বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরন ॥ সমাবেশের পাশে লাঠি হাতে ছাত্রলীগ

নাটোর অফিস॥
নাটোরে সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে সমাবেশ করেছে বিএনপি। শনিবার সকাল ৮টায় পুর্ব ঘোষনা অনুযায়ী শহরের আলাইপুরস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে সমাবেশ শুরুর আগেই বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ও পাশে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর পুলিশ ২টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছে। সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান লালু উপস্থিত থাকলেও তিনি বক্তৃতা দেননি। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী গোলাম মোর্শেদ,জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু,সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ,যুবদল সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম, বাবুল চৌধুরী প্রমুখ।

এদিকে একই সময় বিএনপির নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাঁশের লাঠি হাতে মিছিল নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বিদ্যুৎ সঞ্চালন (পিডিবি) অফিসের সামনে আটকে দেয়। এসময় পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ কর্মীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। বাধা পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাঁশের লাঠি হাতে বিএনপির সমাবেশের পাশে প্রায় আধা ঘন্টা অবস্থান নেওয়ার পর ফিরে যায়। এসময় কোন হতাহত হয়নি। তবে বিএনপি নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন ,সমাবেশ শেষে বাড়ি ফিরে যাওযার সময় আওয়ামীলীগ কর্মীদের হামলায় বিএনপি ১৪ নেতা কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।
জেলা যুবদলের সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম জানান,আহতদের মধ্যে তিনজনকে রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরা হলেন লক্ষিপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রেজাউল করিম,বড়াইগ্রামের জোয়ারি ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি রঞ্জু হোসেন ও একই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড যুবদল সাধারন সম্পাদক ফরহাদ হোসেন। হামলায় আহত নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভুট্টোকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা বিভিন্ন ক্লিনিক বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে বিএনপির সমাবেশের পর সকাল ১০টার দিকে বিএনপি অফিসের সামনে প্রথমবারের মত শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামীলীগ। ট্রাক মঞ্চে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত চলা এই শান্তি সমাবেশে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান, সংরক্ষিত আসনের এমপি রতœা আহমেদ,সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি, সিরাজুল ইসলাম, সৈয়দ মোর্ত্তুজা আলী বাবলু,মালেক শেখ প্রমুখ। দু’দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে এলাকায় সাধারন মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছিল। তবে শান্তিপুর্নভাবে পৃথকভাবে দুদলের সমাবেশ বড় ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হওয়ায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসে।

জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন,পুর্ব ঘোষিত নির্ধারিত সময়েই দলীয় কার্যালয়ের সামনে তারা সমাবেশ শুরু করেন। সমাবেশ শুরুর পরপরই মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও সমাবেশ অব্যাহত ছিল। সমাবেশের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান লালু উপস্থিত হলেও মুশলধারে বৃষ্টি হওয়ার কারনে তিনি সমাবেশ স্থলের পাশের ঘরে অবস্থান করছিলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সমাবেশ শুরুর পুর্বে বিএনপি কার্যালয় অথার্ৎ সমাবেশ স্থল এলাকায় ৪টি ককটেল নিক্ষেপ করা হলে ২টি বিস্ফোরিত হয়। অবিস্ফোরিত ককটেল দু’টি পুলিশ উদ্ধার করে। সমাবেশ এলাকায় সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এর মাঝেও ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালিয়ে বিএনপির সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টা করে। তারা সমাবেশ লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় ছাত্রলীগ কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে বিএনপির সমাবেশ এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। তবে সমাবেশ শেষে বাড়ি ফিরে যাওযার সময় আওয়ামীলীগ কর্মীদের হামলায় নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভুট্টোসহ বিএনপি ১৪ নেতা কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।

নাটোর সদর থানার ওসি নাছিম আহমেদ জানান, দুইটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শিদের বরাত দিয়ে ওসি বলেন ভোররাতের দিকে এই ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। কে বা কারা এই ককটেল নিক্ষেপ করেছে তা জানা যায়নি বা স্থানীয়রা কেউ বলতে পারেনি। তবে পথের মধ্যে কোন হামলার ঘটনার বিষয়টি পুলিশ জানেনা এবং এ সম্পর্কে কেউ অভিযোগ করেননি বলে জানান।
জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তুজা আলী বাবলু বলেন, ককটেল নিক্ষেপ বা সমাবেশে হামলা চালানোর মত কাজে ছাত্রলীগ জড়িত নয়। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এধরনের অভিযোগের কোন তথ্য তাদের কাছে নেই। বিএনপির ছাত্র ও যুবদলের মধ্যে অভ্যন্তরিন বিরোধ রয়েছে সারা দেশে। তারা নিজেরাই এসব অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে আওয়ামীলীগ বা ছাত্রলীগের ওপর দায় চাপাচ্ছে। নাটোরে কোন উশৃংখল ঘটনা ঘটেনি। ককটেল বিস্ফোরন বা নিক্ষেপের কোন ঘটনার সাথে ছাত্রলীগ জড়িত নয়। আর বিএনপির সমাবেশের পর আওয়ামীলীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সময়ে বিএনপির ঘরে ফেরা নেতা কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন,ককটেল নিক্ষেপের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বিএনপির সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরা নেতা কর্মীদের ওপর হামলার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। বিষয়টি খোঁজ নেয়া হচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *