ঈদে ব্যতিক্রমী আয়োজন!

নাটোর অফিস॥
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ব্যতিক্রমী আয়োজনে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়েছে। উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামে এক ভিন্ন আঙ্গিকে ঈদ উদযাপন করেছে গ্রামের মানুষ। ওই গ্রামের মানুষ ঈদের আগের দিন থেকে আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহি গ্রামীণ ও প্রচলিত বিভিন্ন খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গ্রামবাসীরা জানায়, ঈদের আগের দিন বুধবার গ্রামবাসীদের মাঝে বিতরণ করা হয় ঈদ সামগ্রী। ঈদের দিন বৃহস্পতিবার বিকালে অনুষ্ঠিত হয় প্রিতী ফুটবল ম্যাচ, মোড়গ লড়াই, চেয়ার সিটিং,পুতুল কোল, বিস্কুট দৌড়, ব্যাঙ দৌড়, হাড়িভাঙ্গা, দড়ি ঘুরানো, কলা গাছে উঠা সহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রচলিত খেলা। গ্রামের নারী,পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এসব খেলায় অংশ নেন। নওপাড়া গ্রামের এই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান দেখতে পাশের গ্রাম থেকে অনেকেই আসেন। প্রবীণদের অনেককে বলতে শোনা যায় নওপাড়া গ্রামের এই আয়োজন দেখে শৈশবে মনে পড়ে যায় তাদের ঈদের পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মাতিয়ে তোলেন এই গ্রামেরই শিশু -কিশোররা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল কুরআন তেলাওয়াত, হামদ ও নাত, গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি, অভিনয়, যেমন খুশি তেমন সাজো ইত্যাদী। প্রতিযোগীতা শেষে শুক্রবার বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। একই অনুষ্ঠানে গ্রামের ভাল কোন কাজে বিশেষ অবদান রাখা ব্যাক্তি ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝেও পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
এই গ্রামের বাসিন্দা আয়োজক কমিটির সদস্য উপজেলা সদরের পেড়াবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার সামসুল আরেফিন জানান, একটা সময় ছিলো যখন মানুষ অবসর সময়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপন করতো বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ গ্রামীণ নানা ঐতিহ্যকে সাথে নিয়ে। তবে সময়ের পরিবর্তনে আজ বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার সেসব প্রাচীন ঐতিহ্য। ক্রিকেট ও ফুটবলের ছোয়ায় যখন সবাই মুখরিত তখন প্রযুক্তির উন্নয়নে অনলাইন গেইমস গুলো প্রকাশ পেয়ে যেনো হারিয়ে দিচ্ছে সকল খেলাধুলার আগ্রহ। সেরকম ঈদেও নেই আগের মত আনন্দ। সবাই এখন মোবাইল মুখি। মাঠের খেলা এমনকি গ্রামীণ সংস্কৃতিতে কোনো আগ্রহ দেখা যায়না বললেই চলে। এই গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নওপাড়া গ্রামের মানুষ দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ঈদ এলেই এরকম ভিন্ন ধর্মী ও ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। তিনি আরও বলেন,আমরা চাই এমন খেলাধুলার আয়োজন সব জায়গাতেই হোক। যাতে করে নতুন প্রজন্ম হারানো খেলাধুলাসহ বাঙ্গালির নিজস্ব আচার অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারে। তারা যেন বুঝতে পারে আমাদের বাঙ্গালিদেরও একটা সুন্দর বিনোদনের জগৎ রয়েছে, যা দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এগুলোর ঐতিহ্য ধরে রাখতে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *