খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে বিলুপ্তির পথে মহিষ পালন।

নবীউর রহমান পিপলু।।
পশু খাদ্যের সংকটসহ মূল্য বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধে দ্রত সহায়তা না পাওয়াসহ পশুর মূল্য কমে যাওয়ায় নাটোরের লালপুরের পদ্মা চরের খামারিরা মহিষ পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। সরকারী সহায়তাসহ খামারে পশু চিকিৎসকদের নিয়মিত চিকিৎসা প্রদানের দাবী জানিয়েছেন তারা।

পদ্মার চর বিধৌত লালপুর উপজেলার বেশ কিছু এলাকা গবাদিপশুর চারণভূমি কয়েক যুগ ধরে কাজিপাড়া, ডেবরপাড়া,বিলমারিয়া,বুধপাড়া,চাঁদপুর,মাধবপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক খামারি মহিষ পালন করে জিবীকা নির্বাহ করে আসছে দির্ঘদিন থেকে। সম্প্রতি অকাল বন্যা ও বর্ষার কারনে পশুখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে এলাকাগুলোতে। এছাড়া বর্ষা ও বন্যার সময় বেশ কিছু মহিষ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বর্ষার পর পরই খাদ্যের মুল্য বৃদ্ধি পেলেও কমে যায় পশুর দাম। ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এসব খামারিরা মহিষ পালনে আগ্রহ হারাতে থাকে। অনেকেই ইতিমধ্যে পৈত্রিক এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অন্যান্য বারের তুলনায় এবার কম সংখ্যক মহিষ পালন করছেন।

খামারিদের অভিযোগ পশু চিকিৎসকরা পদ্মা চরের মধ্যে যেতে চান না। রোগে আক্রান্ত মহিষ সহজেই মারা যাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা। উপজেলার  তিলকপুর ও কাজিপাড়া গ্রামের মহিষের বাথান মালিক জুয়েল, মন্টু, রফিক, বাচ্চু, সেলিম ও কবির বলেন, চরে এখন আর উন্মুক্ত পতিত জমি থাকে না বললেই চলে। অনেক দূর দূরান্তে যেতে হয়। ঘাসের সুবিধার জন্য বাথানের সব মহিষ বর্তমানে অবস্থান করছে পাবনার দাদুর চর এলাকায়। বর্ষা মৌসুমে চর প্লাবিত হয়ে গেলে আবার তারা ফিরে আসবে নিজ নিজ বাড়ির এলাকায়। ওই সময় স্থানীয় নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের অনাবাদী খামার গুলোতে জন্মা বুনো ঘাসনির্ভর হয়ে দিনাতিপাত করতে হয় খামার মালিকদের।

এসব খামারিরা অভিযোগ করে বলেন, শত সমস্যা সত্বেও তারা পৈত্রিক এই পেশা ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু গত দুই মৌসুমে হঠাৎ অতি বর্ষণ ও নদীতে পানি বৃদ্ধির কারনে রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ২০টি মহিষ মারা যায়। মহিষ আক্রান্ত হওয়ার পর পশু ডাক্তারদের ডাকা হলেও তারা চরে যেতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে সময়মত চিকিৎসা না পেয়ে মহিষ মারা যায়। এত তাদের ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়েছে। এই বর্ষার সময় মহিষের দামও পড়ে যায়। ফলে পুজি হারানোর ভয়ে কম দাম দিয়েই মহিষ বিক্রি করতে হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ এসব খামারিরা মহিষ পালনে আগ্রহ হারাতে থাকে। অনেকেই ইতিমধ্যে পৈত্রিক এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অন্যান্যবারের তুলনায় এবার কম সংখ্যক মহিষ পালন করছেন। খামারিদের অভিযোগ , পশু চিকিৎসকরা পদ্মা চরের মধ্যে যেতে চাননা। হেতু রোগে আক্রান্ত মহিষ সহজেই মারা যাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা।

স্থানীয়রা জানায়, লালপুরের পদ্মার চরের বিভিন্ন এলাকায় ঘাস সমৃদ্ধ এলাকায় এই খামারিরা অস্থায়ী আবাসন তৈরী করে মহিষ লালন পালন করে থাকেন। চরের উন্মুক্ত চারণ ভূমির বিভিন্ন এলাকায় দিন ভর ঘুরে ফিরে উদর পুরে খেয়ে সন্ধায় ফিরে আসে অস্থায়ী আবাসনে। স্থানীয় ভাষায় এই দলকে বলা হয় ‘বাথান’। এই বাথান বা খামারে ছোট, বড়, বাচ্চা সব রকম মহিষ থাকে। বাথানেই মা মহিষেরা বাচ্চা প্রসব করে। শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকলে একটি মা মহিষ ১০ থেকে ১৫ লিটার দুধ দেয়। মহিষের এই গাঢ় দুধের চাহিদাও প্রচুর। এই দুধে ঘি এর ফলন বেশী। প্রতি লিটার দুধের দাম ৮০ টাকা।

স্থানীয় বাসিন্দা রায়হানুল ইসলাম মহিষ পালনে আগ্রহ হারানো খামারিদের আর্থিকভাকে সহায়তা প্রদানের দাবী করে বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব খামারিদের  উৎসাহিত করে মহিষ পালন বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকতা মোস্তাফিজুর রহমান মহিষ পালনে খামারিদের অনীহার কথা স্বীকার করে উপজেলার সংশ্লিষ্ট বিভাগের নানা সমস্যার কথা জানিয়ে অসহায়ত্বের কথা জানান।  তিনি বলেন, উপজেলায় গত প্রায় ১০ বছর ধরে ভ্যাটেনারী চিকিৎসক পদ সহ মাঠ কর্মীর ৪টি পদও শুন্য রয়েছে।  ফলে পদ্মার চরে মহিষ  আক্রান্ত  হওয়ার খবর পাওয়ার পরও লোকবল না থাকায় সেখানে কাউকে পাঠাতে পারেননা। তবে আক্রান্ত মহিষ নিয়ে প্রাণি সম্পদ অফিসে আসার জন্য তাদের বলা হলেও তারা আসেননা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *