স্কুল ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সক্রিয় প্রভাবশালীরা

নাটোর অফিস॥
নাটোরের বড়াইগ্রামে এক স্কুল ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে ৬ জন পালাক্রমে ধর্ষণ করার ১ মাস পেরোলেও ভুক্তভোগী পায়নি বিন্দুমাত্র কোন আইনী সেবা। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এই নৃশংস, লোমহর্ষক ও বর্বরোচিত ঘটনাটি বিভিন্ন ভাবে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালিশ বৈঠক ডাকলেও সেখানে প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে অভিযুক্তরা উপস্থিত হয়নি। এই ধর্ষণের ভিডিও তাদের কাছে আছে, ফলে এ বিষয়ে মুখ খুললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ারও হুমকী দেয় ধর্ষণকারীরা। প্রভাবশালী মহলের চাপে ২৭ জানুয়ারী সংগঠিত ঘটনার ২৬ দিন পর ২২ ফেব্রুয়ারী ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন, উপজেলার জোয়াড়ি আটঘরিয়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম কেরাণীর ছেলে পারভেজ (২২), মন্টু সুপারীর ছেলে সাগর (২৩), শ্রী রনজিতের ছেলে প্রসনজিত (২২), শ্রী রতনের ছেলে জিত কুমার (২১), শ্রী পরিমলের ছেলে কৃষ্ণ কুমার (২০) ও বাগাতিপাড়ার কাজিপাড়া গ্রামের মজিবরের বাসার ভাড়াটিয়া ও আনিছ আলীর ছেলে মহন আলী (২৪)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারী সন্ধ্যায় বাগাতিপাড়ার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী (১৫)কে জোরপূর্বক রাস্তা থেকে তুলে এনে বড়াইগ্রামের জোয়াড়ি ইউনিয়নের আটঘরিয়া গ্রামের সুমন কুমার উত্তমের পেয়ারাবাগানে নিয়ে যায়। সেখানে অভিযুক্তরা দ পালাক্রমে ওই স্কুল ছাত্রীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এতে মেয়েটি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে ঘটনাস্থল থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে মেয়েটির বাড়ির কাছে (বাগাতিপাড়ার দয়ারামপুর ইউনিয়নের চিতলী গ্রামে) কাঁচা রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসে। ওই দিন রাত ৮টার দিকে স্থানীয়রা রাস্তার ওপর মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখতে পেয়ে বাড়িতে খবর দেয় এবং পরবর্তীতে তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ধর্ষণের শিকার ওই স্কুল ছাত্রী জানায়, আটঘরিয়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম কেরাণীর ছেলে কলেজ ছাত্র পারভেজের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক। ঘটনার দিন সন্ধ্যার একটু আগে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়া শেষে বের হলে পারভেজ জানায়, ‘আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে আব্বার সাথে কথা হয়েছে। আব্বা খুবই অসুস্থ, তাই তিনি তোমাকে দেখতে চেয়েছেন।’ পারভেজের কথায় বিশ^াস করে তার বাড়ির দিকে রওনা হলে যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পথিমধ্যে পারভেজের বাড়ির অদূরে ফাঁকা রাস্তা পার হওয়ার সময় আকস্মিক পারভেজসহ ৬ জন তাকে মুখ চেপে উঁচু করে ধরে রাস্তার পাশে পেয়ারা বাগানে নিয়ে যায় এবং সেখানে ৬জন পালাক্রমে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
নির্যাতিতা ওই স্কুল ছাত্রীর দিন মজুর পিতা জানান, মেয়েটিকে তারা অজ্ঞান ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারি তার মেয়েকে তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে পরস্পর ৬ বন্ধু। তিনি আরও জানান, এই ঘটনার বিচার চেয়ে জোয়াড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী, দয়ারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুর ইসলাম মিঠুর কাছে গিয়েছি। কিন্তু ওয়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী ও প্রধান আসামী পারভেজ এর মামা ওয়ালিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান এ ঘটনা ধাপাচাপা দেওয়ার জন্য প্রভাবশালী লোকজন ও বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছে। তারা সময়মতো আমাদেরকে থানাতেও যেতে দেয়নি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের জেলা আহ্বায়ক অমর ডি কস্তা বলেন, স্কুল ছাত্রী গণ ধর্ষণের শিকার হবে অথচ তার আইনী কার্যক্রম এভাবে বাধাগ্রস্থ হবে তা কোন ভাবেই কাম্য নয়। প্রশাসন দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে বিশ্বাস করি।
বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার শফিউল আযম খাঁন জানান, এ ধরণের অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় আসেনি।
এদিকে আদালতে মামলা দায়ের করার পর ঘটনাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নাটোর কার্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়ার ১১ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কোন কর্মকর্তা তদন্তের জন্য আসেনি। এ ব্যাপারে পিবিআই নাটোর এর পুলিশ সুপার মো. শরীফ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, আজ ৪ র্মাচ পর্যন্ত আদালত থেকে এ ব্যাপারে কোন নির্দেশনা আমাদের দপ্তরে এসে পৌঁছায়নি। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় সকল দায়িত্ব পালন করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *