প্রতিমা বিসর্জন মঞ্চ তৈরি করেন ওরা!

নাটোর অফিস ॥
ওরা ১৩ জন সকলেই দিনমজুর। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন রেখে চলেছেন গত প্রায় ৭ বছর ধরে । মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ হয়েও ওরা প্রতি বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা বিসর্জনের মঞ্চ তৈরি করে থাকেন। প্রতিমা বির্সজনের স্থায়ী কোন ব্যবস্থা না থাকায় শহরের বঙ্গজল এলাকায় রানী ভবনীর রাজবাড়ির সামনের জয়কালী দিঘী নামে বিশাল জলাশয়ের শুরুর পথে প্রতিমা বিসর্জনের দুটি মঞ্চ সহ তিনটি মঞ্চ তৈরি করে থাকেন ওরা। শারদীয় দুগ্যোৎসবের বিজয়া দশমীর দিন এই মঞ্চ থেকে নাটোর শহরসহ শহরতলি এলাকার বিভিন্ন মন্ডপের অন্তত ৪০টি দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। এই ১৩ দিন মুজুরের অনেকের বাড়ি সদর উপজেলার ৭১-এর নৃশংস স্মৃতি বয়ে বেড়ানো ছাতনী গ্রামে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৪ জুন রাতে পাকসেনা ও তাদের দোসর রাজাকার -আলবদররা এই ছাতনী গ্রামে ঢুকে ঘুমন্ত প্রায় ৪শ বাঙ্গালীকে ধরে নিয়ে ছাতনী স্লুইস গেইটের কাছে নিয়ে গুলি ও ও জবাই করে হত্যা করে। হায়নার দল এদিন এসব বাঙ্গালীর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিহতদের শরীরে এসিড ছিটিয়ে দিয়ে উল্লাস করা হয় । এই মঞ্চ তৈরির কাজে নিয়েজিত অন্যদের বাড়ি একই উপজেলার লালমনিপুরের ভবানিপুর গ্রামে।
মঞ্চ তৈরি কাজে কর্মরত দিন মুজুর আব্দুর রাজ্জাক, মন্তাজ,জাহাঙ্গীর আলম, আকবর আলী,সাগর,আক্কাস আলী,মাসুদ,সাহেব আলী শেখ,রানা,নজরুল,কলিম উদ্দিন ও মমতাজ আলী জানান, বর্তমান পৌর মেয়র উমা চৌধুরীর সময়কাল থেকে তারা দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের মঞ্চ তৈরি করে আসছেন। এজন্য অনেকেই তাদের সাধুবাদ জানান। তারা সবাই মুসলিম সম্প্রদায়ের হলেও এই কাজ করতে তারা অসস্তিবোধ করেননা। বরং তাদের ভাল লাগে। এবার তারা গত প্রায় ২০দিন ধরে এই মঞ্চগুলি তৈরির কাজ করছেন। তাদের দলনেতা একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নারায়ন চন্দ্র দাস নাড়–।
নারায়ন চন্দ্র দাস নাড়– জানান, ওরা সবাই মুসলিম সম্প্রদায়ের হলেও প্রতিমা বিসর্জন মঞ্চ তৈরির কাজ করতে তারা কোন আপত্তি করেনা। বরং তারা অনন্দের সাথে করে। বাঁশ কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় মঞ্চগুলি। একটি ভিআইপি মঞ্চ সহ তিনটি মঞ্চ তৈরি করা হয়। এর মধ্যে দুটি প্রতিমা বির্সজনের জন্য। অন্যটি এমপি সহ বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতি,সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের জন্য তৈরি করা হয়। পৌর সভার অর্থায়নে মঞ্চগুলি তৈরি করা হয়। আগামী মঙ্গলবার বিজয়া দশমী। এদিনের জন্য মঞ্চ নির্মান কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে ভিআইপি মঞ্চ নির্মান শেষ হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য অপর দু’টি মঞ্চ নির্মাণ কাজ শেষের দিকে।
পৌরমেয়র উমা চৌধুরী জলি জানান, প্রতিবছর দুর্গোৎসবের সময় প্রতিমা বিসর্জনের জন্য মঞ্চ তৈরি করতে পৌরসভাকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়। একটি স্থায়ী মঞ্চ থাকলে প্রতি বছর এই বিপুল অর্থ ব্যয় হতোনা। জয়কালী দিঘীর এই স্থানে একটি স্থায়ী মঞ্চ তৈরি করার জন্য ইতিপুর্বে জেলা প্রশাসকের কাছে একাধিকবার মৌখিকভাবে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঞাঁ জানান, জায়গাটি সরকারী এবং প্রতœতত্ব বিভাগের অর্ন্তভুক্ত ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। বছরের মাত্র একটি দিনের জন্য জায়গাটি অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। কোন ধরনের সমস্যা হয়না। সরকারী জায়গায় বিশেষ করে ইতিহাস ঐতিহ্যের অন্তভুক্ত কোন জায়গায় স্থায়ী স্থাপনা নির্মান বিধিবর্হিভুত। এছাড়া পৌর সভা থেকে কোন আবেদন জানানো হয়নি। তবে প্রতœতত্ব বিভাগ সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *