২১ ডিসেম্বর নাটোর মুক্ত দিবস

নাটোর অফিস॥
আজ ২১ ডিসেম্বর নাটোর মুক্ত দিবস। নাটোরের মানুষ উনিশ একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের স্বাদ পায় ১৬ ডিসেম্বরের চারদিন পর। একাত্তরের ৩০ মার্চ লালপুরের ময়না গ্রামে পাকবাহিনীর ২৫ রেজিমেন্টের সাথে সম্মুখ যুদ্ধের পর নাটোরে বড় ধরনের আর কোন লড়াই হয়নি। ওই সম্মুখ যুদ্ধে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয়। যুদ্ধে পাকবাহিনীর সেনা নিহত হয়। তবে অর্ধশত বাঙ্গালী শহীদ হন। এ্ই দিন ময়না গ্রামের একটি আমগাছের সাথে বেঁেধ রেখে ৭ বাঙ্গালীকে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। সেই আমগাছটি এখনও জীবন্ত সৌধ হিসেবে কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। ময়না যুদ্ধের পর আর কোন বড় ধরনের লড়াই না হলেও একাধিকস্থানে চালানো হয় গনহত্যা। মুক্তিযুদ্ধের ৯

মাস পাক হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী, দত্তপাড়া, মোহনপুর, লালবাজার, কাপুড়িয়াপট্্ির, শুকলপট্রি, মলি¬কহাটি, বড়াইগ্রামের বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন, গুরুদাসপুরের নাড়িবাড়ি, সিংড়ার হাতিয়ানদহ, কলম এবং লালপুর উপজেলার গোপালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল চত্বরসহ একাধিকস্থানে গনহত্যা চালায়। ৭১’এর ৪ জুন নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী গ্রামের গণহত্যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংস ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। এই গ্রামের ঘুমন্ত প্রায় ৪শ মানুষকে ধরে নিয়ে ছাতনী স্লুইস গেইটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করার পর বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে এসিড দিয়ে ঝলছে দেয়া হয়। ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশে পাকসেনাদের আত্মসমর্পনের মাধ্যমে বিজয় অর্জিত হলেও নাটোরে এর চারদিন পর ২১ ডিসেম্বর বিজয় আসে।

একাত্তরে নাটোর ছিল পাকসেনাদের ২নং সামরিক হেডকোয়াটার। তৎকালীন সিও অফিসে(বর্তমানের ইউএনও অফিস) পাকসেনাদের সামরিক হেডকোয়াটার স্থাপন করা হয়। ফলে ১৬ ডিসেম্বর থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে পাকসেনারা নাটোরে এসে জড়ো হতে থাকে। নাটোর পিটিআই স্কুল, আনসার হল, রিক্রিয়েশন ক্লাব, এনএস কলেজ, নাটোর রাজবাড়ি, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি চত্বরের (উত্তরা গণভবন) ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয়া পাকসেনারা মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করলেও নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি উত্তরা গণভবন চত্বরে আত্মসমর্পনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় ২০ ডিসেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত। ফলে ২১ ডিসেম্বর নাটোর পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয়। আত্মসর্মপন অনুষ্ঠানে পাকসেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ মিত্রবাহিনীর ১৬৫ মাউনটেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পন করেন। এদিন পাকিস্তানি বাহিনীর ১৫১ অফিসার,১৯৮ জন জেসিও, ৫৫০০ সেনা, ১৮৫৬ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য এবং ৯ টি ট্যাংক, ২৫ টি কামান ও ১০ হাজার ৭৭৩ টি ছোট অস্ত্র সহ আত্মসমপর্ন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *