নাটোরে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

নাটোর অফিস॥
আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে নাটোরে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।বিএনপি,জাতীয়পার্টি বা জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেনা তাই নির্বাচনী ডামাডোল আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের মধ্যেই সিমাবদ্ধ। দলীয় মনোনয়ন পাবার আশায় আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে প্রার্থীদের কেউ কেউ কেন্দ্রিয় প্রভাবশালী নেতাদের কাছে যাচ্ছেন। বিএনপি জেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করায় শুধু আওয়ামীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরাই রয়েছেন মাঠে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ মনোনয়নের গুরুত্বের চেয়ে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি। তারা তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং তাদের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নিচ্ছেন। জেলা পরিষদের এ নির্বাচনে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ভোটার হওয়ায় কদর বেড়েছে তাদের।
জেলা নির্বাচন অফিসার আনোয়ারুল হক জানান, জেলা পরিষদের এ নির্বাচনে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ভোটার। জেলা পরিষদ নির্বাচনে নাটোরে এবার মোট ভোটার ৮০৯ জন। এর মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হওয়ায় ৮০৬ জনের ভোটার তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে।
এদিকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রায় সকলেই দলীয় মনোনয়ন পাবার আশায় বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন,সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক এবং জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সাজেদুর রহমান খান, নাটোর জজকোর্টের পিপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি এবং জেলা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সৈয়দ মোর্ত্তুজা আলী বাবলু, জেলা যুবলীগের সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ ডলার।
দলীয় সুত্রে জানাযায়, ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে বর্ষিয়ান আওয়ামীলীগ নেতা বর্তমান প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজেদুর রহমান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ও সৈয়দ মোর্ত্তুজা আলী বাবলুর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের কয়েকজন নেতা কর্মী জানান,জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস ও সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের পছন্দের প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তুজা আলী বাবলুর নাম বিশেষ সুপারিশ সহ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাটোর বার সমিতির সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মালেক শেখ বলেন, তার জানামতে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক স্বাক্ষরিত মোট ৫ জনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কেউ কারো পছন্দের প্রার্থী থাকতেই পারে। তবে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা প্রতীক দিবেন তার পক্ষেই সবাই থাকবেন। তিনি বিশ্বাস করেন নাটোরে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর বিপক্ষে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না। ইতিমধ্যে ইউপি ও পৌর নির্বাচনে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছেন তাদের কেউ দলের পদ পদবীতে ফিরে আসতে পারেননি। একারনে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হবেননা।
জেলা যুবলীগের সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া চৌধুরী বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের তালিকায় না না থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। যদিও জেলা আওয়ামীলীগের কাছে প্রার্থীতার জন্য আবেদন করতে হবে এমন ঘোষনা দলীয়ভাবে জানানো হয়নি। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ দলের অনেকেই অবগত আছেন। দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেই তিনি দলীয় মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও দাখিল করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম দুজনেই দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করে বলেন,দল ও দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখেই দলীয় মনোননয়নপত্র উত্তোলন করে তা দাখিল করেছেন।
সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তুজা আলী বাবলু বলেন,একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন ও ধারণ করে আছি। অনেক ঝড়-ঝাপ্টা গেছে, কিন্তু আমি কখনও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুতি হইনি। আমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এ প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতিমুক্ত রাখবো। সততা ও দক্ষতার সঙ্গে এ প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন রয়েছে আমার।
আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান নেতা বর্তমান প্রশাসক সাজেদুর রহমান খান বলেন, তিনি শতভাগ আশাবাদি জননেত্রী শেখ হাসিনা এবারও তাকে মনোনয়ন দিবেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান জানান, যেহেতু পুনাঙ্গ কমিটি এখনও ঘোষিত হয়নি,সে ক্ষেত্রে তিনি ও সভাপতি স্বাক্ষরিত তিন জনের একটি তালিকা কেন্দ্রে প্রেরন করা হয়েছে। অন্য কেউ চাইলে তাদের নামও পাঠানো হবে।
সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সদ্য সাবেক হওয়া সাধারন সম্পাদক শফিুকুল ইসলাম শিমুল বলেন, কাউকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানোর কোন নির্দেশনা নেই। নৌকা বিরোধীরা দলের নেতৃত্ব হাতে পেয়ে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছেন। কোন এক সম্ভাব্য প্রার্থীর কাছে সুবিধা নিয়ে বিশেষ সুপারিশ করে তার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলেও শুনতে পাচ্ছি। যারা ইতি পুর্বে নৌকার বিরোধী অবস্থান নিয়ে নির্বাচর্নী কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন তাদের কাছে আওয়ামীলীগ কতটুকু নিরাপদ। বিরোধীতা করায় তাদের কাজ। তারা তাই করছেন। বিষয়গুলি সভনেত্রী সহ কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দকে অবগত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *