতি পড়া দেখে পাকসেনারা কোন কিছুর বলার সুযোগ না দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে বাবাকে হত্যা করে ফেলে রেখে যায়। পরে আমার এক সজন ঘটনা জানতে পেরে পাকসেনারা চলে যাওয়ার পর লাশ গ্রামে নিয়ে আসে। গ্রামে কোন শশ্মান ঘাট না থাকায় একটি বাঁশ ঝারে মাটি চাপা দেয়া হয় বাবাকে। দিলীপ প্রামানিক আরও বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের পরিবার শহীদ পরিবারের দাবি করে আবেদন করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছরের রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি মেলেনি।
নাটোরের বিশিষ্ট নাট্য কর্মী শিক্ষাবিদ প্রফেসর অলোক মৈত্র বলেন, প্রয়াত এই তিন বিশিষ্ট নাট্যকর্মীকে সম্মান জানাতে স্থানীয় নাট্যকর্মীরা তাদের নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে নাট্য প্রতিষ্ঠানের নামকরন করেন। সেই সাকাম নাট্য প্রতিষ্ঠান এখনও নাটোরকে চিনিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ৭১ এর শহীদ মন্মথ প্রামানিক। এই পরিবারের সদস্যরা শহীদ পরিবার হিসেবে রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছেন একাধিকবার। কিন্তু তাদের সেই চাওয়া পাওয়া ৫২ বছরেও পুরন হয়নি। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে ‘সাকাম’ এর পক্ষ থেকে মন্মথ প্রামানিককে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *