নাটোরে পান্তা ভাতে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে স্বামীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে স্ত্রী-ভাসুর! 

নাটোর অফিসঃ নাটোরে সদরের তেবাড়িয়া ইউনিয়নের সিংহারদহ গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক ওমর ফারুক মিঠুর স্ত্রী আম্বিয়া বেগমের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো তার বড়ভাই আব্দুল কাদেরের। আম্বিয়া ও কাদের পরস্পর বিয়ে করতে চাইলে পরিকল্পনামাফিক মিঠুকে হত্যা করা হয়।

আজ মঙ্গলবার(৯ই জুন) দুপুরে নাটোরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত এ হত্যাকান্ডের আদ্যোপান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা।

পুলিশ সুপার বলেন, নিহত মিঠু একটি ইটভাটায় কাজ করতেন। তার নিজের বাড়ি ছিলোনা। তাই বাস করতেন বড়ভাই আব্দুল কাদেরের বাড়িতে। মিঠু শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ায় গত চার বছর ধরে বড়ভাই কাদেরের সাথে স্ত্রী আম্বিয়ার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক সময় তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখনই মিঠুকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে তারা। গত ৩রা জুন ভোররাতে বাড়ির দরজার সামনে থেকে মিঠুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পরদিন মিঠুর বাবা আব্দুল্লাহ মিয়া বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর অনুসন্ধান, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা, মরদেহের অবস্থান ও সুরতহাল পর্যালোচনা, ঘটনার পারিপাশিপাশ্বিকতা ও পারিবারিক বিষয় পর্যালোচনা করে পুলিশ জানতে পারে আম্বিয়া মিঠুর তৃতীয় স্ত্রী এবং আম্বিয়ারও আগে বিয়ে হয়েছিলো। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিটুর স্ত্রীকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আম্বিয়া স্বীকার করেন স্বামীর বড় ভাই আব্দুল কাদেরের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে পরেন তিনি। এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য তারা মিঠুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

এসপি আরও বলেন, “পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন বিকেলে কাদের আম্বিয়াকে ৩টি ঘুমের ঔষধ দেয় খাবারের সাথে মিশিয়ে মিঠুকে খাওয়ানোর জন্য। রাত সাড়ে ৯ টায় আম্বিয়া তিনটি ঔষধ গুড়া করে পান্তা ভাতের সাথে মিশিয়ে মিঠুকে কেতে দেয়। খাবার পর ঘুমে ঢলে পড়ে মিঠু। রাত দেড়টায় কাদের আম্বিয়ার ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত মিঠুর গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে রাখে। প্রায় ১০ মিনিট পর ঘুমের মধ্যে মিঠু মারা যায়। মৃত্যু নিশ্চিত করে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলার জন্য দুজন মরদেহ নিয়ে গেটের বাইরে বের হলে রাস্তায় চলা একটি গাড়ীর সামনে এসে যায়। ভয় পেয়ে তারা দরজার সামনে মৃতদেহটি ফেলে রেখে বাড়িতে চলে যায়। আম্বিয়া বাড়িতে ঢুকে তার শ্বশুরকে ডেকে বলে দরজার সামনে মিঠুর মরদেহ পড়ে আছে। এসময় তাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে মিঠুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।”

লিটন কুমার সাহা বলেন, আসামী আম্বিয়া বেগমকে আদালতে সোর্পদ করা হলে হত্যাকান্ডে ভাসুর কাদের ও নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। ভাসুর আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরাম হোসেন, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত, গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম প্রমুখ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *