নাটোর গার্লস স্কুলে যৌন নিপীড়ন ও অনিয়ম নিয়ে তোপের মুখে কর্তৃপক্ষ

নাইমুর রহমান, নাটোর
নাটোর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে নিষ্ক্রীয়তা ও বিদ্যালয় পরিচালনায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে অভিভাবকদের তোপের মুখে পড়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসময় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ না করতে বলা হয়। সেই সাথে অভিভাবদের অভিযোগ ক্যামেরায় ধারণ করতেও একটি সংবাদভিত্তিক চ্যানেলের সাংবাদিককে নিষেধ করেন জেলা প্রশাসক।তবে অবিভাবকরা বলেছেন, এই মতবিনিময় একটি আইওয়াশ মাত্র।

শনিবার (৩১শে আগস্ট)দুপুরে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন করণীয়’ সম্পর্কে অভিভাবক ও সুধীজনদের এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন অনেক অভিভাবক। তারা জানান, দুই শিক্ষকের একজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও অপরজনকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দুই শিক্ষকের ব্যাপারে অভিভাবকদের বক্তব্য জানতে তাদের মতামত নিতে ডাকা হলেও এর পরিবর্তে শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে নামমাত্র আলোচনা করে সভা শেষ করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, অতীতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যে লিপ্ত হয়ে ছাত্রীদের প্রাপ্য শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করেছেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিনের নিষ্ক্রিয়তায় যৌন নীপিড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বাঁচানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এসব বিষয়ে একাধিকবার প্রতিকার চেয়ে মৌখিক অভিযোগ করা হলে আব্দুল মতিন উল্টো অভিভাবকদের ভৎসনা করেছেন। পাশাপাশি নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের নাম ভাঙ্গিয়ে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন।

অভিভাবকরা আরো অভিযোগ করেন, কোন অনিয়মের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষককে বলতে গেলে তিনি ছাত্রীদের চিহ্নিত করে রাখেন। পরে শ্রেণির অনান্য শিক্ষক দ্বারা তাকে মানসিকভাবে নাজেহাল করা হয়। শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেন না। এছাড়া, কম্পিউটার ল্যাব থাকার পরও অতিরিক্ত রেজিস্ট্রেশন ফি, বিবিধ খরচের নামে অতিরিক্ত ১০০টাকা আদায়সহ নানা অনিয়মের প্রসঙ্গ তুলে অভিভাবকরা এসব বন্ধের দাবী জানান।

সভা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ করে এক ছাত্রীর হাতে মাইক্রোফোন দিয়ে নিপীড়ক শিক্ষক সাইফুল ইসলামের পক্ষে কথা বলতে শিখিয়ে দিলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরা। পরে স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) আশরাফুল ইসলামের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, পৌর মেয়র উমা চৌধুরী, শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ, জর্জকোর্টের পিপি সিরাজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তোজা আলী বাবলু, কথাসাহিত্যিক ডাঃ জাকির তালুকদার, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ খালিদ বিন জালাল, আইনজীবি খগেন্দ্রনাথ রায় প্রমুখ।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ সাংবাদিকদের জানান, চলমান আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠে আবারো সুষ্ঠ পরিবেশে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষকরা যাতে নিয়মিত ক্লাসে আসেন সে বিষয়ে নজরদারী বাড়ানো হবে। যৌন নিপীড়নের অভিযুক্ত শিক্ষকদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য, গত ২৬ আগস্ট তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় তার অভিভাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার হন স্কুলের শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক আব্দুল হাকিম। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাক্তন এক ছাত্রীর গণিতের শিক্ষক সাইফুল ইসলামে কথোপকথন। এ নিয়ে চরম অনাস্থা ও বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় শিক্ষক ও অভিভাবকদের মাঝে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *