নাটোরের হানিফ উদ্দীন মিয়া কম্পিউটারের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়: মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার

নবীউর রহমান পিপলু ও নাইমুর রহমান, সিংড়া
নাটোরের সিংড়ায় দেশের প্রথম কম্পিউটার পরিচালক হানিফ উদ্দিন মিয়ার স্মৃতিচারণ করে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেছেন, ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান শাসনামলে দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে লাহরের উচ্চাভিলাষী জীবনের হাতছানি পরিহার করেন সিংড়ার হুলহুলিয়া গ্রামের হানিফ উদ্দিন মিয়া। তিনি বাংলাদেশে কম্পিউটারের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। সিংড়ার সেই অজোঁপাড়াগায়ে আজ প্রযুক্তি পৌছে যাওয়ায় তার অবদান সার্থক হয়েছে।
শনিবার বিকেলে নাটোরের সিংড়া কোর্ট মাঠে সিংড়া থানার দেড়শ’ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমান সরকার প্রযুক্তি নির্ভর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে তরুণ প্রজন্মের জন্য। আউটসোর্সিয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের একটি বৃহৎ অংশ এখন ঘরে বসে উপার্জন করছে। ভবিষ্যতে সরকার উপর্জনের এ পরিধি বাড়াতে সবরকম উদ্যোগ গ্রহন করবে।
মোস্তফা জব্বার বলেন, অতীতে দেশের গ্রামগুলোতে শিক্ষার আলো দূরের কথা ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলোই ছিল না। আলো বলতে জ্বলেছে জোনাকির আলো। সেই অন্ধকারে আজ আলো হয়ে ধরা দিয়েছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুত আজ নতুন প্রজন্মের জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। নতুন প্রজন্মই হবে দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে খ্যাত চলনবিল একসময় ডাকাত-সর্বহারাদের অভয়াশ্রম ছিলো। পুরুষরা এখানে নির্ঘুম রাত কাটাতো আর মেয়েদের রাখা হত শহরের ভাড়া বাড়িতে। মাত্র দশ বছরে পাল্টেছে এ দৃশ্যপট। চলনবিলবাসী এখন একসাথে সুখ, দু:খ, আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করে নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিদের্শে পুলিশের কর্মনিষ্ঠার গুনে চলনবিলে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, প্রযুক্তি এখন ঘরে ঘরে পৌছানোর পাশাপাশি জননিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই আগামী দিনে প্রযুক্তি নির্ভর নিরাপত্তা কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হাসান বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছে। পুলিশ সরকারের সব কর্মসূচী বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। সরকার পুলিশের উন্নয়নে যে বিনিয়োগ করেছেন, পুলিশ সদস্যরা তা জীবন দিয়ে হলেও সফল করবে। আগামীতেও উন্নত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে পুলিশ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, পুলিশ এখন আগের চেয়ে অনেক জনমুখী। পুলিশ সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
নাটোর জেলা পুলিশ সুপার ও সার্ধশত বর্ষ উদযাপন কমিটির সভাপতি সাইফুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাজেদু রহমান খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম আকরামুল হাসান, সিংড়া পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস, সিংড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আসাদুজ্জামান, সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ ওহিদুর রহমান, উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং সভাপতি অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ২০০৫ সালে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দায়িত্বরত অবস্থায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তা আমজাদ হোসেনের পরিবারকে মরোনোত্তোর সম্মাননা প্রদান করেন আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।
সমাবেশ শুরুর আগে সিংড়া থানা চত্বর থেকে পুলিশের ব্যান্ডদল বাদ্যের তালেতালে একটি বর্ণাঢ়্য শোভাযাত্রা বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সন্ধ্যার পর মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার সিংড়ার হুলহুলিয়া গ্রামে হানিফ উদ্দিন মিয়ার বাড়িতে যান এবং সেখানে আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *