নাটোরে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে দিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি!

প্রতিনিধি, বড়াইগ্রাম॥
ঈদের ছুটিতে কলেজ পড়–য়া প্রেমিক বাড়িতে এসেও গ্রামের স্কুল পড়–য়া প্রেমিকার সাথে দেখা করেনি। প্রেমিকা ফোন করলে সেটাও সে রিসিভ করেনি। তাই নিরুপায় হয়ে খোঁজ নিতে প্রেমিকের বাড়িতে ছুটে যায় প্রেমিকা। আর এতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হলো ১৪ বছর বয়সী অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীকে।
নাটোরের বড়াইগ্রামের নগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ইয়াসিন আলী সরকার ওই ইউনিয়নের খিদরি আটাই গ্রামের আফসার সরদারের ছেলে কলেজ ছাত্র সোহেল সরদার (২০)কে এ ঘটনায় দায়ী করে প্রথমে বিশেষ সুবিধা আদায়ে চেষ্টা করে। এতে ছেলেপক্ষ রাজী না হলে থানা পুলিশের সহায়তা নিয়ে জোর করে বাল্য বিয়ের কাজ সম্পন্ন করলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ইয়াসিন আলী। শনিবার রাত ১০ টার দিকে কালিবাড়ি এলাকায় কাজী মুক্তি হোসেন এই বিয়ে পড়ান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছেলে পক্ষের আতœীয়-স্বজনরা জানান, আগের দিন শুক্রবার বিকেলে একই উপজেলার মাঝগাঁওয়ের নটাবাড়ী গ্রামের শহীদুল ইসলামের মেয়ে তিরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সাথী আক্তার খিদরি আটাই গ্রামে তার প্রেমিক গোপালগঞ্জ পলিটেকনিক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সোহেলের খোঁজে আসে। এ সময় উৎসুক গ্রামবাসী বিষয়টির জন্য সোহেলকে দায়ী করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের শরণাপন্ন হয়। পরে সভাপতি ইয়াসিন আলী সরকার কিছু টাকা-পয়সা ঢালতে হবে এমন কথার প্রেক্ষিতে কিছু শর্ত প্রদান সাপেক্ষে বিষয়টি সুরাহা করার প্রস্তাব দেন। এতে মেয়ে বা ছেলে পক্ষ রাজী না হলে তিনি বিয়ে পড়িয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলে শুক্রবার রাতেই বিয়ে দেয়ার আয়োজন করা হয়। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার পারভেজ বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক থানা পুলিশের মাধ্যমে বিয়ে বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে শনিবার দুপুরে সভাপতি ইয়াসিন আলী সরকার সহ সঙ্গীয়রা থানা পুলিশের মাধ্যমে উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে নেয়। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলিপ কুমার দাস সাফ জানিয়ে দেন থানায় এ বিষয়ে কোন মিমাংসা হবে না। তবে তিনি মেয়েটির বয়স অল্প তাই বিয়ে না দেয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দেন। এরপর রাত ৮টার দিকে আবারো দুপক্ষকে নিয়ে মিমাংসায় বসলে রাত ১০টা দিকে কাজী ডেকে সভাপতি ইয়াসিন আলী তাদের উভয়ের মধ্যে বিয়ে পড়িয়ে দেন।
বিয়েতে উপস্থিত কয়েকজন জানান, মেয়েটি বারবার বলছিলো কাবিন করে রাখা হউক, বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি এখন সে যাবে না। কিন্তু বিয়ের পরই ওই রাতেই মেয়েটাকে বউ সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো শ্বশুর বাড়িতে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য সভাপতি ইয়াসিন আলীর মুঠোফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিলুফার ইয়াসমিন ডালু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আমি এই বিয়েটা না দেয়ার জন্য বারবার স্থানীয় নেতাদের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কেন এবং কিভাবে এই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হলো তার কারণও খুঁজতে তিনি নারাজ।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলিপ কুমার দাস জানান, থানায় আমার মাধ্যমে এ ব্যাপারে সুরাহার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু আমি সাফ বলে দিয়েছি বাল্যবিয়ে দেয়া যাবে না। অন্য কোন উপায়ে সুরাহা করার কথা ভাবলে থানার বাইরে নিজ এলাকায় বসে তা করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার পারভেজ জানান, আমি শোনা মাত্র তাৎক্ষণিক এ বিয়ে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি এবং তা বন্ধ হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে এ বিয়েটা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *