ময়নার বাবা খ্যাত ঘোড়া গাড়ি চালক হাবেলের হাঁক-ডাক আর শোনা যাবেনা!

নাটোর অফিস॥
আর কখনও ময়নার বাবা হিসেবে পরিচিত মুখ হাবেল প্রামানিকের ডাক শোনা যাবেনা। না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহির রাজিউন)। রানী ভবানী রাজবাড়ি চত্বরে প্রবেশ করা মাত্রই হাঁক শোনা যেত ময়না ঘোড়া গাড়ির চালক হাবেল প্রামানিকের। ও দাদা আদাব। আমার ঘোড়া গাড়িতে চড়তে। এই ঘোড়া গাড়িকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় টমটম গাড়ি। নাটোর শহরের পরিচিত মুখ ছিলেন ময়না ঘোড়ার বাবা খ্যাত হাবেল প্রামানিক। হারিয়ে যেতে বসা আবহমান বাংলার টমটম নামের ঘোড়া গাড়ি চালক ছিলেন তিনি। তিনি ঘোড়ার নাম রেখে ছিলেন ময়না। তিনি নিজের মেয়ের মত আদর করতেন ময়নাকে। নাটোরের রানী ভবানীর রাজবাড়িতে প্রবেশ করলেই দেখা মিলতো ‘ময়না ঘোড়ার গাড়ি সহ হাবেল প্রামানিককে। তিনি ছিলেন নাটোর সদর উপজেলার হালসা বাজারের বাসিন্দা। এক সময় মানুষ তার ঘোড়া গাড়িতে করে শহরের যাতায়াত করতে। আধুনিকতার ছোঁয়া সেগুলো এখন স্মৃতি। নিজের পেশাকে ধরে রাখার প্রানান্তর চেষ্টা করে গেছেন। এই টমটম চালকদের অনেকেই অন্য পেশায় ফিরে গেছে। যে দু’চারজন ছিলেন তাদের মধ্যে হাবেল প্রামানিক ছিলেন খুবই পরিচিত। মুলত তার ঘোড়ার নাম ময়না রাখার কারনেই তিনি বেশী পরিচিত হন। অনেকেই তার ঘোড়া গাড়িতে করে গ্রামীণ পথে যাতায়াত করতেন। অনেকেই নানা বা দাদা বাড়িতে যাওয়ার জন্য এই ঘোড়া গাড়ি বা টমটমে যেতেন। রসিক ও ভালো মনের মানুষ ছিলেন হাবেল প্রামানিক। তাই তার ঘোড়া গাড়িকেই ভেশঅ পছন্দ ছিল অনেকের। কালের বির্বতনে হারিয়ে যেতে বসা টমটম গাড়িকে সচল রেখেছিলেন ময়নার বাবা খ্যাত হাবেল প্রামানিক সহ ২/৪ জন ঘোড়া গাড়ি চালক। রাজপথে যাত্রি না থাকায় তারা বেছে নেন শিশু কিশোরদের বিনোদন যোগাতে। তারা নাটোর রাজবাড়ি অথাৎ রানী ভবানীর রাজবাড়ি চত্বর বেশে নেন। রাজবাড়ি চত্বরে ঘুরিয়ে সারা দিনে যা আয় হতো তা দিয়েই চলতো তাদের সংসার ও ঘোড়ার খরচ। প্রায় সখের বসেই ঘোড়া গাড়ি চালাতেন হাবেল প্রামানিক। অনেকেই রসিকতা করে হাবেলকে ময়নার বাপ বলে ডাকতেন। সে থেকেই তিনি হয়ে যান ময়নার বাপ। ময়নার বাপ খ্যাত হাবেল প্রামানিকের চলে যাওয়া অনেকেই কষ্ট পাচ্ছেন। ময়নার বাপ চলে যাওয়ায় আগামিতে ঘোড়া গাড়িও হারিয়ে যাবে বলে অনেকেই শংকা প্রকাশ করছেন। ময়নার বাপের বিদায়ের মত অন্যদের বিদায়ের সাথে সাথে টমটম গাড়ির বা ঘোড়া গাড়ি হারিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন অনেকেই। আবাহমান বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বা প্রজম্মদের কাছে বিনোদনের খোরাক যোগাতে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণসহ সহযোগীতা কামনা করেছেন তারা।
এদিকে নাটোরের ইতিহাস ঐতিহ্যের বাহন টমটম বা ঘোড়া গাড়ি চালক পরিচিত মুখ ময়নার বাবা খ্যাত মরহুম হাবেল প্রামানিকের জানাজার নামাজ হালসা গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজ শেষে তাকে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হবে। ভাল মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত ময়নার বাবা মরহুম হাবেল প্রামানিককে জান্নাতবাসী করার জন্য আল্লাহপাকে দরবারে দোয়া চেয়েছেন এলাকাবাসী।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *