নাটোরে খাল নিয়ে রশি-টানাটানি

স্টাফ করেসপনডেন্ট,বড়াইগ্রাম॥
কয়েকবছর আগেও দখল-দূষণে প্রায় বন্ধ ছিলো নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের গড়মাটি এলাকার কাঁটাখালি খালের উৎসমুখ। তখন খালের জমি দখল করতে করতে নালা বানিয়ে ফেলেছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। সেই খাল সংস্কার হয়েছে মাত্র কয়েক মাস। এবার খালটি নিজেদের দখলে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে স্থানীয় দুই পক্ষ। দখল বজায় রাখতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের নামে স্মারক নম্বরসহ ভুয়া ইজারা সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করে উপস্থাপনও করা হয়েছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, খাল নিয়ে বিবাদমান দুই পক্ষের এমন রশি টানাটানি যে কোন সময় সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।

বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কাঁটাখালি খালটির দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার। অবস্থান গড়মাটি বড়ধার স্লুইস গেইট থেকে চিনাডাঙ্গা পদ্মবিল পর্যন্ত। নালায় পরিণত হওয়া খালটির খনন ও স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিশ্চিতে চলতি বছর মার্চের শুরুতে ৬ ফুট গভীর ও ৪৭ ফুট চওড়া করে খালটি খনন ও প্রশস্ত করা হয়। এ কাজে ব্যয় করা হয় ৭৭ লাখ টাকা।

সংস্কার শেষে প্রাণ ফিরে পাওয়া খালটি এবার নিজেদের দখলে নিতে নানা কৌশলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় গ্রাম পরিচালনা কমিটি ও গড়মাটি মৎসজীবী সমবায় সমিতি। নিজেদের দাবি করে দুইটি পক্ষই পরস্পরকে দোষারোপ করছে। সম্প্রতি কাঁটাখালি খাল এলাকায় গেলে দখল চেষ্টারত দুইটি পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।

স্থানীয় গ্রাম পরিচালনা কমিটির অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তারা খালটির রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন। খালে পানিপ্রবাহ বজায় রাখতে স্ব-উদ্যোগে সাধ্যানুযায়ী সংস্কারের চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের নিকট খাল সংস্কার ও সম্প্রসারণ নিয়েও তারা তাগাদা দিয়েছেন। তাদের দাবির মুখেই খালটি সংস্কার করা হয়েছে।

অপরদিকে, গড়মাটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা সদ্য সংস্কারকৃত খালটি দখল ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের থেকে অনুমতি নিয়েছেন। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র তাদের নিকট আছে। তাই খালটি তারা নিজেদের অধিকারে রাখতে চান। কিন্ত বাধা দিচ্ছে গ্রাম পরিচালনা কমিটি।

এ ব্যাপারে গ্রাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু আসলাম বলেন, শুরু থেকেই কাঁটাখালি খালটি আমাদের তত্ত্বাবধানে ছিলো। এখন হঠাৎ করে গড়মাটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি খালের দখল নিতে চায়। তারা উপজেলা প্রশাসনের অনুমোদনের কাগজ দেখাতে চায়। আমরা জেনেছি এ সংক্রান্ত কোন অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি।

গড়মাটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ বলেন, আমরাই খালের প্রকৃত দাবিদার। তবে এজন্য আমরা কোন কাগজ জালিয়াতি করিনি। আমাদেরকে হেয় করতেই প্রতিপক্ষ ইউএনও অফিসের ভুয়া আদেশনামা তৈরি করে প্রদর্শন করছে।

বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার পারভেজ বলেন, কাঁটাখালি খাল সম্প্রতি খনন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সমিতি বা কমিটিকে ইজারা দেওয়া হয়নি। এ সংক্রান্ত কোন নথিপত্র থাকলে তা ভুয়া। সরকারি খালটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিবাদমান দু’পক্ষকে ডেকে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *