তৃতীয় মাকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের অভিযোগ অতিরিক্ত সচিবের ছেলের বিরুদ্ধে

নাটোর অফিস॥
নাটোরের গুরুদাসপুরে পূর্নবাসন না করেই মালেকা বেগম (৪৫) নামে এক বিধমা মাকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করার অভিযোগ উঠেছে এক অতিরিক্ত সচিব ছেলের বিরুদ্ধে। শনিবার দিনভর অতিরিক্ত সচিব মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক উপস্থিত থেকে তাঁর লোকজন নিয়ে মালেকা বেগমের বসবাসের টিনশেডঘর ও গোয়ালঘর ভেঙ্গে উচ্ছেদ করে দেন। মালেকা বেগম অতিরিক্ত সচিবের বাবা চাঁদ মোহাম্মদ মন্ডলের তৃতীয় স্ত্রী। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামে।
অভিযুক্ত আবু বক্কর সিদ্দিক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত রয়েছেন দাবী করে বলেন, তিন বছর আগে তাঁর বাবা মৃত্যুর আগে তৃতীয় মা মালেকা বেগমের বসবাসের ১১ শতক ভিটেমাটি তাঁর নামে রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে গেছেন। এখন নিজেদের বসবাসের জন্য পাকা স্থাপনা নির্মানের প্রয়োজন হওয়ায় তৃতীয় মায়ের ঘরগুলো উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পাকা স্থাপনা নির্মানকাজ শেষ হলে সেখানে পুর্নবাসন করা হবে তাঁকে।
এদিকে বসবাসের একমাত্র আশ্রয়স্থলটি হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন মালেকা বেগম। সচিব ছেলের কুটকৌশল ও শক্তির কাছে অসহায় মা ন্যায়বিচার পেতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলের অদূরের ইদিলপুর বাজারের একটি ঘরে ওই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে মালেকা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘ অল্প বয়সে চাঁদ মোহাম্মদ মন্ডলের তৃতীয় স্ত্রী হয়ে আসেন তিনি। ২৬ বছরের দাম্পত্ত জীবন তাঁর। সংসার মৌসুমী খাতুন (২০) নামে এক মেয়ে রয়েছে। অনেক কষ্টে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। স্বামীর ভিটেমাটিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন দীর্ঘ বছর ধরে।
ছেলে সচিব হলেও কোন দিন খোঁজ-খবর পর্যন্ত রাখেনি। গরু-ছাগল, হাঁস-মূরগী লালন পালন করে কষ্টে সংসার চলে। তবে বিয়ের সময় তাঁর নামে ১০ কাঠা পরে মেয়ের নামে ১০ কাঠা করে ২০ কাঠা কৃষি জমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছিলেন স্বামী চাঁদ মোহাম্মদ মন্ডল। সেই জমি বর্গা দিয়ে যে টাকা পান তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে।
কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর ৩বছর পর এসে ভিটেমাটি নিজের দাবি করে বসতভিটে থেকে উচ্ছেদের কারনে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি। তাঁকে পুর্নবান না করেই উচ্ছেদের বিষয়টি অমানবিক বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মালেকা বেগম।
মালেকা বেগম আরো অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের শতশত মানুষের সামনে দিনভর তাঁর বসতভিটা থেকে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হলেও ভয়ে এগিয়ে আসেনি কেউ-ই।
তাছাড়া তাঁর প্রয়াত স্বামী চাঁদ মোহাম্মদের নামে খেতে ১৫/১৬ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। সে জমির ন্যায্য পাওনা তাঁকে বুঝে না দিয়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে জানান মালেকা বেগম।
এদিকে চাপিলা ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (ইউপি সদস্য) নজরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ শুরু হওয়ার পর মালেকা বেগম তাঁর কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সেখানে গেলে অতিরিক্তত সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করে সেখান থেকে তাড়িয়েদেন। প্রশাসনের উচ্চ পদে চাকরি করায় কোন প্রতিবাদ করার সাহস পাননি তিনি।
অথচ তাঁর বাবা চাদ মোহম্মদ অসুস্থ থাকার সময় ছেলে হয়েও পাশে দেখা যায়নি এই সচিব ছেলেকে। তৃতীয় স্ত্রী মালেকা বেগম স্বামীর দেখভাল করেছেন। ভিটেমাটিটি সচিবের হলেও পুর্নবান না করে উচ্ছেদ করা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম।
চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ তিনিও শুনেছেন ভিটেমাটিটি সচিবকে লিখে দিয়েছেন তাঁর বাবা। তবে পুর্নবান না করে উচ্ছেদ করাটা ঠিক হয়নি বলে জানান চেয়ারম্যান।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *