নাটোরে ছেলে সংবাদ সম্মেলন করায় সিংড়ায় বাবার উপর হামলা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক॥
হত্যা মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেয়ার হুমকির প্রতিবাদে যখন সংবাদ সম্মেলন করছিলেন ছেলে, তখনই মামলার বাদীর উপর জামিনে থাকা আসামীদের হামলা। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের দূর্গম সোয়াইর গ্রামে। জুম্মার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর হামলার শিকার হন নাটোরের সিংড়া উপজেলার সোয়াইর গ্রামের নিহত মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিক খানের ভাই ওসমান আলী খান।
প্রকাশ্য দিবালোকে মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিক খানকে হত্যা করা হয় ২০১৪ সালের ২৯ শে মার্চ। এ ঘটনায় পরদিন তার ভাই ওসমান আলী খান ২৭ জনকে আসামী করে নাটোরের সিংড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। স্পর্শকাতর হওয়ায় মামলাটি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল, রাজশাহীতে প্রেরণ করা হয়।
নাটোরের সিংড়ায় সংঘটিত হওয়া ওই হত্যাকান্ডের আসামীরা হলেন, সিংড়া উপজেলার সোয়াইর এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে আরিফুল ইসলাম(৩০), আলতাব হোসেনের ছেলে আহসান হাবীব(৩০), রইচ উদ্দীনের ছেলে রবিউল ইসলাম(২৮), মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে মোফাজ্জল হোসেন(৪৫) ও মৃত আকবর আলীর ছেলে আব্দুল মান্নান(৪৫)।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার বাদী ওসমান আলী খান মামলা করে বিপাকে পড়েছেন। মামলার আসামীরা উল্টো মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তাকে তুলে এনে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে চালান করে। প্রতিনিয়ত মামলাটি তুলে নিতে ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদানে বাধা ও হুমকি দিয়ে আসছে আসামীর পরিবার। শুধু তাই নয়, কথামত মামলা তুলে না নেয়ায় হামলার শিকার হয়েছেন বাদীর ছেলে মোজাম্মেল খান। আসামীরা মোজাম্মেল খানের নিকট থেকে ৪০ লাখ টাকা পায় মর্মে তা পরিশোধ না করার অভিযোগ এনে চলতি বছরের ১০ই জানুয়ারী নাটোর আদালতে একটি মামলা দায়ের করে।
নাটোর প্রেসক্লাবে শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন মামলার বাদী ওসমান আলী খানের ছেলে মোজাম্মেল খান।
মোজাম্মেল খান বলেন, গত ২৮ শে নভেম্বর উল্লিখিত ৫ আসামী সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে তাকে আটকে তার নামে একটি চেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করে নেয় আসামীরা। তারা হুমকি দেয় যে, হত্যা মামলা না তুলে নিলে হয়রানির জন্য মামলা দায়ের করবে। এরই ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে ৪০ লাখ টাকা পাওনা পরিশোধ না করার মিথ্যা মামলা করে।’ প্রতিকার চেয়ে সিংড়া থানায় জিডি করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ আমার জিডি গ্রহন করেনি। পরে নাটোর সদর থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানান মোজাম্মেল খান।
বিচারাধীন এ মামলার ব্যাপারে হত্যা মামলার বাদী ওসমান আলী খানের অভিযোগ, গত ২৯শে মে সকালে হত্যামামলার আসামীরা ১০/১২ জন বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে তাদের বাড়িতে এসে মামলাটি আপোষ মীমাংসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। রাজী না হলে পরিবারের সদস্যদের যেখানে পাবে সেখানে মারপিট, জখম, খুন এমনকি হত্যার হুমকি দেয়।
তাদের কথা না মানায় সিংড়া থানার এস আই আব্দুল হান্নান ফোন করে আমাকে থানায় ডাকে এবং জানায় আসামী রবিউল ইসলামের অভিযোগ করেছে যে, তার থেকে ২ লাখ টাকা পাই মর্মে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই করে নিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় এসআই হান্নান গত ৭ই এপ্রিল চৌগ্রাম থেকে তুলে এনে মিথ্যা মামলা দিয়ে থানায় চালান করে।
বিবাদীরা রাতের অন্ধকারে বাড়ির আশেপাশের রাস্তায় অস্ত্রসহ ঘোরাফেরা করছে জানিয়ে পরিবারের সদস্য ও মামলার সাক্ষীদের নিরাপত্তা চেয়ে সিংড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন হত্যা মামলার বাদী ওসমান আলী খান। বিবাদীদের ভয়ে তিনি বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না বলেও জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল হান্নান বলেন, ওসমান আলী খানের বিরুদ্ধে বিবাদী রবিউল ইসলামের দায়েরকৃত এজাহারের আলোকেই মামলা নথিমুক্ত হয়। বিবাদী রবিউলের থেকে ওসমান আলী খান হত্যা মামলা মিমাংসার জন্য ৮ লাখ টাকা নেন। এ ঘটনার সাক্ষী ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলাটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। মীমাংসা দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আর সংবাদ সম্মেলন করার কারণে পুনরায় হত্যঅ মামলার বাদীর উপর হামলা করা হয়েছে কি না , তা খতিয়ে দেখা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *