টাকার বিনিময়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেয়ার অভিযোগ আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে

নাটোর অফিস॥
নাটোরের গুরুদাসপুরে ৭ জন অসহায় হত দরিদ্র নারীর কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকালে লিখিত অভিযোগপত্র নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে দেখাযায় ওই সাত জন নারীকে। তবে অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায়। টাকা ফিরে পেতে এবং অভিযুক্তব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে মামলার আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ্য নারীরা। ভুক্তভোগী ৭ জন নারী নাজিরপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের রেজাউল করিমের স্ত্রী আসমা বেগম, ছাইফুল হোসেনের স্ত্রী ইঞ্জিরা বেগম, মৃত-হাসমত আলীর স্ত্রী রাবিয়া বেগম, মৃত-আবেদ আলীর স্ত্রী রিজিয়া বেগম, মৃত-তারামিয়ার স্ত্রী হাবিয়া বেগম, আব্দুল হামিদের স্ত্রী সাহারা বানু ও ইয়াছিন আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন। অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা নাজিরপুর ইউনিয়নের গুপিনাথপুর গ্রামের মৃত-আমির আলী মন্ডলের ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৯টি ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীন নারীদের মাঝে হস্তান্তর করে উপজেলা প্রশাসন। সেই আশ্রয়ণে ঠাই হয়, আসমা, রাবিয়া, রিজিয়া, হাবিয়া, সাহারা ও বিউটির। তাদের মধ্যে কেউ বিধবা, কেউ স্বামী পরিত্যাক্তা। দিনমজুরী করে বর্তমানে তারা জীবিকা নির্বাহ করছেন। গত দুই মাস যাবৎ আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে বসবাস করছেন তারা। আনুমানিক ৬ মাস পূর্বে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর প্রদান করার কথা বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম ঘর প্রতি ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রায় ৫ লাখ টাকার জায়গা জমিসহ ঘর পাবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৬ জন নারীর কাছ থেকে টাকা নেন তিনি। এছাড়াও ইঞ্জিরা নামের আরো এক নারীর কাছ থেকে ঘর দেওয়ার কথা বলে ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিলেও তাকে ঘর দিতে পারেননি তিনি। হতদরিদ্র এই নারীরা পেশায় শ্রমজীবি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে নিজেদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। ঘর বাবদ প্রদান করা টাকা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করে দিয়েছেন তারা। সেই টাকার কিস্তি প্রতি সপ্তাহে শ্রম বিক্রি করেই পরিষোধ করতে হচ্ছে।
বিধবা নারী হাবিয়া বেগম জানান,‘৬ মাস আগে আমাকে নজরুল এসে বললো ৫ লাখ টাকার সম্পদ পাবে ঘর নিলে। যদি নিতে চাও তাহলে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি অনেক কষ্ট করে স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন তুলেছিলাম ঘর নেওয়ার জন্য। তখন তেমন কাজকর্ম না থাকার কারনে ওই টাকা থেকে ৫০০ টাকা খরচ করে বাজার করেছিলাম। ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা নজরুলকে দেওয়ার পর বাকি ৫০০ টাকাও চেয়ে বসে। বলে যে, ওই ৫০০ টাকাই আগে দিতে হবে। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে হাওলাত করে বাকি ৫০০ টাকাসহ মোট ৫০ হাজার টাকা তাকে প্রদান করি। হঠাৎ করেই কয়েকদিন আগে জানতে পারলাম আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর নিতে কোন টাকা লাগেনা। তাই ঋণ করে দেওয়া টাকাটা নজরুলের কাছে ফেরৎ চাই। কিন্তু সে বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকে। টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি।
স্বামী পরিত্যাক্তা নারী ইঞ্জিরা বেগম জানান,‘আমার স্বামী অসুস্থ্য। আমি নিজেই কাজ করে সংসার চালাই। নিজেদের কোন জায়গা জমি ছিলোনা। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। ঘর দেওয়ার কথা বলে নজরুল নেতা আমার কাছ থেকে নগদ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় এবং বাকি ১০ হাজার টাকা ঘর পাওয়ার পর দিতে বলে। দীর্ঘদিন হলেও টাকা দেওয়ার পরেও আমি ঘর পাইনি। আমি আমার টাকা ফেরত চাই এবং তার বিচার দাবী করছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বিকার করে মুঠোফনে বলেন,‘ গত এক মাস আগে আমার সততা ও জনপ্রিয়তার কারনে গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছি। রাজনৈতিক ভাবে আমার ওপর ঈর্শান্বিত হয়ে সাবেক চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবু তার আত্মীয় স্বজন দিয়ে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। তিনি চেয়ারম্যান না থাকার পরেও ব্যাক ডেট দিয়ে ওই ৬ জন নারীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রত্যয়ন পত্র দিয়ে ঘর নিয়ে দিয়েছেন। এখানে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই কারন আমি কোন জনপ্রতিনিধি না কিংবা সরকারী কোন অফিসের প্রতিনিধিও নই। তাছাড়াও টাকা গুলো শওকতরানা লাবু চেয়ারম্যান থাকার সময় নিয়েছিলো ঘর বাবদ বিভিন্ন মানুষের কাছে। সেই টাকার দায় নিজের ওপর না চাপিয়ে আমার ওপর দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
নাজিরপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শওকত রানা লাবু জানান,‘হত দরিদ্র নারীদের কাছ থেকে যদি আমি টাকা নেই তাহলে তারা আমার নামে অভিযোগ দিতো। কিন্তু তা না করে নজরুলের নামে অভিযোগ দিচ্ছে। কারন সেই টাকা নজরুল আত্মসাত করেছে বিভিন্ন ভাবে। সপ্তাহ খানেক আগেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের মামলায় নজরুল ইসলাম ১৬দিন কারাভোগ করেছে। আর ব্যাকডেট দিয়ে প্রত্যয়ন পত্রে সাক্ষর করার অভিযোগ সম্পুন্ন মিথ্যা।’
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় বলেন,‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী ৬জন নারী আমার দপ্তরে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করার জন্য এসেছিলো। মুলতা তারা যে ব্যক্তির নামে অভিযোগ করছেন সে আমার অফিসের কোন স্টাফ না। তাই তাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যদি তারা কাউকে টাকা দিয়ে থাকেন বা তাদের সাথে কেউ যদি প্রতারণা করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার জন্য কোন টাকা লাগেনা। সকলকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *