নাটোরবাসীর সাধ্যের ফল ‘বাঙ্গী’

নাইমুর রহমান, নাটোর
মধুমাস জ্যৈষ্ঠের এক সপ্তাহ পেরলেও নাটোরের বাজারে নেই আম। একমাত্র ফল হিসেবে লিচুর দামও আকাশচুম্বী। কেজি দরে বিক্রি হওয়া তরমুজও নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। মধুমাসের স্বাদ নেয়ার আয়োজনে হিমসিম খাওয়া নাটোরবাসীর সাধ্যের ফল এখন শুধুই বাঙ্গী।

মৌসুমের শুরু থেকেই নাটোরে ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের বাঙ্গী পাওয়া যাচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। দামও সস্তা। প্রতিপিস ১০ টাকা থেকে শুরু করে আকারভেদে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। ফলে যার যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই কিনে স্বাদ নিচ্ছেন বাঙ্গীর। প্রতিদিন শহরের স্টেশন বাজার, চকবৈদ্যনাথ, গুড়পট্টি, বড়গাছা বাজার, হাফরাস্তা, আলাইপুর, নীচাবাজার, মাদ্রাসামোড়, হরিশপুর, দত্তপাড়াসহ বিভিন্ন বাজার আর মোড়ে ভ্যানে চেপে বিক্রি হচ্ছে বাঙ্গী। ইফতারে তাই ফল হিসেবে কমবেশি সব শ্রেণির মানুষের টেবিলেই শোভা পাচ্ছে এ ফল।

বাঙ্গীর খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, নাটোরসহ আশেপাশের বাজারগুলোতে বাঙ্গী আসে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে। ভোরের আলো ফোঁটার পরপরই স্থানীয় পাইকাররা ছুঁটে যান বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে। সেখান থেকেই সকালে সংগ্রহ করা হয় পাঁকা বাঙ্গী। সেগুলো দিনের অর্ধেকটা সময় বিক্রি শেষে আবার ফিরে যান এবং সংগ্রহ করেন কাঁচা ও আধাপাঁকা বাঙ্গী। রাতভর পেকে পরদিন সকাল থেকেই শহরের বাজারগুলোতে মেলে সুস্বাদু বাঙ্গী।

চাষীদের মতে, বাঙ্গীর চাষের জন্য আলাদা করে জমির প্রয়োজন হয় না। রসুনের জমিতেই বাঙ্গীর বীজ বপন করতে হয়। রসুন উঠে যাওয়ার পরই বাঙ্গীর গাছ ছড়িয়ে পড়ে ক্ষেতে। সেই সময়ে সামান্য সেচ, সার-কীটনাশক দিলেই গাছে গাছে ফুল ও ফল ধরতে শুরু করে। রসুনের সাথী ফসল হিসেবে এখানে বাঙ্গীর পাশাপাশি তরমুজের আবাদ হলেও তা পরিমাণে অনেক কম। রসুনের জমিতে বাঙ্গীর আবাদ কমিয়েছে চাষীর খরচ ও শ্রম।

শুারুদাসপুর থেকে ভ্যানে বিভিন্ন সাইজের ৬০টি বাঙ্গী এনে শহরের মাদ্রাসামোড়ে বিক্রি করছিলেন মনসুর আলী। তিনি বলেন, ‘বাঙ্গীর চাহিদা বেশি। তবে ছুটির দিন হওয়ায় বিক্রি কম হচ্ছে। অন্যদিনে অর্ধেক বেলায় সব বাঙ্গী শেষ।’

আনসার আলী নামের স্টেশন বাজার এলাকার এক ক্রেতা বলেন, ‘ এক কেজি তরমুজের দাম ৫০ টাকা। ২৫০-৩০০ টাকার নীচে একপিস তরমুজ কিনতে পাওয়া যায় না। একশ’ লিচুর দাম ২০০ টাকা। এই অবস্থায় বাঙ্গীই একমাত্র দেশী ফল, যা কিনে খেতে পারি। ’

নাটোর কেন্দ্রীয় মসজিদ মার্কেটের সামনে আবুল কালাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে সস্তা বলতে একমাত্র বাঙ্গীই আছে। এক হালি কলার দামে প্রায় এক কেজি সাইজের একটি বাঙ্গী পাওয়া যায়। সে হিসেবে বাঙ্গীই লাভজনক।’

অপর ক্রেতা রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গীর জুস কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য উপকারী। কিনতে দরাদরী করার প্রয়োজন হয় না। অন্য ফলের দাম বেশী। তাই বাঙ্গী কিনি।’

ফলিক এসিডে পরিপূর্ণ বাঙ্গীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ রয়েছে। ফলিক এসিড রক্ত তৈরীতে সাহায্য করে। ১০০ গ্রাম বাঙ্গীতে ৩৪ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া কোলেস্টোরেলমুক্ত হওয়ায় খাদ্য হিসেবেও নিরাপদ বাঙ্গী।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, প্রায় বিনা খরচে রসুনের জমিতে বাঙ্গী চাষ সম্ভব হওয়ায় কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই উপকৃত হচ্ছে। দিনদিন বাঙ্গী চাষের পরিধি বাড়ছে। কম দামে বাজারে মেলায় সকলের ক্রয়ক্ষমতায় এখন পুষ্টিগুণসম্পন্ন মৌসুমী এ ফল।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *