অপহরণ ও ধর্ষণের দায়ে এক ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড

নাটোর অফিস ॥
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় এক নারীকে অপহরন করে আখ ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে জোড়পুর্বক ধর্ষণ করার অপরাধে শ্রী দুলাল (৩৬) নামে নামে এক ব্যক্তিকে পৃথক দুইটি ধারার একটিতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অপরটিতে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। একই সঙ্গে জরিমানার সমুদয় টাকা ভিকটিমকে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরে নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ( জেলা ও দায়রা জজ) বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম এই আদেশ দেন। এসময় দোষী সাব্যস্ত না হওয়ায় মোঃ নিজাম (৫২) নামে অপর একজনকে খালাস দেয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনায় প্রায় ১৪ বছর পর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
দন্ডপ্রাপ্ত দুলাল বাগাতিপাড়া উপজেলার চিমনাপুর গ্রামের অজিত কুমার দাসের ছেলে। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ২৪ বছর। অপরদিকে খালাসপ্রাপ্ত নিজাম একই গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ৪০ বছর। আর ভিকটি একই গ্রামের বাসিন্দা।
নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর ( বিশেষ পিপি) আডভোকেট আনিসুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ২০১০ সালের ২৩ জুলাই রাত পৌনে আটটার দিকে ওই নারী তার ছোট ভাইকে খুঁজতে বাড়ির বাহিরে যান। এসময় ওৎ পেতে থাকা প্রতিবেশী শ্রী দুলাল ও নিজাম ঝোপ-জঙ্গল থেকে বের হয়ে এসে ভিকটিমকে মুখ চেপে ধরে এবং মুখে গামছা ঢুকিয়ে জোড়পুর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়। ভিকটিমকে তার বাড়ির অদুরে জনৈক কালাম চৌধুরীর আখ ক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে। এসময় ভিকটিমের গোঙ্গানীর শব্দ পয়ে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে চোর চোর বলে চিৎকার করতে থাকে। এতে দুলাল ও নিজাম দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। ভিকটিম পরে বিষয়টি তার পরিবার ও গ্রাম্য প্রধানদের জানালে তারা শালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ঘটনার দুইদিন পর ২৫ জুলাই রাতে ভিকটিম নিজেই বাদি বাগাতিপাড়া থানায় দুলাল ও নিজামকে অভিযুক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ড শেষে থানার উপ-পরির্শক (এসআই) আব্দুর রহিম একই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জসীট প্রদান করেন। ওই মামলার দীর্ঘ শুনানী ও সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে বিচারক আজ বুধবার এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে শ্রী দুলালকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ( সংশোধিত/২০০৩) এর ৯(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন বিচারক। এছাড়া একই মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ( সংশোধিত/২০০৩) এর ৭ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায়ে জরিমানার সমুদয় ভিকটিম দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
বিশেষ পিপি আনিসুর রহমান আরও বলেন, বিজ্ঞ বিচারকের দেয়া রায়ে বলা হয়েছে দন্ডপ্রাপ্ত দুলালের সাজা একটার পর একটা কার্যকর হবে। এছাড়া মামলার রায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ( সংশোধিত/২০০৩) এর ৭/৯(১)/৩০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত না হওয়ায় নিজামকে খালাস দেন বিচারক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *