গল্পটা ৪৪ বছরের….!

নাটোর অফিস॥
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর পরে বৈপ্লবিক পরিবর্তণের যাত্রা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম অস্ত্রপচারের মাধ্যমে এই বিপ্লব শুরু। এর সাথে শুরু হয়েছে আধুনিক অল্ট্রাসনোগ্রাম আর দেড় যুগ বাক্স বন্দি এক্স-রে মেশিনের কার্যক্রম। আধুনিক সেবা গুলো এখন মিলবে সরকারি এই হাসপাতালেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৮ সালে বড়াইগ্রাম হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। ২০২০ সালে হাসপাতালটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত হয়। নতুন ভবনে সুপরিসর আধুনিক অপারেশন কক্ষ হলেও ছিলনা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। আবার ২০০৪ সালে একটি এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ হলেও এতোদিন সেটা ছিল বাক্স বন্দি। একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও সেটার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি দক্ষ চিকিৎসকের অভাব। এবার সেই সকল কার্যক্রম একসাথে চালু হলো।
হাসপাতালের আরএমও ডা. ডলি রাণী বলেন, প্রথম দিনে দু’টি সিজারিয়ান সেকশন অস্ত্রপচার হয়েছে। প্রথমটি উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের বৃষ্টি রোজারিও (২২)- প্লাবন রোজারিও (২৬) দম্পতির জমজ পুত্র সন্তান হয়। এটি তাদের প্রথম সন্তান। দ্বিতীয়টি জোনাইল গ্রামের প্রিয়াংকা (২৬)- নিখিল (৩০) দম্পতির পুত্র সন্তান। এটি তাদের দ্বিতীয় সন্তান। উভয় মা ও সন্তানরা ভালো এবং সুস্থ্য আছে। তিনি জানান, এই অপারেশনে এনেস্থিসিয়া করেছেন ডা. মেহেতাজুল ইসলাম এবং অস্ত্রপচার করেছেন ডা. ডলি রাণী ও ডা. মুক্তার হোসাইন।
কথা হয় প্রথম দম্পতির স্বামী প্লাবন রোজারিওর সাথে, তিনি বলেন, আমার জানা ছিল না, স্থাণীয় স্বাস্থ্য কর্মীর মাধ্যমে খবর পেয়ে হাসপাতালে যোগাযোগ করি। সরকারি হাসপাতালে এভাবে অস্ত্রপ্রচার এবং সেবা পাবো তা কল্পনাই করতে পারতেছি না। সত্যি আমি ভাগ্যবান। প্রথমই জমজ পুত্র সন্তান, অনেক গুলো ডাক্তারের সেবা, ভালো অস্ত্রপচার আর আর্থিক সাশ্রয়। একসঙ্গে সব পেলাম।
এই সব কিছুর নেপথ্যের কারিগর হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খুরশীদ আলম। মাত্র চার মাস আগে তিনি এই হাসপাতালে যোগদান করেছেন। তিনি এসে শুণ্য অপারেশন কক্ষ, বাক্সবন্দি এক্স-রে আর অল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন পান। এরপর তার ডাকা স্বাস্থ্যসেবার প্রথম সভায় তিনি তার ইচ্ছা আর পরিকল্পনার কথা জানালে কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস তাকে সব ধরণের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ শুরুর পরামর্শ দেন।
স্বপ্ন পুরনের পথে তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করেছেন। তার পোষ্টটি হুবুহ তুলে ধরা হলো। “চার মাসে একেবারে শূণ্য থেকে একটা ওটি সেটআপ রেডি করাটা বেশ চ্যালেঞ্জই ছিল। টিম বড়াইগ্রাম আজ সেটাই করিয়ে দেখালো। আলহামদুলিল্লাহ। আজ থেকে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু হলো সুপরিসর আধুনিক অপারেশন থিয়েটার। পর্যাক্রমে সব ধরনের অপারেশনের সুবিধা ভোগ করবে বড়াইগ্রামবাসী। আজ প্রথম সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ জমজ সন্তান ও জন্মদাত্রী মা তিনজনই সুস্থ আছে। অপারেশনের কারিগর হিসেবে ছিলেন জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থিসিয়া) ডা. মো মেহেতাজুল ইসলাম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ডলি রাণী, ডা. মোঃ মুক্তার হোসাইন এমওডিসি, এসএসএন হালিমা বেগম ও বিরতি রাণী। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অধ্যাপক মো. আব্দুল কুদ্দুস মহোদয়কে। সার্বিক দিক-নির্দেশনায় নেপথ্যে ছিলেন সুযোগ্য সিভিল সার্জন ডা. রোজী আরা খাতুন। এনেস্থিসিয়া জিএ মেশিন দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তত্বাবধায়ক ডা. পরিতোষ কুমার রায় স্যার, আধুনিক সদর হাসপাতাল, নাটোর। একটা ওটি টেবিল ও পোর্টেবল ওটি লাইট দিয়ে আমাদের কৃতজ্ঞ করেছেন ইউএইচএফপিও গুরুদাশপুর ডা. মুজাহিদুল ইসলাম খোকন। জরুরী ভিত্তিতে ওটি সিলিং লাইট, ডায়াথার্মি মেশিন ও ওটি ড্রাম সরবরাহ করে সহায়তা করেছেন ইউএইচসি ডিপিএম ডা. জহির আহমেদ তালুকদার। অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি আমার কর্মীবাহিনীকে যাদের তিলতিল পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে আমাদের ওটি কমপ্লেক্স। সন্তোষ, সাজন, বিউটি, নীলা, মায়া, হান্নান, মানিক, মৌসুমী, সালমা, জাহাঙ্গীর, মিথুন, বরুন, আসাদুল, ডাবলু, শহীদ, ভুট্টো, হিরাসহ আরও অনেকেই। ধন্যবাদ জানাই বড়াইগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দকে যাদের সহযোগিতা ছিল অনস্বীকার্য ও অপরিসীম। সার্বক্ষণিক ছায়ার মতো থেকে সহযোগিতা করেছেন প্রধান সহকারী মো. ছালেহ মুছা। ধন্যবাদ টিম বড়াইগ্রাম। এবারে এটাকে ধরে রাখার পালা। আমি নিশ্চিত, টিম বড়াইগ্রাম এই চ্যালেঞ্জ নিতে সর্বদা প্রস্তুত।”
ডা. খুরশীদ আলম বলেন, এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে সকলের সহযোগিতা চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *