নাটোরে আন্তরিকতা নিয়ে মানুষের পাশে সিংড়ার ইউএনও নাসরিন

নাটোর অফিস॥
নাটোরের সিংড়া উপজেলাকে বৈশ্বিক মহামারী করোনা মুক্ত রাখতে দিন-রাত গ্রাম থেকে গ্রামে নিরন্তরে ছুটে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছামৎ নাসরিন বানু। প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তা সহ জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও তার সাথে কাঁধে কাধ দিয়ে একত্রে কাজ করে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে উপজেলাবাসীদের ঘরে রাখতে সফল হয়েছেন। ইউএনওর নেতৃত্বে সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় এখনও অবদি এই উপজেলাকে করোনা ভাইরাস ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

মরনব্যাধী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে জেলার সিংড়া উপজেলা প্রশাসন। তবে এসব নির্দেশনা পালনে বেশি তৎপর ও আন্তরিকতা দেখা গেছে ইউএনও মোছাঃ নাসরিন বানুকে। একজন নারী কর্মকর্তা হয়েও রাত-দিন বিরামহীন ভাবে ছুটে চলেছেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। জনগণকে সচেতন করা, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি নিন্ম আয়ের মানুষের ঘরে ঘরে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার খাবারের প্যাকেট পৌছে দিচ্ছেন তিনি। ৩৩৩ এর ফোন কলে সঙে সঙে শুকনো খাবার ও চাউল, আলু, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারের প্যাকেট নিয়ে ঘরে ঘরে ছুটে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে মানব সেবার পাশাপাশি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির ৬১ বস্তা চাল জব্দসহ প্রভাবশালী অপরাধীদের সাজার আওতায় এনে বেশ সুনামও কুড়িয়েছে। এরই মধ্যে তাঁর এসব কর্মকান্ডের কারণে ‘মানবিক নারী’ ইউএনও হিসেবে আখ্যা পেয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। অনেকের মতে, প্রশাসনিক অন্যান্য পুরুষ কর্মকর্তার চেয়ে একজন নারী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর কর্মকান্ড প্রশংসনীয় এবং দৃশ্যমান।

সেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুঃফুল হাবিব রুবেল বলেন, মোছাম্মৎ নাসরিন বানু চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি একজন নারী হয়েও বৈশ্বিক মহামারী করোনা মুক্ত রাখতে দুর্গম এবং প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে গ্রামে রাতদিন ছুটছেন। উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে নিজেই খুজে ফিরেছেন বিদেশ ফেরতাদের। উপজেলায় আগত প্রায় দুইশ’ বিদেশ ফেরতা মানুষদের খুজে বের করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। জনসাধারনকে সচেতন করতে সেনাবাহিনীর সাথে ছুটছেন বিভিন্ন এলাকায়। সামাজিক নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতেও পিছপা হননি। আবার মানবতার কর্মী হিসেবে খেটে খাওয়া এবং কর্মহীন মানুষদের ঘরে ঘরে গিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন খাদ্য সহায়তা।

সিংড়া পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন,স্থানীয় সংসদ সদস্য আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশ ও জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজের সহযোগীতায় ইউএনও নাসরিনের নেতৃত্বে এখন সবাই এক সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পালনে ইউএনও নাসরিন বেশী তৎপর এবং আন্তরিকতার সাথে কাজ করে চলেছেন। সকলের শিরোমনি হয়ে ওঠা ইউএনও নাসরিন বানুর কর্মযজ্ঞে সিংড়াকে এখন অবদি মরণব্যধি করোনা মুক্ত রাখতে পেরে সকলেই খুশী।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ নাসরিন বানু বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে যোগদানের পরপরই বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের দুযোর্গের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করতে হয়েছে। চলনবিল অধ্যুষিত বিশাল এই উপজেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় বিদেশ ফেরতাদের হোম কোয়েন্টাইন নিশ্চিত করাই ছিল তার প্রধান চ্যালেঞ্জ। গ্রাম ঘুরে ১৮৮ জনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে যাদের রাজি করানো যায়নি তাদের জরিমানাও করতে হয়েছে। এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাইকিং ,সচেতনতামূলক লিফলেট, মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। গণসমাবেশ রোধে দিন নেই, রাত নেই আমি প্রতিদিনই ছুটে চলেছি। পুলিশের সহযোগিতায় মোড়ে মোড়ে অহেতুক আড্ডা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি মরনব্যাধী এ অদৃশ্য ঘাতকের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন থাকতে তার অফিশিয়াল ফেইসবুক পেজেও সার্বক্ষণিক বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। চলনবিল অধ্যুসিত সিংড়া উপজেলার সকল হাট-বাজার, রিক্সা-ভ্যান ও অপ্রয়োজীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। আর এই দূর্যোগে সাধ্য অনুযায়ী মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাবারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌছে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণে অনিয়মসহ বিভিন্ন অনিয়মের খোঁজ খবর রাখতে প্রতিনিয়তই তাকে মাঠে থাকতে হচ্ছে। সকলের প্রচেষ্টায় এখনও করোনা সংক্রমিত কোন মানুষ পাওয়া যায়নি বলে আমারা এখনও অবদি শতভাগ সফল বলে মনে করছি। এখন কর্মহীন মানুষদের ঘরে ঘরে গিয়ে খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কষ্ট বা সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং পরিশ্রমের কারনে এই সফলতা বলে মনে করছেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *