৩ বছর আগের ঘটনায় এমপি বকুল সহ ৫ জনের নামে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের

নাটোর অফিস ॥
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল সহ ৫ জনের নামে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছে মৃত আইয়ুব আলীর স্ত্রী শাহানাজ পারভীন। মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ১৫ জুন মামলার আদেশের দিন ধার্য করেছে নাটোরের জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ আবু সাঈদ। বাগাতিপাড়া থানার ওসিকে অপমৃত্য (ইউডি) মামলার রিপোর্ট, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, সুরতহাল এবং ভিসেরা রিপোর্ট আদালতে প্রেরণ করার আদেশ দেন।
শাহানাজ পারভীনের দায়েরকরা মামলা সুত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী সকালে টাকা পাওনা রয়েছে বলে এমপি বকুলের নির্দেশে আইয়ুব আলীকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। পরে এমপির নির্দেশে এমপির বাড়ীতে একটি গাছের সাথে বেঁধে রেখে চড় থাপ্পর মারা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্প পেপারে স্বাক্ষর দাবী করে অভিযুক্তরা। স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করলে এমপি বকুল গাছে ঝুলিয়ে আইয়ুব আলীকে পিটানোর নির্দেশ দেন। পরে তাকে বস্তা বন্দি করে পদ্মা নদীতে ফেলে দিতে বলেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আইয়ুব আলী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে আইয়ুব আলীর মরদেহ তার পরিবারের কাছে দিয়ে দেয় তারা। এরপর পুলিশ আইয়ুব আলীর মরদেহটির সুরৎহাল করে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। ঘটনার পর নিহত আইয়ুব আলীর স্ত্রী বাগাতিপাড়া থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তাদের অভিযোগ নেয়না। আজ বৃহস্পতিবার নিহত আইয়ুব আলীর স্ত্রী শাহানাজ পারভীন বাদী হয়ে সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলকে প্রধান আসামী করে আরো ৪ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ১৫ জুন মামলার আদেশের দিন দার্য করেন। মামলার অন্য আসামীরা হলেন,বাগাতিপাড়া উপজেলার স্যান্নাল পাড়া মহল্লার আব্দুল মজিদের ছেলে মহিদুল ইসলাম,মৃত ময়েজ সরদারের ছেলে আব্দুল মজিদ,মাড়িয়া গ্রামের সাজদার রহমানের ছেলে মাইনুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান।
তিন বছর পর মামলা করার করাণ জানতে চাইলে শাহনাজ পারভীন বলেন, এমপি তার দুই ছেলেকে সরকারী চাকুরী দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল বলে এতদিন মামলা দায়ের করেন নি তিনি। যখন তার ছেলেদের চাকুরী দেয়নি তখন আর অপেক্ষা না করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
এব্যাপারে এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলের প্রতিক্রিয়া জানতে তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলাটিকে মিথ্যা,বানোয়াট ও হয়রানিমুলক বলে দাবি করে বলেন,তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ইন্ধনে এই বানোয়াট মামলাটি করা হয়েছে। ওই সময় আইয়ুব আলী এবং তার প্রতিপক্ষরা আমার বাড়িতে শালিসের জন্য এসেছিল। সেটা আমি জানতাম না। প্রতিদিন অনেক লোক আমার বাড়িতে আসে তারাও এমনই এসেছিল। আমি বাড়ির ভিতর ছিলাম। বাইরে আইয়ুব আলী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিলে সেখানে তিনি স্ট্রোক করেন। আমার বাড়িতে কোন মারধরের ঘটনা ঘটেনি। মৃত আইয়ুব আলী এক হার্টের রুগী ছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য তিনি নিয়মিত তাকে সহায়তা করতেন। এছাড়া সে স্ট্রোক করে মারা যায় বলে ডাক্তারি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশের প্রতিবেদনেও তাই উল্লেখ রয়েছে। প্রায় তিন বছর আগের একটি স্বাভাবিক মৃত্যুকে পুঁজি করে ষড়যন্ত্রকারীরা আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মুলক এই মামলাটি করিয়েছে। তিনি ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন। কেননা বাদির আইনজীবি হিসাবে এডভোকেট মমতাজ রায়হান সিনাকে স্বাক্ষর করালেও মামলা দাখিলের সময় বাদির পক্ষে মুভ করেছেন তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট আবুল কালামের জুনিয়র এডভোকেট শাহ মখদুম রুপশ। এতেই পরিষ্কার বোঝা যায় এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
সাবেক এমপি এডভোকেট আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে শহিদুল ইসলাম বকুলের অভিযোগ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও এডভোকেট আবুল কালামের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *