লালপুরে অনলাইন জুয়ার ফাঁদে সর্বস্বান্ত হচ্ছে তরুন-যুবকরা

নাটোর অফিস॥
রাতা রাতি প্রচুর টাকা উপার্জনের লোভে পড়ে ভার্চুয়াল জুয়ায় ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে নাটোরের লালপুর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। শুধুমাত্র স্মার্ট ফোনে ওয়েবসাইটে বা অ্যাপে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে ২০০-৫০০ টাকা ডিপোজিট করেই শুরু হয় অনলাইনে জুয়া খেলা।
বাংলাদেশে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল মাধ্যমে এই জুয়া নতুন রূপ পেয়েছে। এ কারণে ঘরে বসেই মানুষ অনলাইনে বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপস বা ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন। পূর্বে এটা শহর পর্যায়ে থাকলেও বর্তমান সময়ে এটা দূর্গম গ্রামেও অনলাইন জুয়ার রমরমা খেলা শুরু হয়েছে। এবিষয়ে মানুষদের আগ্রহ বাড়াতে ফেসবুক ও ইউটিউবেও চলছে বিজ্ঞাপন প্রচার।
অনলাইনে জুয়া খেলার সংখ্যা প্রতিদিনই আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানিয়ছেন স্থানীয়রা।
সূত্র বলছে, অনলাইনে জুয়া ১ টাকা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার খেলা চলে। এখানে কেউ ১০ টাকা বাজি ধরে ১০ হাজার টাকা পাচ্ছে। আবার কেউ মুহুর্তের মধ্যে হাজার হাজার টাকা খুয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি খেলা হয় ‘ক্রিক্যা’ নামের ভার্চুয়াল জুয়ার সাইটে ।
লালপুর থানার ওসি উজ্জল হোসেন বলছেন, ঘরে বসেই মানুষ অনলাইনে জুয়া খেলায় অনেক সময় তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকছে না। থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের না করা পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়াও যাচ্ছে না। ফলে গ্রামে কিশোর থেকে শুরু করে পঞ্চাশোর্ধ অনেকেই অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন।’
অনলাইনের বিভিন্ন সাইটে জুয়া খেলা এতো পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে যে গত তিন মাসে লালপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের লেনদেন দ্বিগুন বেড়েছে বলে জানায় একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টরা। তারা বলেন এক্ষেত্রে নগদে বেশি টাকা লেনদেন হয়।’
সূত্র জানায়, গ্রামে কিশোর থেকে শুরু করে পঞ্চাশোর্ধ অনেকেই অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। অনেক কিশোর অনলাইন জুয়ার কারনে স্কুলে যাওয়া বাদ দিয়ে মোবাইলে জুয়া খেলছেন। আবার অনেকেই কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে এই খেলায় আসক্ত হয়ে খুইয়েছেন হাজার হাজার টাকা। এর তালিকায় মধ্যে ব্যবসায়ী ও চাকুরিজিবিও রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এর সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গ্রামের উঠতি বয়সী স্কুল পড়–য়া তরুণ ও কিশোরের মধ্যে।
জুয়ায় লাখ লাখ টাকা খুইয়ে গ্রামের অনেকের জীবনে নেমে এসেছে অমানিশা। জুয়ায় টাকা হেরে ঋণের দায়ে অনেকে বাড়ি ছেড়েছেন। বিয়ে বিচ্ছেদেরও তথ্য পাওয়া গেছে।
উপজেলার ওয়ালিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম নামে একজন সরকারী চাকুরিজীবি অবসরে এসে অনলাইনে জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। জুয়ায় হারা ঋণের টাকা শোধ করতে ওই পরিবার জমিসহ বাড়ি বিক্রি করেদিতে বাধ্য হয়েছেন। জুয়ার নেশা থেকে স্বামীকে ফেরাতে না পেরে তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি এলাকা ছাড়া। ছেলের এমন কর্মকান্ডে বাবা স্ট্রোক করে মুমুর্ষ অবস্থায় রয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।’
নামপ্রকাশে অনইচ্ছুক অনলাইনে জুয়া খেলায় অভ্যস্থ হয়ে পড়া উপজেলার ওয়ালিয়া এলাকার এক ব্যক্তি জানায়, এলাকার অনেকেই ১০ টাকা ধরে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করছে দেখে তিনিও এই অনলাইন জুয়াতে জড়িয়ে পড়েন। এতে তিনি দু’দিনে ৫ হাজার টাকা খুইয়েছেন। বর্তমানে এ খেলা থেকে সরে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, এখানে আন্তর্জাতিক ফুটবল, ক্রিকেট, ক্যসিনো, হাউজিসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়া খেলা চলে।’
এলাকায় অনেক স্কুল পড়–য়া ছেলেও রাতারাতি বিপুল অথের্র মালিক হওয়ার আশায় হাজার হাজার টাকা খুয়েছেন এমন তথ্য আছে।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) শরিফ আল রাজিব বলেন, অনলাইন জুয়ার একটি বিষয় দেখা যায়। যারা স্কুল ও কলেজ পড়–য়া, উঠতি বয়সী এবং টিনেজার তারা অপ্রত্যাশিতভাবে অনলাইন জুয়াতে আশক্তহয়ে পড়ছে। যে ভাবেই হচ্ছে এটি একটি প্রতারণা। জেলার মধ্যে লালপুর উপজেলায় এর প্রভাব বেশি দেখা গেছে। অনলাইন জুয়া খেলছে মাঝে মধ্যেই এমন দু’একটি অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আইন আছে। আমরা ইমো হ্যাকিং যে ভাবে সঠিক তদন্ত ও অনুসন্ধন করে নিয়ন্ত্রনে এনেছি। দ্রুতই অনলাইন জুয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, যারা ইমো হ্যাকিং এর সঙ্গে যুক্ত ছিলো তারা অনলাইন জুয়াতেও জড়িত আছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *