নাটোরে একদিনে মুক্তার মোল্লার শিকার ৩৪৪ ইঁদুর!

নাটোর অফিস॥
নাটোরের বাগাতিপাড়ার মুক্তার মোল্লা (৪৬) নামের এক দিনমজুর ফসল রক্ষায় মাঠে মাঠে ইঁদুর শিকারে ঘুরে বেড়ান। মনের প্রবল জেদ ও ইচ্ছার কারনে ফাঁদ হাতে ছুটে চলেন ইঁদুর শিকারে। ইঁদুরের জায়গা বুঝে ফাঁ পেতে ইঁদুর শিকারে সিদ্ধ হস্ত মুক্তার মোল্লা স্বেচ্ছায় ইঁদুর মারার কাজটি করেন। ফসলের মাঠ দেখলেই নেমে পড়েন ইঁদুর শিকারে। দিনমজুর মুক্তার মোল্লার এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ রীতিমতো এলাকায় সাড়া ফেলেছে।

বাগাতিপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের চকহরিরামপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ মোল্লার ছেলে মুক্তার মোল্লার সাথে কথা হয় উপজেলা কৃষি অফিসে। রোববার ফাঁদে আটকা পড়া বেশ কিছু ইঁদুরসহ উপজেলা কৃষি অফিসে হাজির হয়েছিলেন তিনি।

মুক্তার মোল্লা বলেন, দশ বছর ধরে উপজেলার ভেতরের চকহরিরামপুর, হরিরামপুর, তমালতলা, যোগীপাড়া, কোয়ালীপাড়াসহ আশে-পাশের মাঠে মাঠে ইঁদুর শিকারের খোঁজে নিজের ইচ্ছায় ঘুরে বেড়ান। একসময় তিনি শ্যালোমেশিনে পানি সেচের ব্যবসা করতেন। ফসলের ক্ষেতে পানি দেওয়ার সময় গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা ইঁদুর মারতেন তিনি । এরপর বিষটোপ দিয়ে ফসলি জমি এবং বাড়ির ইঁদুর শিকার করতেন। এভাবে ইঁদুর মারার নেশায় পেয়ে বসে তাকে । এখন পঞ্চাশটির মত সিটকা ফাঁদ কিনেছেন। প্রায় দু বছর ধরে এই ফাঁদেই তিনি ইঁদুর শিকার করে চলেছেন। প্রতিদিন বিকাল হলেই ময়দার টোপ ফাঁদে লাগিয়ে ফসলি জমিতে রেখে দেন। প্রথম দফায় রাত নয়টার দিকে এবং দ্বিতীয় দফায় পরদিন সকালে মাঠে নেমে ফাঁদে ইঁদুর পড়েছে কিনা যাচাই করেন। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে ফাঁদে আটকা পড়া ইঁদুরগুলো তিনি মাটিতে পুঁতে ফেলেন। প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টি ইঁদুর শিকার করেন । একদিনে তিনি সর্বোচ্চ ৩৪৪টি ইঁদুর শিকার করেছেন। নিজের জমি নাই তবুও এভাবে দশ বছর ধরে চলছে তার ইঁদুর নিধনের ব্যতিক্রমী নেশা। এ দশ বছরে অন্তত ৫০ হাজার ইঁদুর মারার দাবি করেন তিনি।
মুক্তার মোল্লা বলেন, ‘একসময় কামলা দিয়ে জমির মালিকের কাছ থেকে ধান নিতাম। একদিন মাটির ঘরের মেঝেতে রাখা সব ধান গর্তে নিয়ে যায়। সেসময় সিটকা ফাঁদ পেতে ইঁদুর মেরেছিলাম। ওই ফাঁদে আটকা পড়ে হাতের একটি আঙ্গুলের মাথা কাটা পড়ে। তখন থেকে ইঁদুর শিকারের জেদ আরও বেড়ে যায়। এখন কৃষকদের কষ্টে উৎপাদিত ফসল রক্ষায় ইঁদুর মারতে ফাঁদ হাতে মাঠে মাঠে যাই।’জমির মালিকরাই উৎসাহ দেয়। কেউ বাধা দেয়না।

উপজেলার চকহরিরামপুর গ্রামের কৃষক জাফর প্রামানিক বলেন, মুক্তার মোল্লার এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এলাকায় রীতিমতো সাড়া ফেলেছে। দীর্ঘদিন থেকে সে তাদের জমিতে ফাঁদ পেতে ইঁদুর মারে। এলাকায় তিনি ইঁদুর মারার মুক্তার মোল্লা নামে পরিচিতি পেয়েছেন।

একই এলাকার ফজলুর রহমান বলেন,যেদিন সে ‘৩৪৪ টা ইঁদুর শিকার করেছিল ,সেদিন সে আমার জমি থেকেই ৫৬ টি ইঁদুর মেরেছিল। ফসলের মওসুম হলেই আমার জমিতে সে ফাঁদ পেতে ইঁদুর শিকার করে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোমরেজ আলী বলেন, ধান, গম, মসুর, কলাইসহ বিভিন্ন ফসলের জন্য ক্ষতিকর ইঁদুর নিধনে প্রতি বছর বিশেষ সপ্তাহ পালন করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। ইঁদুর শিকারী মুক্তার মোল্লার কথা অনেক গ্রামেই শোনা যায়। স্বেচ্ছায় মুক্তার মোল্লার এই উদ্যোগে ফসলের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করছে। এই কাজে উৎসাহ যোগাতে আগামীতে ইঁদুর নিধন সপ্তাহে পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *