সিংড়ায় নারীর পাতা ফাঁদে যুবক , ৯৯৯ ফোন দিয়ে উদ্ধার

নাটোর অফিস॥
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমুতে পরিচয়ের সূত্র ধরে এক যুবতির ফাঁদে পা দিয়ে এস.এ মোশফেকুল (৩২) নামের এক যুবক এখন শ্রীঘরে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার সিংড়া পৌর শহরের নিউ উপশহর মহল্লায়। গ্রেফতারকৃত যুবক এস.এ মোশফেকুল বগুড়া সদরের বারপুর বারবাকপুর গ্রামের এস.এম সারোয়ার হোসেন এর ছেলে। পেশায় তিনি একজন দন্ত চিকিৎসক বলে জানা গেছে। রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে ওই যুবককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর যুবতিকে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তার চাচার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। আর এই ঘটনায় প্রতারকদের ছাপিয়ে ধর্ষণ মামলা নিয়ে যুবককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মিতা খাতুন (২৭) নামের এক যুবতী তার সঠিক নাম পরিচয় গোপন রেখে উপজেলার সাতপুকুড়িয়া গ্রামের সুমন নামের এক যুবককে আপন ভাই সাজিয়ে সিংড়া পৌর শহরের নিউ উপশহর মহল্লার একটি তিনতলা বাসার দ্বিতীয় ফ্লোরের দুটি রুম ভাড়া নেন। বাসার মালিক পরিবারসহ রাজশাহী শহরে অবস্থানের সুযোগে অবৈধ কার্যক্রম শুরু করেন মিতা খাতুন। সেখানে রাতে পর পুরুষদের আত্মীয় পরিচয়ে মাঝে মধ্যেই আড্ডা বসে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টায় যুবতী মিতা খাতুনের সাথে ইমুতে পরিচিত বগুড়ার যুবক এস.এ মোশফেকুলকে সিংড়ার ভাড়া বাসায় ডেকে অনৈতিক সম্পর্কে জরিয়ে পরলে আগে থেকে ঘরের মধ্য লুকিয়ে থেকে সেই ছবি এবং ভিডিও করেন যুবতীর প্রতারণার সঙ্গী সুমন, তৌকির আহমেদ সহ তিন যুবক। ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই যুবকের কাছ থেকে দশ লাখ টাকা দাবি করেন মিতা খাতুন ও প্রতারক চক্র। এক পর্যায়ে যুবক এস.এ মোশফেকুল মুঠোফোনে তার পরিবারকে বিষয়টি জানালে ৯৯৯ এ ফোন দেন বিপদে পড়া ওই যুবকের পরিবারের লোকজন। গভীর রাতে জীবন বাঁনানোর তাগিদে যুবক এস.এ মোশফেকুল ওই বাসার ছাদে গিয়ে চিৎকার-চেচামেচিও শুরু করেন। ততক্ষণে মিতা খাতুন সহ প্রতারক চক্র বাসার মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়। পড়ে সেই বাসার ছাদে থেকে যুবককে উদ্ধার করে নিয়ে যায় থানা পুলিশ। আর শনিবার বিকেল ৩ টায় প্রতারক চক্রের মূলহোতা মিতা খাতুনকে থানায় হাজির করে নেওয়া হয় ধর্ষণ মামলা। বাঁচিয়ে দেওয়া হয় প্রতারকচক্রের মূলহোতাসহ চক্রের সদস্যদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপশহরবাসিরা জানান, এর আগে ওই যুবতী মিতা খাতুন প্রায় দুই বছর চাদপুর মহল্লার প্রভাষক জহুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বাসায় ভাড়া থাকতো। সেখানে রাতে উঠতি বয়সের ছেলেদের আনা-গোনায় বাসার মালিক তাকে বের করে দিলে কৌশলে পাশের নিউ উপশহরের এই নিরিবিলি বাসা ভাড়া নিয়ে আবার পূর্বের প্রতারণার ফাঁদ খুলে বসেন।
এবিষয়ে গ্রেফতারকৃত যুবক এস.এ মোশফেকুল বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধমে পরিচয়ে ওই যুবতীর সাথে দেখা করতে এসে ফাঁদে পড়েন। ওই যুবতীর সাথে তার অনৈতিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণও দাবি করেন তিন যুবক। তিনি তাদের প্রতারনার হাত থেকে বাচতেই বিভিন্ন জায়গায় ফোন করেন। কিন্তু এখন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা সাজানো হয়েছে।
এবিষয়ে বাসার মালিক নাসরিন আক্তার বলেন, স্বামী বিদেশে রয়েছেন বলে সুমন নামের একজনকে ভাই পরিচয় দিয়ে তার বাসা ভাড়া নেন ছেলে সন্তান সহ মিতা খাতুন। আর তিনি সামনের ফ্লোরে থাকলেও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া কারণে বেশির ভাগ সময়ে তালা দিয়ে রাজশাহীতেই থাকেন বলে জানান। এর চেয়ে বেশি কিছু জানতেন না। এখন এসে অনেক কিছুই শুনছেন। আর তাদের না থাকার সুযোগে ওই বাড়িতে ছেলেদের আড্ডার কথাও শুনেছেন বলে জানান তিনি।
এই চক্রের সদস্য যুবতীর ভাই পরিচয় দানকারী সুমন ও অপর সদস্য তৌকির আহমেদ ঘটনার পর থেকে গা ডাকা দিয়েছে। একাধিকবার তাদের মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি বাসায় গিয়ে তাদের খবর পাওয়া যায়নি।
সিংড়া থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে এস.এ মোশফেকুল নামের একজন থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হলে রবিবার গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে এই ঘটনাকে ঘিরে অনেক কথাই তো কানে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *