নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদ কারাগারে

নাটোর অফিস ॥
নাটোরের নলডাঙ্গায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলিম জীবন হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকা আসামী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার ভাই ফয়সাল ফটিককে অপর একটি মামলায় জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। নিহত জীবনের বাবা ফরহাদ হোসেন ও তার চাচা ডাঃ শাহীনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। সোমবার (৩১ অক্টোবর) নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এ হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন চেয়ারম্যান আসাদ ও তার ভাই ফয়সাল ফটিকসহ ১৪ অভিযুক্ত আসামী। এসময় বিজ্ঞ বিচারক মেহেদী হাসান জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার ভাই ফয়সাল ফটিককে জেল হাজতে পাঠানোর নিদের্শ দেন। আর অন্যদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
আসাদুজ্জামান আসাদ ও ফয়সাল ফটিক নলডাঙ্গা উপজেলার রামশারকাজীপুর গ্রামের মোঃ আনিছুর রহমান শাহ’র ছেলে। তারা দু’জনই নিহত উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলিম জীবন হত্যার প্রধান আসামী। তার অপর এক ছোট ভাই আলিম আল রাজি শাহ পুলিশের হাতে আটকের পর জেল হাজতে রয়েছে।
বাদি পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট আঞ্জুয়ারা রতœা জানান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ নিহত উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলিম জীবন হত্যা মামলার প্রধান আসামী। সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরেন এবং বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা সহকারে উপজেলায় প্রবেশ করেন। একই সঙ্গে ফেসবুক লাইভে উস্কানিমুলক বক্তব্য প্রদান করেন। এনিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এলাকাবাসীসহ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। অপরদিকে আসাদুজ্জামান আসাদ বহিরাগত সন্ত্রাসীসহ নিহত ছাত্রলীগ নেতা জীবনের বাবা ফরহাদ হোসেন ও তার পরিবারকে প্রাণ নাশসহ মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। এই ঘটনায় গত ২৩ অক্টোবর (রোববার) দুপুরে নিহত জীবনের বাবা মোঃ ফরহাদ হোসেন ও তার চাচাতো ভাই ডাঃ শাহিন জিডি করার উদ্দেশ্যে নলডাঙ্গা থানায় যাচ্ছিলেন। পথে নলডাঙ্গাস্থ অধীরের মোড়ে পৌছালে আসাদুজ্জামান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। এতে আহত হন ফরহাদ হোসেন ও ডাঃ শাহিন। এ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে এই ঘটনায় আহত ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই এসএম ফকরুদ্দিন ফুটু বাদি হয়ে আসাদুজ্জামান আসাদকে প্রধান আসামী করে ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে শনিবার (২৯ অক্টোবর) নলডাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদসহ ১৪ জন আসামী সোমবার ওই আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। এসময় বিচারক আসাদ ও তার বড় ভাই ফয়সাল ফটিকের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অপর ১২ আসামীর জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
অ্যাডভোকেট আঞ্জুয়ারা রতœা আরো বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ তার অপরাধ আড়াল করতে মা ফিরোজা বেগমকে বাদি করে ৫৯ জন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একই দিনে নলডাঙ্গা থানায় মামলা রুজু করেন। ওই মামলায় অভিযুক্ত ৫৮ জন আজ একই আদালতে জামিন আবেদন করেন। এসময় ৫৭ জনের জামিন মঞ্জুর করেন এবং ডাঃ শাহিন নামে একজনের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আসাদের পক্ষে আইনজীবি ছিলেন অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম রবি।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, উভয় পক্ষের দুই মামলার সঠিক তদন্ত পুর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে নিরাপরাধ কাউকে কোন প্রকার হয়রানী করা হবে না বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের নানা অপকর্ম নিয়ে ফেসবুক লাইভে তথ্য তুলে ধরে প্রতিকার চেয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলিম জীবন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ। একপর্যায়ে ওই ঘটনার জেরে জীবন ও তার বাবাকে পিটিয়ে আহত করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ ও তার ভাইয়েরা। আর এ ঘটনার তিনদিন পর শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ২০ মিনিটে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা জীবন মারা যান।
এঘটনায় জীবনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে নলডাঙ্গা থানায় উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদকে প্রধান আসামি করে তার দুই ভাই ও অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ/ছয়জনকে আসামি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা রুজু করেন। ওই মামলাটি পরে হত্যা মামলায় পরিবর্তন করা হয়। এ ঘটনায় আসাদ চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আলিম আল রাজি শাহকে আটক করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এনিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদসহ তিন ভাই এখন জেল হাজতে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *