নাটোর বিআরটিএ অফিসে দুদকের অভিযান

নাটোর অফিস ॥
টাকা ছাড়া লাইসেন্স মেলেনা’ সেবাগ্রহিতাদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নাটোর বিআরটিএ অফিসে হানা দেয় দুদকের একটি টিম। বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টার দিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রাজশাহীর সমন্বয়কারী সহকারী পরিচালক আমির হোসাইনের নেতৃত্বে দুদকের একটি টিম নাটোর বিআরটিএ অফিসে অভিযান চালায়। দলটি নাটোর বিআরটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করা বাবদ ঘুষ দাবি ও দালালদের মাধ্যমে কাজ করানোর অভিযোগের সত্যতা খুজতে এই অভিযান চালান। টিমটি অফিসের বিভিন্ন ফাইল খতিয়ে দেখেন। এসময় তারা হয়রানির শিকার বেশ কয়েকজন সেবা গ্রহিতার সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রাজশাহীর সমন্বয়কারী সহকারী পরিচালক মো. আমির হোসাইন বলেন, ঢাকা অফিসের নির্দেশে তারা নাটোর বিআরটিএ অফিসে অভিযানে আসেন। তারা অফিসের বিভিন্ন নথি দেখেছেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করা বাবদ সেবা গ্রহিতাদের কাছে ঘুষ দাবি এবং দালালদের মাধ্যমে কাজ করানোর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। বিআরটিএ নাটোর অফিসের বেশ কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আমাদের আজকের অভিযানের বিষয়বস্তু নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন কমিশন বরাবর দাখিল করবো। ঢাকা অফিস পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন।
অভিযান শেষে আমির হোসাইন বলেন, বিআরটিএ নাটোরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী দালালের মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণ করে এমন অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকা অফিসের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালে বেশ কয়েকজন সেবা গ্রহীতার মোবাইল ফোনে ফোন দিয়ে আমরা এসব অনিয়ম- দূর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পাই। এসব বিষয় নিয়ে বিআরটিএ নাটোরের সহকারী পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি (সহকারী পরিচালক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সতর্ক করেছেন। সেই সাথে দালালদের দৌরত্ব বন্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
অভিযানের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজশাহীর উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন, সহকারী পরিদর্শক মো. মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ্য নাটোর বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সেবা গ্রহিতাদের অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। এই অফিসে গাড়িরর রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসলেই চাওয়া হয় টাকা। নইলে হয়রানি সহ ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঠাকা ছাড়া ফাইল নড়েনা। দিনের পর দিন ঘুরতে হয় এই অফিসে। তবে দাবিকৃত টাকা দিলে দ্রুতই কাজ সম্পন্ন হয়। দালালদের মাধ্যমে করানো হয় কাজ। এসব দালাল বিআরটিএর কোন কর্মচারী না হয়েও তারা অফিসেই বসেন। এদের খুশী করলেই দ্রুত কাজ হয়। ডিসি অফিসের ভবনে বিআরটিএ অফিসের কার্যক্রম চললেও অফিসটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দালালদের সক্রিয় সিন্ডিকেট। এরা গোপনে কাজ করলেও ঘুরে বেড়ান প্রকাশ্যে।
বড়াইগ্রাম উপজেলার আহম্মেদপুর বাজারের মাসুদ রানা জানান,তিনি ঢাকায় চাকরী করেন। মোটর ড্রাইভিংয়ের লাইসেন্সের ফিঙ্গার দিতে তাকে কয়েকবার নাটোরে আসতে হয়েছে। ছুটি দিতে চায়না অফিস। সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি ফিঙ্গার দিতে এসেছেন অন্তত তিনবার। কদিন ঘুরে হয়রানি হওয়ার পর দালাল ধরে দ্রুত কাজ করতে পেরেছি। এমন অনেকেই ভোগান্তির শিকার হওয়ার পর বাদ্য হয়েই দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ফিঙ্গার এবং লাইসেন্স করিয়ে নিয়েছেন।
নাটোর বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, জেলায় নিবন্ধিত মোট মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। অন্যান্য ভারি যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ২০০। প্রতি মাসে নবায়নসহ গড়ে প্রায় ৮০০ জন এই অফিস থেকে নতুন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স করেন।
নাটোর বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এটিএম ময়নুল হাসান কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার তিনি নাটোর অফিসে যোগদান করেছেন্। অনিয়ম ও ঘুষ-দুনীর্তির বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এছাড়া সকলের সহযোগীতা পেলে নাটোর বিআরটিএ অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত করা হবে। অফিসকে দালালমুক্ত করতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *