নাটোর অফিস ॥
নাটোরের নলডাঙ্গায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলীম জীবন (২২) হত্যা মামলায় উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছর সশ্রম কারাদন্ড দেন বিচারক।
বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ মহিদুজ্জামান এ আদেশ দেন। এসময় অপরাধ প্রমানিত না হওয়ায় আসাদের দুই সহদোরকে বেখুসুর খালাস দেয়া হয়েছে। তবে রায় ঘোষনার সময় আসামি আসাদুজ্জামান আসাদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। দন্ডপ্রাপ্ত আসাদুজ্জামান আসাদ জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার রামশারকাজীপুর গ্রামের আনিছুর রহমান শাহ’র ছেলে। খালাসপ্রাপ্ত হলেন, আসাদের বড় ভাই এসএম ফায়সাল ফটিক ও ছোট ভাই আলিম আল রাজি শাহ। তারা দুইজন রায় ঘোষনার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দন্ডপ্রাপ্ত আসাদুজ্জামান আসাদ পলাতক রয়েছেন।
রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বরত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোঃ এন্তাজুল হক বাবু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলা সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি জানান, নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লাইভ করাকে কেন্দ্র করে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নলডাঙ্গা উপজেলার আমতলী বাজারের চার রাস্তার মোড়ে সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার সময় নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এস এম ফিরোজের ভাতিজা ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলীম জীবন ও তার বাবা ফরহাদ শাহকে চেয়ারম্যান আসাদ এবং তার দুই ভাই ফয়সাল শাহ ফটিক ও আলীম আল রাজী প্রকাশ্যে বেদম মারপিট করে গুরুতর আহত করেন।
এতে ফরহাদ শাহ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে প্রাণে বাঁচলেও চারদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে থাকার পর ২৩ সেপ্টেম্বর জীবনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। মেডিকেল, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও সুরতহাল রিপোর্ট থেকে জানা যায় মাথায় লাঠির আঘাতে জীবনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় জীবনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে নলডাঙ্গা থানায় উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদকে প্রধান আসামি করে তার দুই ভাই ও অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা রুজু করেন। ওই মামলাটি পরে হত্যা মামলায় পরিবর্তন করা হয়। এ ঘটনায় আসাদ চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আলিম আল রাজি শাহকে আটক করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এ হত্যা মামলাটি নাটোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন ছিল।
পরে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে নাটোর জেলার চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক মামলা মনিটরিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ নলডাঙ্গা থানার মামলা নং-৭, তারিখ ২০/০৯/২০২২ জিআর মামলা নং-১৪৮/২২ সেশন নং-৩৫১/২৩ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের সরকারি গেজেট প্রকাশ করে।
পরে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) উভয় পক্ষের শুনানি শেষে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি নাটোর জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এ স্থানান্তরের আদেশ দেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক অম্লান কুসুম জিষ্ণু। ওই মামলার দীর্ঘ শুনানী ও সাক্ষ্য প্রমান শেষে বিচারক আজ এই রায় ঘোষণা করেন।
এদিকে নিহত জীবনের চাচা এস এম ফিরোজ এপ্রতিবেদককে বলেন, মামলাটি বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করায় আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু আজকের এই রায়ে সন্তুষ্টি নন। এই রায়ের প্রেক্ষিতে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। আশাকরি সেখানে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।