নাটোরের নিহত কাউন্সিলর জামিরুল জনপ্রিয় ছিলেন দল-মতের উর্ধ্বে

নাইমুর রহমান,লালপুর ঘুরে
দল-মতের উর্ধ্বে জনপ্রিয় ছিলেন কাউন্সিলর জামিরুল ইসলাম। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রাজনীতিতে আসেন নাটোরের গোপালপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামিরুল ইসলাম। ২০১৫ সালে পৌরসভা নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিয়েই বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি। কোন দুর্বৃত্ত হাতে নির্মমভাবে খুন হবেন জামিরুল-ভাবতে পারছেন না পরিবার বা এলাকার কেউই। তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রাজনৈতি প্রতিপক্ষ বিএনপি। সদালাপী মানুষটিকে যারা কাছে থেকে দেখেছেন, তারাও মেনে নিতে পারছেন না নির্মম এ মৃত্যু।
গতকাল রোববার (২০শে জানুয়ারী) দুপুরে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর বিরুপাড়ায় বাড়ির ২০০ গজ দূরে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে কাউন্সিলর জামিরুল ইসলামকে। কি কারণে এ হত্যাকান্ড তা বলতে পারছে না পরিবার ও পুলিশ। তবে, ওইদিন সন্ধ্যায় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ৩ জনকে থানায় নিয়ে আসে। তারা হলেন- লালপুরের মধুবাড়ি এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে সোহাগ হোসেন, শিবপুর খাঁ পাড়ার আব্দুস সবুরের ছেলে রিজভী আহমেদ ও একই এলাকার কমর উদ্দীনের ছেলে আবু রায়হান। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের ‘আটক’ হিসেবে দেখায়নি লালপুর থানা পুলিশ।
এদিকে, সোমবার বাদ জোহর কাউন্সিলর জামিরুলের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
দুই সন্তানের জনক জামিরুল ইসলামের স্ত্রী রাফিয়া খাতুন স্বামীর মৃত্যুশোকে এখনও স্বাভাবিক হতে পারেননি। মাদ্রাসা পড়–য়া ছেলে আব্দুল আজীমও বাবার কথা মনে হলে থেমে থেমে কাঁদছে। আর শিশুকন্যা জান্নাতুল মাওয়া পেলই না যেন পেলই না পিতৃস্নেহ। সন্তানের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না বাবা কামরুজ্জামান।
গোপালপুর এলাকাবাসী তাদের কাউন্সিলরের হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন। তাদের মতে, আর দশজন জনপ্রতিনিধির মতো ছিলেন না জামিরুল। সত্যইি সবসময় এলাকাবাসীর আপদে-বিপদে পাশে পাওয়া যেত তাকে। যে কোন জটিল বিষয়ে তিনি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিতেন এলাকাবাসীকে। অন্যায়ের সাথে আপোষ করতেন না তিনি। তার সাথে কারো বিরোধ থাকতে পারে বলে জানেন না এলাকাবাসী। জামিরুলের মৃত্যুতে গোপালপুরবাসী একজন মানবদরদী জনপ্রতিনিধি হারালো বলে মনে করছেন তারা।
দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হারিয়ে শোকার্ত আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও। তাদের মতে, মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে তিনি প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই কাউন্সিলর নির্বাচন। ভোটে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নিজ দলেরই প্রার্থী। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি পৌর এলাকার বাইরে গিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। গত ৩০ শে ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোটপ্রার্থনা করেছেন জামিরুল।
বিগত পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়া জামিরুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাবেক কাউন্সিলর আব্দুর রশীদ বলেন, ‘জামিরুল ভোটে নির্বাচিত হলেও কখনো আমাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেননি বরং সুযোগ পেলে যোগ্য সম্মান দিয়েছেন। রাজনীতিতে বিনয় ও পারস্পরিক সদ্ভাবের চর্চাই করতেন জামিরুল। আক্ষেপ, এমন একজন মানুষকে দিনের আলোয় নির্মমভাবে হত্যা করা হল।’
লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দলের জন্য সত্যিকারের নিবেদিত কর্মী ছিলেন জামিরুল। দায়িত্বশীল পদে না থাকলেও সংগঠনে কর্মী হিসেবে তার অবদান ছিলো। তিনি কখনও মূল্যায়ন প্রত্যাশা করেননি। দল নিঃসন্দেহে একজন কর্মীকে হারিয়েছে। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই জামিরুলের হত্যাকারীদের।’
শুধু আওয়ামী লীগই নয় বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নিকটও সমান জনপ্রিয় ছিলেন কাউন্সিলর জামিরুল। তার মৃত্যুতে শোকার্ত তারাও।
গোপালপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পুরো পরিষদ শোকাহত। পরিষদের এমন একজন কাউন্সিলর ছিলেন জামিরুল, যিনি কখনই কাউন্সিলরসুলভ আচরণ করতেন না। তার অমায়িক ব্যবহারে সকলেই মুগ্ধ হতেন। মেয়র হিসেবে তার সাথে কোন বিষয় নিয়ে আমার কোনদিন বচসা হয়নি। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের হলেও আমাদের মধ্যে আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট ছেলে হত্যার বিচার চেয়েছেন কাউন্সিলর জামিরুলের বাবা কামরুজ্জামান।
বড়াইগ্রাম সার্কেলের পুলিশ সুপার মোঃ হারুন-অর-রশীদ জানান, পুলিশ কাউন্সিলর জামিরুল হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করা চেষ্টা করছে। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার জন্য মামলা দায়েরে বিলম্ব হচ্ছে জানিয়ে বিকেলে পরিবারের সদস্যরা মামলা দায়ের করবেন বলে আভাস দিয়েছেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *