বড়াইগ্রামে দুর্নীতির বাইরে সাংবাদিক নেই-এমপি ডাঃ পাটোয়ারী

নাটোর অফিস ॥
নাটোরের বড়াইগ্রামে দুর্নীতির বাইরে আছেন এমন সাংবাদিক দেখতে পাননা এমপি সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। বড়াইগ্রামে কর্মরত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এমন বক্তব্য দেয়ায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক মহল। শনিবার বড়াইগ্রাম উপজেলার বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় একটি প্রেসক্লাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই এমপি সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী এমন মন্তব্য করেন। পরে তার দেয়া এমন মন্তব্যে একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে স্থানীয় সাংবাদিক সহ জেলায় কর্মরত সাংবাদিক ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এমপি মহোদয়ের কাছে গঠনমুলক ও দায়িত্শীল বক্তব্য প্রত্যাশা করেছেন। এদিকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এমপি সিদ্দিক পাটোয়ারীর বক্তব্যের প্রতিবাদে বড়াইগ্রামের সকল সাংবাদিক আজ রোববার মানববন্ধন করার ঘোষনা দিয়েছে।
এমপি সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী সাংবাদিকদের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেছেন, উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে সাংবাদিক হিসেবে যখন আমি একজনের নাম দিতে চাই,তখন খুজেও তখন এক সাইফুল ভাই ছাড়া একজনকেও দেখতে পাই না যাদের ভেতর দুর্নীতি নাই। যারা দুর্নীতির বাইরে আছেন প্রকৃত সাংবাদিক এমন কাউকে দেখতে পাই না। কতিপয় সাংবাদিকদের পুকুর খনন বা মাটি বহনের কাছে বেশী দেখা যায়। সাংবাদিকদের অনুষ্ঠানে এমন বক্তব্য প্রদান করলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কেউ এর প্রতিবাদ জানাননি। পরে ওই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
এমপির ব্যক্তিগত সহকারী মিজানুর রহমান বলেন, একটি প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি দেখেন সেখানে উপস্থিত সব সাংবাদিক ভুয়া। তাই তিনি এই ধরনের মন্তব্য করেছেন। প্রকৃত সাংবাদিকদের তিনি এই কথা বলেননি। সাংবাদিকতা পেশা সমাজের দর্পণ, এই দর্পণের অনুকূল চরিত্র গঠন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য কথা প্রসঙ্গে এমনটা বলেছেন।
এপ্রসংঙ্গে বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রেসক্লাবের মু.অহিদুল হক এমপির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলেন, পুকুর খননের টাকা বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রেসক্লাবের কোনো সদস্যের পকেটে ঢোকেনি। মাটি কেটে যখন বিক্রি করা হয়েছে তখন একমাত্র আমরাই সেটার বিরুদ্ধে নিউজ করেছি। এভাবে ঢালাও কাউকে দোষারোপ করা ঠিক না। এমপি মহোদয়ের এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বড়াইগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মৃধা বলেন, উপজেলার বাজিতপুর গ্রামে নিজে টাকা দিয়ে পুকুর খনন করিয়েছেন। সাংবাদিকরা যেন সংবাদ প্রকাশ না করেন তার জন্য তিনি নিজে সাংবাদিকদের টাকা দিয়েছেন। তাহলে দুর্নিতীকে কে প্রশ্রয় দেয়। কার প্রশ্রয়ে দূর্নীতি হয়?
বড়াইগ্রাম কেন্দ্রী প্রেসক্লাবের সভাপতি ওমর ডি কস্তা বলেন, এমপি সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী যে সাংবাদিকের ছাপাই গাইছেন তিনি বড়াল নদের জায়গা দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাহলে কি তিনি দুর্নিতিবাজ নয়? এছাড়া এমপি মহোদয় যখন উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন কি প্রকল্পের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা লুট করেননি। এসব বলতে গেলে তো থলের বিড়াল বেড়িয়ে যাবে। তাই অযৌক্তি নয় যৌক্তিক কথা বলার সবিনয় অনুরোধ এবং তার দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবী জানাচ্ছি।
প্রবীন সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাবীউর রহমান পিপলু বলেন, আমি এই ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাই। একজন সাংসদের এ ধরনের বক্তব্যে সাংবাদিকদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয়েছে তা কি দিয়ে রক্ষা করবেন। তিনি (সাংসদ) এভাবে না বলে অন্য ভাবে বলতে পারতেন। ভবিষ্যতে তিনি আরও সংযত ভাবে মঞ্চে সাংবাদিকদের নিয়ে কথা বলবেন বলে প্রত্যাশা করি।
নাটোর প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, সাংবাদিক প্রসংঙ্গে সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে সাংবাদিকের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এমপির কাছে দায়িত্বশীল ও গঠনমুলক বক্তব্য প্রত্যাশা করেন তারা।
নাটোর ইউনিক প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক বুলবুল আহমেদ বলেন, কোন পেশা নিয়ে প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য একজন সংসদ সদস্যদের কাছে প্রত্যাশিত নয়। এমপি সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর সাংবাদিকদের ব্যাখা দেয়া উচিত কেন তিনি এমন কথা বললেন! ওই সংসদ সদস্য যে শতভাগ সৎ সেটাও কিন্তু তিনি দাবি করতে পারবেন না। তবে আমি মনে করি সাংবাদিকদেরও সততা চর্চা করা উচিত।
এবিষয়ে জানতে নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন,তিনি তার বক্তব্যে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সম্মান জানিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বড়াইগ্রামের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দিয়েছে। এই উপজেলায় নিত্য নতুন প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক তৈরি হচ্ছে। একটি উপজেলায় একাধিক প্রেস ক্লাব হওয়া নিয়েও কথা বলেছেন। এক সাথে একটি প্রেসক্লাবের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাংবাদিকতা করার জন্য স্থানীয় সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়েছেন। যারা সাংবাদিক তৈরি করছেন তাদের উদ্দেশেও বলেছেন,সাংবাদিকদের বেতন ভাতা প্রদানের জন্য। সাংবাদিকরা কষ্ট পাবেন এমন বক্তব্য তিনি বলেননি। তবে কথার কথা বলতে গিয়ে অসাবধনতায় অশোভন কোন বাক্য বা বক্তব্য তার মুখ দিয়ে বের হলে এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *