নাটোরসহ উত্তরালঞ্চলে রেল চলাচলে ‘বিলম্ব বিড়ম্বনা’,ভোগান্তি

নবীউর রহমান পিপলু্॥ রেলজটের কবলে পড়ে নাকাল হচ্ছেন উত্তরাঞ্চলের যাত্রিরা। খুলনায় নতুন রেল স্টেশন থেকে ‘ওয়াস পিটের’ দুরত্ব বেশী হওয়ায় প্রায় প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কয়েক ঘন্টা দেরীতে চলাচল করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, মাসাধিকাল আগে খুলনায় নতুন স্টেশন চালু হয়েছে। এ কারনে রাজধানী ঢাকা সহ উত্তরাঞ্চলে চলাচলকারী আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি খুলনার নতুন স্টেশনে যাত্রি নামিয়ে দিয়ে পুরাতন স্টেশনের ‘ওয়াস পিটে’ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ধোয়ামোছা ও পানি ভরে নতুন স্টেশনে ফিরে আসতে সময় লাগছে। এ কারনে প্রায় প্রতিটি ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে অনেক দেরীতে খুলনা নতুন স্টেশন থেকে গন্তব্যের উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। এতে করে পথে কোন কোন ট্রেনকে আটকিয়ে রাখা হয়।

খুলনা থেকে ঈশ্বরদী বা আব্দুলপুর জংশন পর্যন্ত রেলের ডবল লাইন রয়েছে। ডবল লাইন থাকায় আব্দুলপুর পর্যন্ত রেলজট না হলেও ঈশ্বরদী থেকে ঢাকা বা পার্বতীপুর, দিনাজপুর, চিলাহাটি ও পঞ্চগড় পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় মাসাধিককাল ধরে এই পথে রেলজটের কবলে পড়তে হচ্ছে যাত্রিদের। এই পথে চলাচলাকারী ট্রেনগুলি সিডিউল অনুযায়ী চলাচল করতে পারছেনা। অধিকাংশ ট্রেনই চলছে ৩ থেকে ১০ ঘন্টা বিলম্বে। আন্তনগর ট্রেনের সিডিউল ঠিক রাখতে গিয়ে জনবলসহ স্টেশন মাষ্টার নেই এমন স্টেশনেও ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। এতেও রেহাই পাচ্ছেনা রেলজট।

ঢাকাগামী যাত্রি আবুল হোসেন বলেন, আগে রাতের ট্রেন পরদিন সকাল ১০টায় পেয়েছি। অন্য যাত্রিরাও জানালেন রেল জটের কারনে তাদের অসহনীয় ভোগান্তির কথা।
শনিবার বিকেল তিনটায় সরেজমিন নাটোর স্টেশনে গিয়ে জানা যায়, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা পার্বতীপুরগামী আন্তঃনগর রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেলা ১২টার নাটোর স্টেশনে আসার কথা থাকলেও তখনও পৌঁছেনি। অপরদিকে খুলনাগামী রুপসা ট্রেনও সাড়ে তিনটাতেও আসেনি। নাটোর স্টেশনে এই ট্রেন পৌঁছার নিধারিত সময় বেলা সাড়ে ১২টা। ট্রেন দুটি তিন ঘন্টা বিলম্বে চলছে। এই অবস্থা গত একমাস ধরে চরছে বলে জানালেন এক যাত্রি। শনিবারও ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেনগুলি ৪ থেকে ৫ ঘন্টা দেরীতে গন্তব্যে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের এক কর্মচারী জানান, খুলনার ওই নতুন স্টেশনের কারনে প্রায় সব ট্রেন এখন বিলম্বে চলছে। উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী প্রায় সব আন্তনগর ট্রেন ৫/৭ ঘন্টা বিলম্বে চলাচল করছে। কোন কোন ট্রেন ১০ ঘন্টা বিলম্বে চলাচল করছে। ক’দিন আগে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনই ১০ ঘন্টা বিলম্বে চলেছে। যে ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে আসে সেই ট্রেনই দিনাজপুর, চিলাহাটি বা পঞ্চগড় থেকে অন্য নাম ধরে ঢাকায় ফিরে যায়। কিন্ত সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় পথে ক্রসিং হলে ট্রেনগুলি ছোটখাটো স্টেশনে আটকে রাখা হয়। যে সব স্টেশনে কোন জনবল নেই ট্রেনের পরিচালকের মোবাইল নম্বরে কথা বলে ছেড়ে আসা বা কোন স্টেশনে আটকে রাখা হচ্ছে। ডবল লাইন হলে যাত্রিদের এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হতোনা।

নাটোরে রেল স্টেশন মাষ্টার খান মনির হোসেন রেলের সিডিউল বিপর্যয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খুলনার নতুন স্টেশন চালুর পর থেকে এমনটি শুরু হয়েছে। খুলনার নতুন স্টেশন থেকে পুরাতন স্টেশনের ওয়াস পিট বেশ দুরে। একারনে যাত্রি নামিয়ে ট্রেনটি ওয়াস পিটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ধোয়ামোছা বা পানি ভরে ফিরে আসতে সময় লাগার কারনে এমনটি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ট্রেনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সিঙ্গেল লাইনের কারনে দুর্ঘটনা এড়াতে এবং রেল লাইন ক্লিয়ার রাখতে আন্তনগর ট্রেনগুলিকেও বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড় করানো হচ্ছে। বিভিন্ন স্টেশন থেকে বিষয়টি রেলের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *