নাটোরে দুটি পৃথক মামলায় মা ও ছেলে সহ তিনজনের যাবজ্জীবন

নাটোর অফিস ॥
নাটোরে দুটি পৃথক মামলায় মা ও ছেলে সহ তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে একই আদালত।রোববার দুপুরে নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল( জেলা ও দায়রা জজ) আদালতের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম পৃথক এই দুটি মামলায় তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন। রায়ে তিনজনকেই ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার পাকুরিয়া কালাইকুড়ি গ্রামের শচিন চন্দ্র মহন্তের স্ত্রী গীতা রানী মহন্ত (৬০) ও ছেলে দুলাল চন্দ্র মহন্ত (৪০) এবং অপরজন নাটোর সদর উপজেলার জালালাবাদ টাঙ্গাইলপাড়া গ্রামের মৃত হেলালের ছেলে ওয়াজেদ আলী (৪৫)। দন্ডিতদের মধ্যে গীতা রানী মহন্ত ও তার ছেলে দুলাল চন্দ্র মহন্তকে যৌতুক ও গৃহবধু হত্যা মামলায় এই দন্ডাদেশ দেয়া হয়। আপরটি প্রতিবন্ধি নারীকে জোর পুর্বক ধর্ষনের দায়ে এই যাবজ্জীবন কারান্ডে দেয়া হয়।
আদালাতের স্পেশাল পিপি আনিসুর রহমান জানান, নাটোরের সিংড়া উপজেলার পাকুরিয়া কালাইকুড়ি গ্রামের শচিন চন্দ্র মহন্তের ছেলে দুলাল চন্দ্র মহন্তের সাথে প্রায় ১১ বছর আগে বগুড়ার নন্দিগ্রাম উপজেলার থালতা গ্রামের তপন মহন্তের মেয়ে রুবী রানী মহন্তের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে গীতার ওপর নির্যাতন করা হয়। বিবাহিত জীবনে তাদের সংসারে তিনটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। মামলার বাদি ২০১১ সালের ১৪ মার্চ মেয়ে শশুরালয়ে বেড়াতে যান। এদিন রাত্রিতে মেয়র শশুরালয়ে থাকা অবস্থায় জামাতা দুলাল চন্দ্র মহন্ত ও তার মা সহ পরিবারের লোকজন যৌতুকের জন্য মেয়েকে ঘরের দরজা বন্ধ করে নির্যাতন করতে থাকে। এসময় মামলার বাদি তপন মহন্ত তার মেয়েকে রক্ষা করতে গেলে তাার ওপরও চড়াও হয়ে তাকেও নির্যাতন করা হয়। তারা গৃহবধুর বাবা তপন মহন্তের কাছে যৌতুকের টাকা দাবি করে। অপরাগতা জানালে তারা বাদির সামনে তাকে সহ তার মেয়েকে লাথি ও কিল ঘুষি সহ মারপিট করে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। তাদের নির্যাতনে ওই গৃহবধুর মৃত্যু হলে একপর্যায়ে তার মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। এঘটনায় তপন মহন্ত বাদি হয়ে সিংড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। স্বাক্ষ্য প্রমান শেষে রোববার মামলার রায়ে বিচারক মা ও ছেলেকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন।
অপর ধর্ষন মামলাটি দায়ের করেন ধর্ষিতা ওই প্রতিবন্ধি নারী। মামলায় বলা হয়,২০১২ সালের ১৪ জুন প্রতিদিনের মত বাড়ির পাশের মোহনপুর এলাকায় কোরান শিক্ষা গ্রহন করতে যাওযার সময় ওৎ পেতে থাকা ওয়াজেদ আলী ওই নারীকে জোরপুর্ব ধরে নিয়ে ফসলের ক্ষেতে গিয়ে ধর্ষন করে। এঘটনায় ভিকটিম নিজেই বাদি হয়ে সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। স্বাক্ষ প্রমান শেষে একই আদালত অভিযুক্ত ওয়াজেদ আলীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন।
পিপি আরও জানান, যৌতুক ও হত্যা মামলায় দন্ডিত আসামীদের কাছে থেকে আদায়কৃত জরিমানার টাকা নিহত গৃহবধুর মা ও বাব এবং ধর্ষন মামলার জরিমানার টাকা ভিকটিমকে দিতে আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ বিচারক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *