গুরুদাসপুরে সাংবাদিক নাজমুলের বুকের হাড় ভেঙ্গে দিয়েছে পুকুর খননকারীরা

নাটোর অফিস ॥
নাটোরের গুরুদাসপুরে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসী নান্নু মোল্লাসহ তার সহযোগীরা। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হামলায় সমকাল প্রতিনিধি নাজমুল হাসান নাহিদ (২৮) গুরুতর আহত হন। এছাড়া অন্তত আরো ১০ সংবাদ কর্মীকে লাঞ্ছিত করা হয়। আহত নাজমুলকে উদ্ধার করে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার সন্ধার দিকে উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের দুর্গাপুর স্লুইচগেট মসজিদের কাছে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত নান্নু মোল্লা পৌর সদরের চাঁচকৈড় মোল্লাপাড়া মহল্লার নাছির মোল্লার ছেলে। গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক অক্সিন জানান, আহত সাংবাদিক নাজমুল হাসানের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তাছাড়া তার বুকের দুইটি হাড় ভেঙ্গে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সাংবাদিকদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, বুধবার সকালে গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সদস্যরা পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহে যান দুর্গাপুর স্লুইচগেট এলাকার হাঁড়িভাঙ্গা বিলে। সেখানে দেখেন অন্যদের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী নান্নু মোল্লার ১৫ বিঘা জমিতে সরিষা নষ্ট করে পুকুর খনন করছেন। অভিযুক্ত নান্নু মোল্লার পুকুরে গিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার ফেজবুক পেইজে লাইভ দেন সংবাদকর্মীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নান্নু মোল্লা সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।
সংবাদকর্মীরা আরো জানান, ওসি ও এসিল্যান্ডের উপস্থিতিতে থানা ও উপজেলা প্রশাসন পুকুর খনন কাজে ব্যবহৃত একটি এক্সকেভেটর জব্দ করেন নান্নু মোল্লার পুকুরের পাশে। এসময় সংবাদ সংগ্রহে যান গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের অন্তত ১০ জন সাংবাদিক। এসময় পৃর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক নান্নু মোল্লা (৪৫) ও তার ছোট ভাই নহর মোল্লা (২০), জুয়েল মোল্লা (২৮), মো. সুমনসহ (৩০) অন্তত ১০ জনের একটি দল সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এসময় ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীরা জানান, গুরুদাসপুর থানার ওসি ও সহকারি কমিশনারের (ভূমি) উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের ওপর নান্নু মোল্লাসহ তার বাহিনীরা ওই হামলা চালায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
আহত সাংবাদিক নাজমুল হাসান নাহিদ বলেন, দুর্গাপুর মসজিদের সামনে তারা প্রায় ১০ জন সংবাদকর্মী সংবাদ সংগ্রহের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় নান্নু মোল্লাসহ অন্তত ১০জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাংবাদিকদের ওপার হামলা চালান। তাকে সড়কে ফেলে এলোপাথারিভাবে পিটিয়ে যখম করেন। এসময় ইত্তেফাকের রাশিদুল, মোহনা টেলিভিশনের মিজানুর রহমান, এশিয়ান টেলিভিশনের মেহেদী হাসান তানিম, আমার সংবাদের আব্দুস সালাম, সংবাদের সাকিল, আজকের দর্পনের জুয়েল হাসান টিপু, বাংলাদেশের খবরের আবু হেনা মোস্তফা কামালকেও লাঞ্চিত করা হয়।
গুরুদাসপুর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান শাকিল ও থানার ওসি আব্দুল মতিন ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা বিলের মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করছিলেন। এসময় তারা একটি ভেকু মেসিন জব্দ করা সহ একটি ইট ভাটায় ২০ হাজার টাকার অর্থ দন্ড করা হয়। সংবাদ কর্মীদের ওপর হামলার বিষয়টি ঘটনার অনেক পরে গণমাধ্রম কর্মীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। ঘটনাটি যোগেন্দ্রনগর এলাকায় রাস্তার ওপর ঘটেছে। তারা বিলের মধ্যে থাকায় কিছুই জানতে পারেননি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কোন প্রশ্নই ওঠেনা। এই অভিযোগ সঠিক নয়।
চলনবিল প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আককাছ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষিদের বিচার দাবি করেন।
গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি দিল মোহাম্মদ জানান, ‘গুরুদাসপুর উপজেলাজুড়ে পুকুর খনন মহামারী আকার ধারণ করেছে। কৃষিতে মারাত্মকভাবে এর প্রভাব পড়ছে। একারণে গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সদস্যরা পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। আমি ওই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি জানাচ্ছি।’ ইউনিক প্রেস ক্লাব ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার সহ দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেছে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমে§দ বলেন, গুরুদাসপুরে কোনো পুকুর খনন হবেনা। সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়টি পুলিশের।
নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়,কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *