ব্যক্তিগত ডায়েরীর কারণেই ব্রাশফায়ারের শিকার আনোয়ারুল আজীম!

জাগোনাটোর রিপোর্টঃ
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘ দাবীর প্রেক্ষিতে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর স্বীকৃতি পেলেন নাটোর নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজীম। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর ব্রাশ ফায়ারে নিহত হয়েছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত ডায়েরীর কারণেই তাকে এই ব্রাশ ফায়ারের শিকার হতে হয়েছিল বলে জানা গেছে।
অপরদিকে নাটোরে মুক্তিবাহিনীর হাতে হত্যার শিকার হয়েছিলেন পাকিস্তানের জেনারেল টিক্কা খানের ভাগিনা আসলাম রাজা। তবে মৃত্যুর আগে পূর্ব বাংলার যুদ্ধ থামাতে তিনি ১০ মিনিট সময় চেয়েছিলেন।
সম্প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরুপ ১৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেন। তালিকার ৭ নম্বরে স্থান পান লে. আনোয়ারুল আজীম। তাকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর পুরস্কার প্রদান করা হয়। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর হলেও মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়ে তথা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া খুশি পরিবারের সদস্যরা।
লে.আনোয়ারুল আজীমের কর্মস্থল নর্থবেঙ্গল সুগারমিল হলেও তাঁর বাড়ি ছিল নওগাঁ জেলায়। তার পরিবারে স্ত্রী ছাড়া ২ ছেলে ও ১ মেয়ে ছিল। ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আজীমের স্ত্রী শামসুন্নাহার আজীম মৃতুবরণ করেন। জানা গেছে, পরিবারের বড় সন্তান, নাজমা বখতিয়ার এবং বড় ছেলে আনোয়ারুল কবির কানাডা প্রবাসী। ছোট ছেলে ডা. আনোয়ারুল ইকবাল ঢাকায় থাইরোকেয়ার লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত।
লালপুরের জনপ্রিয় আ’লীগ নেতা শহীদ মমতাজ উদ্দিনের ছোট ভাই, লালপুর-বাগাতিপাড়া আসনের সাংসদ এড. আবুল কালাম আজাদ জানান, লালপুরের নর্থবেঙ্গল সুগারমিলের তৎকালীন প্রশাসক লে.আনোয়ারুল আজীমসহ শতাধিক মিল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে পাক বাহিনী। বর্তমানে এদের মধ্যে ৪২ জনের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসকল শহীদদের স্বীকৃতির জন্য তিনি সংসদেও অনেকবার দাবী করেছিলেন। এছাড়া প্রতি বছর ৫ মে লালপুর গণহত্যা দিবসের আলোচনায়ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা একই দাবী করতেন। দীর্ঘদিন পরে হলেও বর্তমান সরকার আনোয়ারুল আজীমকে স্বীকৃতি দেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
শহীদ পরিবারের সদস্যরা দাবী করেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সারা দেশের উৎপাদন যন্ত্র অচল থাকলেও হানাদার বাহিনীর নাটোর ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর শেরওয়ানীর আশ্বাসে এলাকার আখ-নির্ভর অর্থনীতি ও আখ চাষীদের স্বার্থ বিবেচনা করে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের তৎকালীন প্রশাসক লেঃ আনোয়ারুল আজিম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যথারীতি মিলের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ গোপালপুরের ৪ কি.মি উত্তরে লালপুরের ময়না গ্রামে পাক বাহিনীর সঙ্গে ইপিআর, আনসার ও মুক্তিকামী জনগণের মুখোমুখি সংঘর্ষে হয়। পরের দিন মেজর রেজা খান নামের একজন পাকসেনা পালিয়ে যাওয়া পরিকল্পনা করলে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে গুলি করে হত্যা করে। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা ও যোদ্ধারা পাকিস্তান বাহিনীর মেজর আসলাম এবং ক্যাপ্টেন রাজাসহ ৩ জনকে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ভিতরে নিয়ে হত্যা করে। পরবর্তিতে এই মিলের শ্রমিক কর্মচারী এবং কর্মকর্তারাও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। আর তাদের সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন ওই মিলের তৎকালীন প্রশাসক লেফটেনেন্ট (অবসরপ্রাপ্ত) আনোয়ারুল আজিম। মুক্তিকামী জনতা মিলের ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরদী এয়ারপোর্ট রানওয়েটিও অকেজো করে দেয়। ফলে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল টার্গেটে পরিণত হয় পাকিস্তানী বাহিনীর।
৫মে সকাল ১১টার দিকে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের সবাই কাজে ব্যস্ত। এসময় স্থানীয় বিহারীদের সহযোগিতায় বর্বর পাক বাহিনী নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের সব গুলো গেটে তালা লাগিয়ে মিল ঘেরাও করে। এরপর তারা মিলে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে মিলের নিরস্ত্র কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের জিম্মি করে বিভিন্ন অফিস ও কর্মক্ষেত্র থেকে অর্ধ শতাধিক কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারীকে ধরে এনে মিলের ১নং গেট সংলগ্ন পুকুর ঘাটে (তৎকালীন গোপাল পুকুর) সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। এরপর তারা মৃতদেহগুলো মিল সংলগ্ন পুকুরে ফেলে দেয়। শহীদদের রক্তে সে দিন লাল হয়েছিল পুকুরের পানি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমে সেই পুকুরের নাম দেয়া হয় সাগরদিঘী। পরবর্তিতে এর নামকরণ করা হয় শহীদ সাগর। ১৯৭৩ সালে আনোয়ারুল আজীমের স্মরণে গোপালপুর রেলষ্টেশনের নামকরণ করা হয় আজীম নগর।
মিলের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সেই পুকুর পাড়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয় শহীদ স্মৃতি যাদুঘর ও স্মৃতিস্তম্ভ। প্রতি বছর এই দিনটি স্মরণে সেখানে স্থানীয়ভাবে নানা আয়োজন করা হয়।
পাকিস্তানীদের হত্যাযজ্ঞে যারা আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৪২ জনের নাম শহীদ স্মৃতিস্মম্ভের তালিকা থেকে জানা যায়। এরা হলেন আনোয়ারুল আজিম, শহিদুল্লাহ, সাইফুদ্দিন, সৈয়দ আঃ রউফ, গোলজার হোসেন, আবুল হোসেন, খন্দকার আঃ মান্নান, গোলাম কিবরিয়া, নূরুল হক, আজাহার আলী, মকবুল হোসেন, আবুল বাসার খান, আজিজুর রহমান, মনসুর রহমান, সাজেদুর রহমান, খন্দকার ইসলাম হোসেন, হাবিবুর রহমান, মোসাদ্দরুল হক, মোকসেদুল আলম, আব্দুর রহমান, মোহাম্মদ আলী-১, মোহাম্মদ আলী-২, আব্দুল মান্নান তালুকদার, মোজম্মেল হক, ফিরোজ মিয়া, আকতার উদ্দিন, সোহরাব আলী, আঃ মজিদ, আনোয়ারুল ইসলাম, পরেশ উল¬াহ, সামসুল হুদা, কামাল উদ্দিন, আবুল কাশেম, আব্দুর রব, আবুল কালাম, আঃ রাজ্জাক-১, আঃ রাজ্জাক-২, নজরুল ইসলাম, আয়েজ উদ্দিন, তোফায়েল প্রামাণিক, মসলেম উদ্দিন এবং শহিদুল ইসলাম। এছাড়াও ঐদিন গোপালপুর বাজার এলাকায় বর্বর পাক সেনারা ডাঃ শাহাদত হোসেন, আবুল হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, সাজদার রহমান, আশরাফ আলী এবং বকস খলিফা নামে আরও ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে।
তৎকালীন মিলের প্রশাসক আনোয়ারুল আজিমের স্বরণে পরবর্তিতে গোপালপুর রেলওয়ে স্টেশনের নামকরণ করা হয় আজিম নগর।
শহীদ লে. আনোয়ারুল আজীমের সম্পর্কে জানতে চাইলে, তৎকালীন লালপুর থানার ওসি আফতাব উদ্দিনের মেজ ছেলে সাংবাদিক এসএম মনজুর-উল-হাসান জানান, পাবনার মুলাডুলি নামক স্থানে স্থানীয় প্রতিরোধ বাহিনীর সাথে পাক বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ হয়। মনে করা হয়, এসময় দলছুট একটি বাহিনী বনপাড়া রাস্তা হয়ে লালপুর এলাকায় প্রবেশ করে। এসময় স্থানীয় মুক্তিপাগল জনতার প্রতিরোধের মুখে তারা ময়না গ্রামের এক কৃষকের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বাড়ির সদস্যদের বের করে দেয়। খবরটি পৌঁছলে, লালপুর থানার ওসি আফতাব উদ্দিন, নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজীমসহ স্থানীয় আ’লীগ নেতৃবৃন্দ থানা চত্বরে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওসি আফতাব উদ্দিন সহযোগীতার জন্য পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরদী থানা থেকে ২ জন পুলিশ সদস্য, রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমী থেকে পিকআপ ভ্যানে ৪-৫ জন ইপিআর পৌছে। ইতোমধ্যেই ৩-৪শ সাঁওতাল সদস্যরা তীর-ধনুক সহ পাকিস্তান বাহিনীর প্রতিরোধে থানা চত্বরে সমবেত হয়। জিএম আনোয়ার আজীম সকল সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে বিদায় নিয়ে সুগারমিলে ফিরে যান। এসময় লালপুর থানার ওসির নেতৃত্বে উপস্থিত পুলিশ, ইপিআর ও সাঁওতাল সদস্যরা ময়না গ্রামের দিকে ধাবিত হলে পাক বাহিনীর সাথে তাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। প্রথম দিকে উভয়পক্ষ থেকেই গোলা-গুলির সাঁওতাল সদস্যরা তীব ছুঁড়তে থাকলেও বেশ কিছুক্ষণ পর পাক বাহিনীর পক্ষ থেকে গুলিকরা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিরোধ বাহিনীর পক্ষে বেশ কিছুক্ষণ গুলি ও তীর ছোঁড়া অব্যাহত থাকলেও পাক বাহিনীর পক্ষ থেকে কোন প্রত্যুত্তর পাওয়া যায় না। এসময় সন্দেহ হলে ওসির নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ বাহিনী নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে থাকে। এসময় নাটোর পৌরসভার কর্মচারী বাচ্চু ঠাকুরের ভাই পাক বাহিনীর অবস্থান জানতে ঘটনাস্থলের একটি খেজুর গাছে উঠলে পাক বাহিনী তাকে গুলি করে হত্যা করে। পাক বাহিনীর অবস্থা প্রতিরোধ বাহিনীর কাছে পরিস্কার হয়ে যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতিরোধ বাহিনী পাক বাহিনীকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। এক পর্যায়ে তিন জনকেই বন্দী করে প্রতিরোধ বাহিনী। ওই তিনজনের মধ্যে একজনের শরীরে মহিলার ছেঁড়া শাড়ি পরিহিত এবং অপর দুইজনকে ছেঁড়া মশারী পরিহিত অবস্থায় বন্দী করা হয়। তাতে প্রতিরোধ বাহিনীর আর সন্দেহ থাকে না যে, ওই তিনজন রাতের আঁধারে পালানোর পরিকল্পনা করে পোশাক পরিবর্তন করেছিল। বন্দীত্রয়কে গোপালপুর সুগারমিলের কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা পোড়াবাবুর তত্বাবধানে রাখা হয়।
পরের দিন বিকেল চারটায়, লালপুর ব্রজসুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ওই তিনজনকেই চাকু দিয়ে স্ট্যাবের পর পোড়াবাবু থ্রি-নট-থ্রি রাইফেলের গুলিতে হত্যা করেন। এরপর তাদের লাশ একটি ট্রাকে উঠিয়ে গোপালপুর সুগারমিলের গোবিন্দপুর ফার্মের ভাগারে(আবর্জনাস্তুপ) ফেলে দেয়া হয়। এসময় শত শত মুক্তিকামী জনতা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রথমে গাড়ির চালককে হত্যার পর ক্যাপ্টেন এবং শেষে মেজর রাজা আসলামকে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে কেউ কোন কথা বলতে চায়নি। পরে ক্যাপ্টেন পরিচয়ে এক সেনা জানায়, মেজর আসলাম রাজা পাকিস্তানের জেনারেল টেক্কা খানের ভাগিনা আর অপরজন গাড়ির চালক। এসময় সে দাবী করে, রাস্তা না চিনে তারা গ্রামটিতে প্রবেশ করেছিল। তার বাবা পাঞ্জাবী আর মা ছিলেন বাঙালী। তাই তার চেহারা বাঙালীদের মত বলেও দাবী করে সে।
পোড়াবাবুর রাইফেলের গুলিতে ক্যাপ্টেন ও তাদের গাড়ি চালক নিহত হওয়া পর্যন্ত আসলাম রাজা কোন কথা বলেন নি। তবে আসলাম রাজাকে চাকু দিয়ে স্ট্যাব করার পূর্ব মুহুর্তে সে কথা বলে। এসময় সে জানায়, ‘তোমরা আমাকে দশ মিনিট সময় দাও, আমি এদেশের যুদ্ধ থামিয়ে দিচ্ছি’।
কিন্তু তার কথা কেউ বিশ্বাস করেনি। এরপর তাকে একই ভাবে হত্যা করা হয়। গুলি করার পরও সে বার বারই উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে উপস্থিত জনতা তার ওপর দা-ফলা ও বিভিন্ন দেশী অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এক প্রশ্নের জবাবে এস এম মনজুর-উল-হাসান দাবী করেন, তিনি তার বাবার কাছে শুনেছেন, মুক্তিযুদ্ধকে সার্বিক সহযোগীতার অংশ হিসেবে লে.আনোয়ারুল আজীম, লালপুর থানার ওসি আফতাব উদ্দিনকে একজন চালকসহ জীপ গাড়ি প্রদান করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিনই ওসির সাথে আনোয়ারুল আজীমের দফায় দফায় বৈঠক হত।
এসময় আনোয়ারুল আজীমের দফতরে বিভিন্ন আলোচনা শেষে আনোয়ারুল আজীম তার ব্যক্তিগত একটি ডায়েরীতে কিছু লিখছেন দেখে ওসি আফতাব উদ্দিন প্রশ্ন করলে আজীম জানান, যেহেতু সুগারমিলের দায়িত্ব তার ওপর রয়েছে। তাই প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য তার দেয়া জয়বাংলা পতাকা খরচ, গাড়ির তেল খরচ, মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া আনুসঙ্গিক খরচ আমি লিখে রাখি। যেহেতু এটা সরকারী প্রতিষ্ঠান, তাই এই খরচ আমাকে দিতে হবে। তাই খরচগুলো ডায়েরীতে সংরক্ষণ করি।
বিষয়টি জানতে পেরে এমন ডকুমেন্ট না রাখতে তাকে বার বার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
১৯৭১ সালের মে সকালে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে স্থানীয় কয়েকজন বিহারী ৪-৫জন পাকিস্তানী সেনাকে নিয়ে গোপালপুর সুগারমিলে যায়। শত্রুদের খুঁজে না পেয়ে এক পর্যায়ে আজীমের দফতরে প্রবেশ করে। তার সাথে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে আনোয়ারুল আজীমের ব্যক্তিগত ডায়েরীটি তার সামনে থেকে উঠিয়ে নেয় পাক বাহিনী। ডায়েরীটি পড়ে তারা উত্তেজিত হয়ে উঠে। ডায়েরীতে লিখা ছিল জয় বাংলার পতাকার জন্য খরচ কত টাকা, পাক সেনাদের প্রতিরোধের জন্য খরচ কত টাকা, এলাকা পাহারা দেয়ার জন্য কত টাকা, এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ প্রতিরোধে সার্বিক খরচ সেখানে উল্লেখ করা ছিল।
এসময় তাকে চেয়ার থেকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে পাক বাহিনী। ওই সময়ে আশে পাশের সকলকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পাক-বাহিনীর সদস্যরা আনোয়ারুল আজীমসহ সকলকে নিয়ে গোপাল পুকুরের পাড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *