নাটোরের সিংড়ায় শ্রমিক সংকট, ধান কাটছে যন্ত্র

নাটোর অফিস॥
বোরো ধানের ‘গোলা’ চলনবিল। দিগন্ত বিস্তৃত বিলজুড়ে দোল খাচ্ছে কাঁচা-পাকা ধানের শীষ। আবাদ ছাড়িয়েছে লক্ষমাত্রা, নেই প্রাকৃতিক দুর্যোগও। তবে বিল ভরা ধান কৃষকের গোলায় উঠবে কি-না, তা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে করোনা মহামারী। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছে না চলনবিলের কৃষক। প্রতিবছর কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ ১৬ জেলা থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক ধান কাটাতে আসেন চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলায়। এবার করোনা দুর্যোগে কোনো শ্রমিক আসতে পারেনি চলনবিলে। এতে সময়মতো ধান কাটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় চলনবিলের কৃষক।

শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় ৫০ ভাগ ভর্তুকি মূল্যে সিংড়ার জন্য ৬টি কম্বাইন হার্ভেস্টার মেশিনের ব্যবস্থা করেছে কৃষি বিভাগ। রোববার(১৯শে মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে হার্ভেস্টার মেশিন দ্বারা ধান কাটা শুরু হয়েছে সিংড়ায়। তবে বিপুল পরিমাণ ধান মেশিনে কেটে সময়মতো ঘরে তোলা সম্ভব নয় বলছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সিংড়ায় ৩৪ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা বোরোর আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬শত ৫০ হেক্টর। প্রতিবছর বোরো ধান কাটা মৌসুমে পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা সহ ১৬টি জেলা থেকে শ্রমিক আসেন ধান কাটতে।

কৃষকরা জানান, প্রায় প্রতিবছরই অকাল বন্যার কারণে বোরো ধানের ফলন বিপর্যয় ঘটে। এবার কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় ফলন ভালো হয়েছে। নায্যমূল্য পেলে বিগত বছরের লোকসান কাটিয়ে ওঠার আশা ছিলো তাদের। বোরো চারা রোপনের পরপরই অনেক কৃষক শ্রমিকদের সাথে ধান কাটার চুক্তি সম্পাদন করেন। সে হিসেবে ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য খোলা পরিস্কার, ধান মাড়াই করার যাবতীয় কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন তারা। হঠাৎ করোনার কারণে নিজ জেলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ধান কাটতে আসা শ্রমিকরা। স্থানীয় শ্রমিকরাও বাইরে বের হচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না হলে দীর্ঘ সময় অকর্তিত দীর্ঘসময় থাকবে বিলের ধান। এতে সময়মতো মাড়াই, শুকানো, সংরক্ষণ বা বিক্রি বিঘ্নিত হবে।

ডাহিয়া ইউনিয়নের কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘বছরের এই সময় হাজার হাজার শ্রমিক এসে ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়ে যায়। কিন্তু এবার তারা নাই। কীভাবে ধান ঘরে উঠবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

কলম ইউনিয়নের কৃষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ১৫ বিঘা জমিতে ধান প্রায় পেকে গেছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভাল হবে আশা করছি। তবে শ্রমিকদের সাথে কথা বললেও কিভাবে আসবেন তারা, তা এখনো ঠিক হয়নি। বাইরের শ্রমিকরা না এলে বিপদের সীমা থাকবেনা।’

লালোর ইউনিয়নের কৃষক মাজেদুর রহমান বলেন,‌ ‘শ্রমিক আসতে না দিলে এবার মাঠেই থাকবে ধান। আমাদের নিজেদের পক্ষে এতো দান কাটা সম্ভব না। তাছাড়া হার্ভেস্টার মেশিনও আমরা সময়মতো পাবো না বলে আশঙ্কা করছি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘বাইরে থেকে আগত ধান কাটা শ্রমিকদের জেলায় প্রবেশের ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু করেছি। চলনিলের বড় বড় চাষীরা শ্রমিকের চাহিদা দিচ্ছেন। যেসব জেলা থেকে তারা শ্রমিক আনতে চান, সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক শ্রমিকদের সুস্থতার প্রত্যয়ন প্রদান সাপেক্ষে আসার সুযোগ দিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, নাটোর জেলার ৭টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *