ব্লাকমেইলে মাঠ কর্মিকে ধর্ষণের অভিযোগ, হাসপাতালের পরিচালক কারাগারে

নাটোর অফিস॥
নাটোরে গোসলের ভিডিও দিয়ে ব্লাকমেইল করে টানা দুই বছর এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত একটি বেসরকারী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জল মৃধা (৩২)কে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ধর্ষণ ঘটনায় মামলা হওয়ার প্রায় দুই পলাতক থাকার পর উজ্জল মৃধা গতকাল বৃহস্পতিবার নাটোর সদর আমলি আদালতের বিচারক মো. রওশন আলমের আদালতে আতœসমর্পণ করে। আদালতের বিচারক উজ্জলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। উজ্জল মৃধা নলডাঙ্গা উপজেলার পূর্ব মাধনগর গ্রামের আক্তার হোসেনের ছেলের এবং নাটোর শহরের কানাইখালী বিসমিল্লাহ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মামলার বাদি ভুক্তভোগী ভিকটিম ওই হাসপাতালের মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়িও নলডাঙ্গা উপজেলায়।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, চার বছর আগে অভিযুক্ত উজ্জলের সাথে তার পরিচয় হয়। এক রোগীকে ওই ক্লিনিকে চিকিৎসা দিতে আনার সূত্র ধরে উজ্জলের সাথে তার যোগাযোগ হয়। তখন উজ্জল নির্দিষ্ট কমিশন পদানের শর্তে ভুক্তভোগী নারীকে ক্লিনিকে রোগী পাঠাতে বলেন। এভাবে ধীরে ধীরে উজ্জলের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে।এক পর্যায়ে উজ্জল ওই নারীকে ক্লিনিকের মাঠকর্মী হিসেবে কাজের প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হন। তখন থেকে হাসপাতালে চাকরির পাশাপাশি রোগী বেশি থাকলে বা কোনো রোগীর রাতে অপারেশন হলে ভুক্তভোগী নারী রাতে হাসপাতালে অবস্থান করতেন। ২০২১ সালের মাঝামাঝি রোগীর চাপের কারনে একদিন তিনি হাসপাতালে অবস্থান করেন। ওইদিন বাথরুমে গোসলের সময় উজ্জল গোপনে ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওর কথা গোপন রেখে কথাবার্তার মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন উজ্জল। রাজি না হওয়ায় গোপনে ধারন করা গোসলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন। ঘটনাটি পুলিশকে জানানোর উদ্যোগ নিয়ে উজ্জ্বল তাকে হাসপাতালের কাজে যোগ দিতে বলেন ও তার সামনে ফোন থেকে গোসলের ভিডিওটি ডিলিট করার আশ্বাস দেন। উজ্জলকে বিশ্বাস করে ওই নারী হাসপাতালের কাজে যোগ দিতে গেলে হাসপাতালের ৬তলায় উজ্জলের শোবার ঘরে ডেকে নিয়ে যান এবং রাতভর তাকে ধর্ষণ করেন। এসময় সোহাগ নামে তার এক সহযোগী বাহিরে পাহারায় থাকে। এই ধর্ষণের ভিডিও গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেন উজ্জল। এবার এই ভিডিও ছড়িয়ে দেবার হুমকি দিয়ে টানা দুই বছর উজ্জল তার শোবার ঘরে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি গর্ভধারণ করলে উজ্জল জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করেন। সর্বশেষ গত ২রা জুন উজ্জল আবারো তাকে হাসপাতালে তার কক্ষে আটকে ধর্ষণ করে। নির্যাতন সইতে না পেরে ওইদিন ২ জুন নাটোর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী নারী আরো বলেন, গোপন ছবি ও গোসলের ভিডিও ধারণের পর ব্লাকমেইল করে উজ্জল শহরের একাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। তার মোবাইল,ল্যাপটপ ও অন্য ডিভাইসে এসব ছবি ও ভিডিওর প্রমাণ পাওয়া যাবে। তার এই কাজে বিসমিল্লাহ হাসপাতালের অন্য পার্টনাররা জড়িত আছেন। তাদের সহযোগিতায় সে আমাকে দুই বছর ধরে ধর্ষণ করেছে।আমি এ ঘটনায় বিচার চাই।
সদর থানার ওসি নাছিম আহমেদ বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ ভুক্তভোগী নারী থানায় মামলা দায়ের করলে সে গাঢাকা দেয়। পুলিশ গুরুত্বের সাথে মামলাটি গ্রহণ করে। বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত উজ্জল মৃধা আদালতে আত্মসমর্পন করে এবং আদালতের নির্দেশে উজ্জল কারাগারে রয়েছে।
এদিকে একাধিক সুত্রে জানাযায়, অভিযুক্ত উজ্জল মৃধা এক দশক আগে নিজ এলাকা নলডাঙ্গা থেকে ঢাকায় যান। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের সময় একাধিক নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ান। ২০১৪ সালে ঢাকায় নাটোরের স্থানীয় এক নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে নাটোরে ফিরে আসেন। এরপর নাটোর শহর ও নলডাঙ্গায় ক্লিনিক ব্যবসা শুরু করেন। নাটোর শহরের কানাইখালী এলাকার বিসমিল্লাহ হাসপাতালের দায়িত্ব নেয়ার পূর্বে তিনি পাঁচজন অংশীদারের সাথে শহরের মাদ্রাসামোড় এলাকার নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার শুরু করেন। এক লাখ টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত মুনাফা প্রদানের শর্তে আরো অংশীদার গ্রহন করেন উজ্জল। তবে এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে একজন অংশীদারসহ নিজের বিনিয়োগ নিয়ে বের হয়ে বিসমিল্লাহ হাসপাতাল চালু করেন। বর্তমানে তিনজন অংশীদার যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়।
নাটোর জেলা পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম পিপিএম জানান, হাসপাতালে ভেতরে একজন নারীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করার ঘটনাটি পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। অভিযুক্ত পরিচালকের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা অন্য কোনো ডিভাইসে আরো অন্য নারীদের ব্লাকমেইলের কোনো ছবি বা ভিডিও রয়েছে কি না তা অনুসন্ধান করছে পুলিশ। এধরনের অপরাধ করে কেউ পার পাবে না বলে তিনি জোর দিয়ে বলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *