উপড়ে ফেলা হোক মাদকের শেকড়!

এ কে সরকার শাওন॥
৩১ মে বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সভা সেমিনারে বক্তাগণ সহজ ও সুন্দর ভাবে ধুমপানকে নিরুৎসাহিত করেছেন। প্রাতিবছরই এমন নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে। কে কার কথা শোনে! জাগো নাটোর এর জন্য আমার আজকে প্রচেষ্টা “আসুন ধুমপান থেকে বিরত থাকি।”
ধূমপান হচ্ছে তামাক থেকে উৎপন্ন হুক্কা, বিড়ি, সিগারেট,চুরুট আগুন দিয়ে পুড়িয়ে শ্বাসের সাথে তার ধোয়া শরীরে গ্রহণের প্রক্রিয়া। ধুমপান একটি নেশা। শুরুটা কৌতুহল থেকে। দুষ্টু ও ইচড়েপাকা বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমি করতে করতে ধুমপানের হাতেখড়ি হয় । পরে বনে যায় চেইন স্মোকার।
অনেকে অহংকার করে বলে থাকে আমার ডেইলি ২ প্যাকেট লাগে। অনেকের আবার ধূমপান ছাড়া বাথরুম হয় না। আবার অনেক ধুমপান কারির মতে, ধুমপান করলে টেনশন কমে। আমার এক বন্ধু তার স্ত্রীকে বলছিল,“সিগারেট আমার জন্য জ্বলে জ্বলে শেষ হয়ে যায়। তুমি কি তাই হও?” একজন আমাকে বলেছেন,“ রাতের অন্ধকারে পান করি। আগুন কাছে থাকলে শয়তান কাছে আছে না।” আমি মনে মনে বল্লাম শয়তানের কাছে শয়তান আসবে কেন!
সিগারেটের গায়েই কিন্তু লিখা থাকে, “ধুমপান বিষপান”। ধুমপানে অনেক টাকার অপচয় হয়। প্রচ্ছন্নভাবে আশেপাশের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যক্তিত্ব লোপ পায়। ধুমপায়ীর সিগোরেটের মোতা খেকে আগুন ধরে বাড়ি-ঘর-কলকারখানা ছাই হয়ে গেছে এমন খবরও আমরা জানি। ইসলামে অপচয়কারীকে শয়তানের বড়ভাই বলে অভিহিত করেছেন। ধূমপান করার জন্য কোন ধর্ীয় নেতা বলেন নি। কোন শিক্ষক, সমাজপতি, বস এমন কি পিতামাতাও বলেননি। বরং সবাই নিষেধ করেছেন। তারপরও ধুমপানে করতে হবে! এখানেও প্রমোশন আছে। যারা মাদক সেবন করে তাদের ৯৫%ভাগ মানুষ প্রথমে ধুমপান করে তারপর অনন্য ভয়ংকর নেশায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলে।যার ভয়াবহ পরিনতি আমরা সবাই জানি। ছোটবেলায় “আধুনিক” মানে আমরা ধূমপান নিবারণ করি নামে একটি আমার প্রিয় সংগঠন ছিল। আমাদের এলাকার (নবীনগর, ব্রাহ্মনবাড়িয়া।) মরহুম আমজাদ ডাক্তার সাহেব সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন। আমরা ধুমপান বিরোধী কিছু বক্তব্য তাঁর মুখ থেকে শুনছি। ধুমপান করবো না বলে তিনি আমাদের শপথবাক্যও পাঠ করিয়েছিলেন। আমি সেই শপথ মনে রেখেছি। আজও ধুমপান করি না।
কোনদিনও ধুমপান করবো না ইনশাল্লাহ। বরং আমার নিজের পরিধিতে প্রতিবছর ধুমপান বিরোধী একটি সাপ্তাহ ঘটা করে পালন করি। সিগারেট দেখলেই আমার মনে ভেসে ওঠে ইথিওপিয়ার ভুখা-নাঙ্গা হাড্ডিসার কিছু মানুষের ছবি। মনের গভীরে তাদের জন্য বেদনা অনুভব করি। কিছুই করতে পারি না। যারা বিত্তবান তারা নিশ্চই সি এস আর খাতে তাদের জন্য কিছু করেন বা করবেন।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কথাটি আমার মনে ধরেছে। তিনি বলেছেন, মেডিকেল কলেজের কোনো ছাত্র ধূমপান করলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। ধূমপায়ীদের মেডিকেলে ভর্তি হতে দেওয়া হবে না। আর কোনো চিকিৎসক ধূমপান করলে তিনি মেডিকেল কলেজে পড়াতে পারবেন না। নিজে উপদেশ দেবেন আর নিজেই ধূমপান করবেন, তা হবে না “
বিশ্বে শতভাগ ধূমপানমুক্ত দেশ নেই। আর একেবারেই ধূমপান নিষিদ্ধ এরকম দেশও নেই। তবে ব্রাজিল ভূটান, ফিনল্যান্ড, প্রভৃতি দেশে ধূমপান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। জনসম্মুখে ধুমপান নিষিদ্ধ এরকম অনেক দেশ আছে। আমাদের দেশেও জনসম্মুখে ধুমপান নিষিদ্ধ। জরিমানারও বিধান আছে। কিন্তু এর প্রয়োগ প্রায় নেই বল্লেই চলে। আশাকরি এর প্রয়োগ বৃদ্ধি পাবে। সম্প্রতি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। এটাকে আমি সাধুবাদ জানাই। ঠুস-ঠাস দুই একটা পুটিমাছ পড়ছে। না। ধরতে হবে রাঘব বোয়াল-রুই-কাতলাদের। সম্ভাব্য সকল শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। তবেই এ অভিযান সফল হবে। কবির ভাষায়,

যুদ্ধ-জিহাদ শুরু হয়েছে,
বদ-বদির দল পালিয়ে যাচ্ছে,
উৎপাটিত হবে অপশক্তি;
দশ বাঁচবে দেশ বাঁচবে
আমার দেশ পাবে
মাদক থেকে মুক্তি।

“আধুনিক” এর কাজ বাড়াতে হবে। এ রকম আরো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে হবে। সরকারে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। তবেই আমরা ধুমপানমুক্ত সমাজ গঠনে জন্য আরো এক ধাপ দিকে এগিয়ে যাব। পরিশেষে সবার প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি,“আসুন ধুমপান পরিহার করে সুস্থ জীবন, সুন্দর সমাজ ও সুশৃংখল রাষ্ট্র গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ হই। ”

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *