নাটোরে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও আতংক কাটেনি বানভাসিদের

নাটোর অফিস ॥
নাটোরের নদ-নদী, চলনবিল ও হালতি বিলের বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বানভাসিদের মাঝে আতংক কাটেনি।। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত গড়ে ৫৬ সেন্টিমিটার পানি কমেছে । বর্তমানে আত্রাই নদীর পানি সিংড়া এলাকায় বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । অপরদিকে নলডাঙ্গার বারনই নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আত্রাই নদীতে বিপদসীমার ১১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। আর বারনই নদীতে প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। পানি কমতে শুরু করায় মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বন্যার ভয়াবহতা নিয়ে আতঙ্ক কাটেনি। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ফের বন্যার পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু রায়হান এ তথ্য জানিয়েছেন। বন্যায় গত দুই দিনে সিংড়ার আত্রাই নদীর পানির প্রবল স্রোতে ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে শোলাকুড়া মহল্লার ১০ টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৫ টি বাড়ি আংশিক পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে পানি কমলেও ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে, আতংকে মানুষ মালামাল অন্যত্র সরে নিচ্ছেন। আজ সরেজমিনে গিয়ে নদীর পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ভাঙ্গন কবলিত স্থানগুলোতো বালিল বস্তা ফেলে তা রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ , আত্রাই ও বারনই নদী থেকে অবৈধ সোঁতি জাল আরো আগে অপসারণ করা হলে বন্যার ভয়াবহতা এত রূপ নিত না। অবৈধ সোঁতি জালের স্থাপনার কারণে নদ-নদীতে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে নদীতে পানি উপচে পড়ে নদীর তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। এছাড়া বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে চলনবিলের শতশত গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শতশত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, তলিয়ে গেছে রোপা আমন ক্ষেত। ভেঙ্গে গেছে অনেক আধা কাঁচা ঘরবাড়ি । ফলে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষরা। সরকারি ভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানান তারা।

নলডাঙ্গা উপজেলার খোলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কাওসার আলী ও সিংড়া উপজেলার শেলাকুড়া গ্রামের আবেদ আলী বলেন, ১৯৮৮ সাল, ১৯৯৮ সাল ও ২০১৭ সালে বড় বন্যা হয়েছিল। তবে এবারের বন্যা আরো বেশি বড় ও ভয়াবহ হয়েছে। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি কমতে শুরু হলেও যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাতে আবারো বন্যার পানি বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন বানু জানান, এবারের বন্যায় সিংড়া উপজেলায় ২৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক,২৩০ কিলোমিটার কাচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৩২০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩০ কোটি টাকা।২২ কোটি টাকার মাছ পািনতে ভেসে গেছে। ২০৩৯ টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৫ হাজার ৭শ পরিবারের ১লাখ ৩হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।২৮ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১৭২ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলার ৮ হাজার ৩শ পরিবারের ৩৩ হাজার ৯শ মানুষ বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
তিনি বলেন,সিংড়া উপজেলার বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ৬৭ মেঃটঃ চাল, ১৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ জানান, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে এটি একটি ভালো সংবাদ। আশাকরি দুই-একদিনের মধ্যেই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। নদ-নদীতে পেতে রাখা সকল অবৈধ সোঁতি জাল অপসারণ করার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সোঁতি জাল অপসারণ করা হয়েছে। ফলে নদ-নদীতে পানিপ্রবাহ এখন স্বাভাবিক রয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে। পর্যায়ক্রমে দুর্গত মানুষদের কাছে পৌঁছানো হবে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় মনিটরিং করা হচ্ছে এবং ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *