নাটোর অফিস॥
নাটোরের লালপুর উপজেলার বালিতিতা ইসলামপুর গ্রামের মো. এসকেন আলী। পেশায় তিনি একজন গ্রাম পুলিশ। তার স্বপ্ন এমপি নির্বাচন করবেন। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছেন তিনি। এসকেন আলী লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ এবং বালিতিতা ইসলামপুর গ্রামের মৃত আকবর আলী মন্ডলের ছেলে।
বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে লালপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ মনোনয়ন উত্তোলন করেন তিনি।
এ নিয়ে এলাকয় রীতি মতো তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে মো. এসকেন আলী সমকাল কে জানান, দীর্ঘ বিশ বছর যাবত তিনি বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছেন। এর মধ্যে দু’বার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর পদে ও একবার উপজেলা ভাইস চেযারম্যান পদে। তবে এসব নির্বাচনে একবারও বিজয়ী হতে পারে নি। এর পরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে পোষ্টার ছাপিয়েও অর্থের অভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারেন নি। এসকেন আরো বলেন, আমার স্বপ্ন ছিলো একবার এমপি নির্বাচন করবো। সেই শখ পুরন করতেই আমার দুই কাঁঠা জমির মধ্যে এক কাঁঠা জমি আড়াই লাখ টাকায় বিক্রয় করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র উত্তোলন করেছি। তিনি আরো জানান, নির্বাচন করা তার শখ। ভোট করতে তার খুব আনন্দ লাগে। মানুষ তাকে কতটুকু ভালোবাসে সেটা জানতে তিনি বার বার নির্বাচনে আংশগ্রহণ করেন। তিনি কোন রাজনৈতিক দল করেন না এজন্য তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি হতে চান। এসকেন আলীর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে কলেজে ও ছোট মেয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। আয়ের উৎস হিসেব গ্রাম পুলিশের চাকুরি আর বাড়িতে গরু পালন করেন তিনি। এখন পর্যন্ত ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে তার ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা তার খরচ হয়েছে। তিনি নির্বাচিত হলে কোন কাজ করতে কউকে টাকা দিতে হবে না। রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন করবেন বলে জানান এসকেন আলী।’
কেন জনগণ আপনাকে ভোট দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাকরি সুবাদে অনেক মানুষের উপকার করেছি বিনা স্বার্থে। তিন বার নির্বাচন করেছি। ভালো মানুষ হিসেবে মানুষ অবশ্যই একটা ভোট আমাকে দিবেন। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
এদিকে এলাকাবাসী অনেকেই তাকে সমর্থন জানালেও অনেকে বিদ্রুপও করছেন।
এলাকাবাসী জানায়, এর আগেও দুইবার মেম্বর পদে ভোট করে পাশ করতে পারেন নি এসকেন। নির্বাচন আসলেই সে ভোটে দাঁড়ায়। দুই কাঁঠা জমির এক কাঁঠা বিক্রি করে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন তিনি। তার এই কার্যক্রমকে অনেকেই পাগলামু বলে মনে করছেন।’
প্রতিবেশী আলেয়া খাতুন বলেন, এসকেন আলী আমাদের সম্পর্কে জামাই হয়। সে একজন সহজ সরল মানুষ। এমপি নির্বাচিত হতে পারলে এলাকার মানুষের উপকার হবে।’
শহিনা আক্তার সাথি খাতুন বলেন, এসকেন ভাই প্রতিবারই ভোটে দাঁড়াই। এবার এমপি পদে দাঁড়িয়েছে। তাকে নিয়ে যে যাই বলুক এমপি হতে পারলে আমাদের গ্রামের মানুষের উপকার হবে।’
এসকেন আলীর স্ত্রী শাহানাজ বেগম বলেন, আমার স্বামীর দির্ঘদিনের ইচ্ছা জাতীয় নির্বাচনে সে একবার নির্বাচন করবেন। এবার সেই ইচ্ছা পুরন করতে চলেছেন। আমাদের পরিবারের কিছুটা ক্ষতি হলেও তার ইচ্ছ তো পুরন হবে এটাই বড়।
লালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি। আমার পরিষদের একজন গ্রাম পুলিশ এসকেন আলীর মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেছে এই খবরটি গতকাল লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন। এটা নিছক পাগলামু ছাড়া আর কিছুই না।’
লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানা মনোনয়ন পত্র উত্তোলনের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গতকাল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এক গ্রাম পুলিশ মনোনয়ন পত্র উত্তোলন করেছেন।