
নাটোরের মানুষের কাছে বাঙ্গি এমন একটি মৌসুমি ফল, বৈশাখ মাসে যার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। কয়েক বছর যাবৎ বাংলা বৈশাখ ও হিজরী রমজান মাস একই সময়ে হওয়ায় চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে যায় বাঙ্গির।
তবে এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন।
করোনার কারণে হাট-বাজারের সংখ্য ও পরিসর কমে যাওয়ায় কমেছে বাঙ্গির বিক্রি।
রমজানকে টার্গেট করে যেসব কৃষক বাঙ্গি ও তরমুজ চাষ করেছিলেন তারা বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়তে চলেছেন।
এবার রমজানের শুরু থেকে নাটোরের হাট-বাজারগুলোতে বাঙ্গি উঠেছে ঠিকই তবে নেই প্রত্যাশিত ক্রেতা। শহরেও কমছে বাঙ্গির চাহিদা। এছাড়া জেলার বাইরের পাইকাররা বাঙ্গি কেনা বন্ধ রেখেছে।

‘চলতি বছর নাটোর জেলায় ৬৮৮ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে।’
চাষীরা জানান, নাটোরে সবচেয়ে বেশি বাঙ্গি চাষ হয় গুরুদাসপুর এবং বড়াইগ্রাম উপজেলায়। পাশাপাশি চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া ও সদর উপজেলার বেশ কিছু এলাকাতেও চাষ হয় বাঙ্গি।
বিক্রেতা বলছেন, ‘আকারভেদে ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা দরে বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে। তবে আকারে বড় বাঙ্গির দাম কিছুটা বেশি হলেও সংখ্যায় কম। অধিকাংশ বাঙ্গিই মাঝারি আকারের। পচনশীল হওয়ায় ছোট ও মাঝারি সাইজের বাঙ্গিই বেশি বিক্রি হচ্ছে।’
গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার মধ্যবর্তী বনপাড়া-হাটিকুমরুল ও নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশ্ববর্তী জমিগুলোতে চাষ হয়েছে বাঙ্গি।

বাঙ্গিচাষী বিমল কুমার জানান, এবার রাস্তার ধারে পসরা সাজিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে।
‘অথচ বৈশাখ মাসে আমরা বাঙ্গি বেঁচে কুল পাইনা।’
বাঙ্গি চাষীদের অনেকেই আগে রসুন চাষ করতেন বড়াইগ্রামে। লোকসান হওয়ায় রসুন থেকে সরে এসে বাঙ্গি চাষ করতেন অনেক কৃষক। এমন একজন বাঙ্গিচাষী ভরটহাট এলাকার আব্দুল কুদ্দুস।
তিনি জানালেন, কয়েক বছর ধরে রসুনের ভালো ফলন হলেও আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
‘রসুনের লোকসান কাটাতে বাঙ্গি চাষ করি। গতবছর ভালো দাম পাই। এবার দাম নেই বাঙ্গির।’

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিমও মনে করেন করোনা পরিস্থিতির কারনে বাঙ্গির দাম পাচ্ছে না চাষীরা।
তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শিধুলী, চলনালী ও পোয়ালশুড়া গ্রামে সবচেয়ে বেশি বাঙ্গি চাষ হয়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘চাইলে কৃষকের বাঙ্গি বাজারজাতকরণে সাহায্য করবে কৃষি বিভাগ। তবে দাম ক্রেতাদের রুচির ও চাহিদার উপর নির্ভর করে। দামের ব্যাপারে কৃষি বিভাগের কোনো বক্তব্য নেই।’



