স্বামীর নৃশংসতায় দুই হাতের ৭টি আঙ্গুল হারাতে বসেছে এক গৃহবধু

নাটোর অফিস॥
নাটোরের হরিশপুরে রান্না করার সময় তরকারীতে তেল বেশি দেওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্ত্রী মুক্তি বেগম (৩০)কে কুপিয়ে হাতের সাতটি আঙ্গুল কেটে দিয়েছে পাষন্ড স্বামী আব্দুল হাই। আহত মুক্তি বেগমকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে, রোববার দুপুর ১ টায় সদর উপজেলার বড় হরিশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়া গ্রামে।
গ্রামবাসীরা জানান, ১৩ বছর পূর্বে ঐ গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে আব্দুল হাই পূর্বের তিনটি বিয়ের কথা গোপন রেখে সদর উপজেলার আটঘরিয়া গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদিনের মেয়ে মুক্তি বেগমকে বিয়ে করে। তাদের বৃষ্টি (১১) ও স্বাধীন (৮) নামের দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে আব্দুল হাই স্ত্রী মুক্তি বেগমকে অমানুষিক অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। তারপর সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি মুখ বুঝে সহ্যা করে আসছিল। রোববার দুপুর ১ টায় তরকারী রান্না করার সময় তেল বেশি দেওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আব্দুল হাই ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো হাসুয়া দিয়ে স্ত্রী মুক্তি বেগমকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে দুই হাতের আক্সগুল সাতটি আঙ্গুল কেটে দেয়। মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। স্বজনরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে অবস্থার অবণতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ রেজা উন নবী জানান, তার হাঁতের আঙ্গুলের অবস্থা খুবিই খারাপ। একটা হাত ভেঙ্গে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করার না হলে আঙ্গুল গুলো হারাতে হবে।
মুক্তি বেগম জানান, দুপুরে তরকারীতে বেশি তেল দিয়েছি বলে মারপিট করা শুরু করে। এক পর্যায়ে হাসুয়া দিয়ে আমার গলাকাটার চেষ্টা করলে আমি হাত দিয়ে বাঁধা দেয়। তারপরও এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। আমার মুখে হাসুয়া দিয়ে আঘাত করে। আমি দৌড়ে না পালালে আমাকে মেরেই ফেলতো। আমি পাষন্ডের বিচার চায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ১১ বছরের কন্যা বৃষ্টি বলেন, আমি বাবার পা ধরে বলেছি, আব্বা মাকে ছেড়ে দাও। মরে যাবে। তবুও তিনি ছাড়েননি।
এদিকে পৌশ্চিক কায়দায় স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার সাথে জড়িত পাষন্ড স্বামী আব্দুল হাই এর দৃষ্টান্মূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানান, আব্দুল হাই ইতিপূর্বে আরোও তিনটি বিয়ে করে। সে সব স্ত্রীরা অত্যাচার নির্যাতন সইতে না পেরে তাকে ছেড়ে চলে যায়। এই স্ত্রীও চলে গিয়েছিল বাপের বাড়ি। ঈদের আগে আব্দুল হাইয়ের অনুরোধে স্থানীয় কিছু গন্যমান্য ব্যক্তি তাকে স্বামীর বাসায় ফিরিয়ে আনেন ।
নাটোর থানার ওসি নাসিম আহমেদ জানান,ঘটনাটি জানার পর পরই আমি মুক্তি বেগমের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি ।মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে । অভিযুক্ত আব্দুল হাইকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *