নাটোরের শোকের দিন আজ

নাটোরঃ  আজ ১ লা সেপ্টেম্বর। নাটোরের মানুষ প্রতিবছর দিনটিকে শোকের দিন হিসেবে পালন করে আসছে। উনিশ’একাত্তর সালের এই দিনে চার বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান রেজা, গোলাম রব্বানী রঞ্জু, সেলিম চৌধুরী ও আমিরুল ইসলাম বাবুল পাকসেনা এবং তাদের দোসর রাজাকার,আলবদর বাহিনীর হাতে শহীদ হন। এই চার বীরের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরও স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও তাদের বিচার হয়নি। এছাড়া শহীদদের পরিবারের অসম্মতি ও বিরোধের কারনে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে পৌরসভার অত্যাধুনিক শহীদ বেদী নির্মানের উদ্যোগও ভেস্তে যায়। তবে শহীদদের পরিবার ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এইসব চিহ্নিত রাজাকার আলবদরদের বিচার দাবি করেছেন।

একাত্তরে নাটোরের তৎকালীন ছাত্রলীগ ও সংগ্রাম পরিষদ নেতা মজিবর রহমান রেজা এবং গোলাম রব্বানী রঞ্জু ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে গুরুদাসপুর এলাকায় ঢুকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। একসময় তারা পাকিস্থানী দোসরদের প্রতরণার শিকার হয়ে রাজাকার-আলবদর বাহিনীর হাতে ধরা পরেন। উপজেলার মশিন্দা এলাকা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় তাদের দু’জনকে। শরীরে পেরেক ঢুকিয়ে ও সিগারেটের ছাঁকা দিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর ১ সেপ্টেম্বর তাদের হত্যা করা হয়।

অপর দুই শহীদের মধ্যে বাবুলকে পাকসেনারা ধরে নিয়ে গিয়ে ৭১ এর ২০ এপ্রিল হত্যা করে এবং সেলিম চৌধুরী নওগাঁর রণাঙ্গনে ১লা ডিসেম্বর শহীদ হন। শহরের কানাইখালী এলাকায় রেজা ও রঞ্জুকে দাফন করা হয়। মৃতদেহ না পাওয়ায় অপর দুই শহীদের পরিধেয় কাপড় একই স্থানে কবর দিয়ে প্রতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরন করা হয়। শুরুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সহ নানা সংগঠন দিন দিনটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করলেও এখন সে সংখ্যা কমে গেছে। প্রতিবছর  পারিবারিকভাবেই এই চার শহীদকে  শ্রদ্ধাভরে স্মরন করা হয়। পরবর্তীতে ওই কবরস্থান  পাকা করে দেয় পৌরসভা। মুক্তিযোদ্ধদের হত্যাকারী চিহ্নিত ২৪ রাজাকার-আলবদরের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে শহীদ মজিবর রহমান রেজার ভাই বিপ্লব বাদি হয়ে মামলা করেন। কিন্তু মামলার কোন অগ্রগতি নেই।

শহীদ বাবুলের নিকটাত্মীয় ও মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধকালীন কমান্ডার শেখ আলাউদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের এই চার শহীদের মধ্যে রেজা,রঞ্জু ও সেলিম শহীদের মর্যাদা পেলেও স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও অপর শহীদ বাবুলকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হয়নি। এমনকি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে তার পরিবার বঞ্চিত।

নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি বলেন, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর এই চার শহীদের কবরস্থান এলাকায় অত্যাধুনিক স্মৃতি সৌধ নির্মানের উদ্যোগ নেন। কিন্তু শহীদ পরিবারের বিরোধীতার কারনে তা ভেস্তে যায়। তবে তিনি এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শহীদ বাবুল শহীদের মর্যাদা না পাওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে বলেন মেয়র। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী চিহ্নিত রাজাকারদের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন শহীদদের পরিবারসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *