নাটোরে করোনা উপসর্গ নিয়ে ২ জনের মৃত্যু ॥ নতুন আক্রান্ত ৬৬ জন

নাটোর অফিস ॥
নাটোর সদর হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মনসুরি বেগম (৪০) ও রতন (৪০) নামে দুই জন মারা গেছে। নতুন করে ৬৬ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে। মারা যাওয়া মনসুরি বেগম সিংড়া উপজেলার বনকুড়ি গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী এবং রতন নাটোর শহরের হরিশপুর এলাকার আব্দুল লতিফ হোসেনের ছেলে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের দেয়া তথ্যে জিন এক্সপার্ট ও র‌্যাপিড এন্টিজেন মেশিনে ২৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৬ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে র‌্যাপিড এ্যন্টিজেন মেশিনে ২৪৪ জনের নমুনায় ৪৯ জন এবং জিন এক্সপার্ট মেশিনে ৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। এতে সংক্রমনের হার ৩৭ শতাংশ। যা গত দিনের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম। গত বৃহস্পতিবার সংক্রমনের হার ছিল ৫১ শতাংশ। এনিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত ২৫৬৭জন। মোট মৃত্যু ৪১ জন।
এদিকে উপসর্গ সহ করোনায় আক্রান্ত ৬২ জন সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। অপরদিকে ৭ কর্মকর্তা কর্মচারীর ৫জন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় বাগাতিপাড়া শাখা অগ্রণী ব্যাংক লকডাউন ঘোষনা করা হয়। বৃহস্পতিবার বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল দুপুরে এক গণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই লকডাউনের ঘোষণা দেন ।
নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মনজুর রহমান হাসপাতালে দুই জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মুনসুরি বেগম ও রতন দুজনেই বৃহস্পতিবার বিকেলে করোনা উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতারের ইয়োলো জোনে ভর্তি হন। তবে তাদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করার আগেই রাতেই মারা যান। তিনি আরও জানান ,হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৪২ জন এবং উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের ইয়োলো জোন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ২০ জন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাধারন রোগীদের অভিযোগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনারোগীদের সাহায্যকারী সজনদের অবাধ চলাফেরা ও মেলামেশায় ঝুঁকিপুর্ন করে তুলেছে পরিবেশ। করোনা রোগীর সেবাদানকারীরা অবাধে হাসপাতাল চত্বর সহ বাজারে যাতায়াত করছেন। এতে করে সাধারন রোগীসহ স্বাস্থ্য কর্মীরাও সংক্রমিত হওয়ার শংকা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি ব্রবস্থা গ্রহণের দাবী করেছেন তারা।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ পরিতোষ কুমার রায়ের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও শংকা প্রকাশ করে বলেন,এঅবস্থায় তারাও রয়েছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। মানা করা সত্বেও তারা কখনও কখনও আমার ঘরেও ঠুকে পড়ে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে তাদের বার বার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু কেউ শোনে না তাদের কথা। স্বাস্থ্য বিধি না মানায় তিনি সহ হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারসহ কর্মকতর্কা কর্মচারীরা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা না নিলে গোটা হাসপাতাল সংক্রমিত হওয়ার শংকা রয়েছে।
সিভিল সার্জন ডাঃ কাজী মিজানুর রহমান বলেন, পিসিআর মেশিন না থাকায় সংক্রমনের হার নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জিন এক্সপার্ট ও র‌্যাপিড এন্টিজেন্ট টেষ্টে যাদের শরীরে পজেটিভ থাকার রেজাল্ট আসে ,পিসিআর মেসিনে তাদের অনেকের রেজাল্ট নেগেটিভ দেখায়। এছাড়া জিন এক্সপার্ট দিয়ে দিনে ২০টির বেশি নমুনা পরীক্ষা করতে পারেননা তারা। একারনে নাটোরে সংক্রমন উর্ধমুখিই থেকে যাচ্ছে। হাসপাতালে কোরনা রোগীর সাথে থাকা অভিভাবকদের বিষয়ে জেলা প্রশাসন সহ স্থানীয় এমপিকে বলা হয়েছে।
এদিকে সংক্রমন রোধে নাটোর ও সিংড়া পৌর এলাকায় দ্বিতীয় দফা লকডাউনের তৃতীয়দিনেও শহরে নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া অন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেনি। প্রতিদিনের মত আজও সকাল থেকে শহরের গুরুত্বপুর্ন এলাকায় শক্ত অবস্থান নিয়েছে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *