ভাইরাল টিপু সুলতান ছাত্রলীগের কেউ না!

নাটোর অফিস ॥
রাজধানী ঢাকায় রিক্সা চালিয়ে চিকিৎসার অর্থ যোগানো নাটোরের বাগাতিপাড়ার টিপু সুলতান ছাত্রলীগের কোন নেতা বা কর্মী ছিলেন না বলে দাবী করেছেন উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃবৃন্দ।
তাদের দাবী, টিপু নিজেকে যে ফাগুয়ারদিয়ার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি দাবী করেছেন সে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলনই হয়নি প্রায় দুই দশক। মাদকাসক্তর কারনে টিপুর স্ত্রী টিপুকে তালাক দিয়ে চলে গেলে সে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ে। মাদকাসক্তির কারনে সে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল টিপুর জন্য একটি স্কুলে নিরাপত্তা কর্মীর চাকুরির ব্যবস্থা করলেও নিয়োগ পরীক্ষা অসমাপ্ত রেখে সে চলে আসে। ফলে তার আর চাকরি হয়নি। সম্প্রতি টিপু ঢাকা শহরে গিয়ে রিক্সা চালিয়ে ভাইরাল হন এবং তার বর্তমান অবস্থার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলকে দায়ী করে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিলে সারা দেশে আলোচনা শুরু হয়। সোমবার(৮মে) নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দের ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে ফাগুয়ারদিয়ার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম জানান, ২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তার পর ওই ইউনিয়নে ছাত্রলীগের আর কোন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। সেই হিসেবে এখনো তিনি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি। হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক ভিডিও কনটেন্ট থেকে জানতে পারেন, তার এলাকার যুবক টিপু সুলতান ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে ঢাকায় রিক্সা চালাচ্ছেন। সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে অর্থের অভাবে চিকিৎসার খরচ যোগাতে না পেরে টিপু রিক্সা চালাচ্ছেন অথচ তার সমস্যার ব্যাপারে সে কখনো কিছু জানায়নি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, টিপু সুলতান কখনো উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক বা কোন ইউনিটের নেতা ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে টিপু সুলতান অত্যন্ত ধুরন্ধর প্রকৃতির এক যুবক। এলাকায় সে মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত। সে বরাবরই নিজের অসহায়ত্ব প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে চায়। কাল রোববার হঠাৎ ঢাকার রাস্তায় টিপুকে রিকশা চালাতে দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। টিপুর দাবী তার চিকিৎসা করার টাকা নেই। অথচ চিকিৎসা বাবদ অর্থ সহায়তার জন্য মাননীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, উপজেলা প্রশাসন বা জেলা আওয়ামী লীগের সাহায্য চাননি তিনি। লালপুর ও বাগাতিপাড়ার অসংখ্য জটিল রোগে অসুস্থ ব্যক্তি সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর আবেদন করে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। অথচ টিপু কখনোই মাননীয় সংসদ সদস্যের সাথে এ নিয়ে যোগাযোগ করেননি। টিপু যোগাযোগ করলে কখনোই নিরাশ হতেন না। করোনা মহামারীর সময়ে যখন নিজ নির্বাচনী এলাকার গরীব-অসহায় মানুষের পাশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাদ্য সহায়তার হাত বাড়িয়েছিলেন সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, তখনও টিপু তার প্রয়োজনে সংসদ সদস্যের কাছে বা দলের কোন নেতার কাছে আসেননি। উল্টো টিপু ঢাকায় গিয়ে তৎকালীন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত কেন্দ্রিয় সাধারন সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সাথে দেখা করেন। গোলাম রাব্বানীর নিকট মাননীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের নামে বিষোদগার করে ফেসবুক লাইভে আসেন টিপু। গোলাম রাব্বানী মাননীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলকে ফোনে টিপুর ব্যাপারে জানালে মাননীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল টিপুকে ডেকে নেন। তিনি টিপুকে স্থানীয় শাইলকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিরাপত্তা কর্মী পদে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহনের অনুরোধ জানান। নির্ধারিত দিনে টিপু ওই পরীক্ষায় অংশ না নেয়ায় ওই পদে যথারীতি নিয়োগ সম্পন্ন হয়। তারপরও মাননীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল টিপুর জন্য আরেকটি কাজের ব্যবস্থা করে দেয়ার উদ্দেশ্যে তাকে দেখা করতে বললেও টিপু অদ্যবধি সংসদ সদস্য বকুলের সাথে দেখা করেননি। তারপর থেকে টিপু আর এলাকায় থাকেন না।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব বলেন, যেহেতু সামনে নির্বাচন তাই সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালামের প্ররোচনায় টিপু সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে সম্মানহানি করেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল ইসলাম ঠান্ডু বলেন, টিপুকে সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল একটি চাকুরির নিশ্চয়তা দিয়ে শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্য পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেছিলেন। পরীক্ষা অংশ নিয়ে শেষ পর্যন্ত থাকলে চাকরিটা টিপুই পেতেন। টিপুর ইচ্ছাকৃত এই উদাসীনতাকে কাজে লাগিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছেন। আমরা মনে করি এ পর্যন্ত টিপু যেসব কর্মকান্ড করেছে তা পূর্ব পরিকল্পিত এবং এসবের নেপথ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ।
সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। ২০২৬-১৭ সালে বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়ার দিয়ার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলনে টিপু সুলতান সভাপতি নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১২-১৩ সালে সে ইউনিয়ন সাধারন সম্পাদক হন। ওই কমিটিগুলো ছিল অনুমোদিত। পরে সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল পরবর্তীতে যে সব কমিটি করেছেন সেগুলোর একটিও অনুমোদিত হয়নি। টিপু সুলতান আওয়ামীলীগের কর্মসুচীতে যাওয়ার পথে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হলে তাকে দলীয়ভাবে এবং তিনি নিজে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা সহ সামর্থ অনুযায়ী সহায়তা করেছেন। এখন যারা তার সাথে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করছেন তারাও একসময় আমার গাড়িতে করে ঘুরেছেন। আমার কর্মী ছিলেন। যুবলীগ ছাত্রলীগ করেছেন। তারা এখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমি মনে করি সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের কাছে থেকে সুবিধা নিতে তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। এলাকায় আমার জনপ্রিয়তায় ভিত হয়ে সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের ইন্ধনে তারা আমার মানক্ষুন্ন করতে এসব মিথ্যাচার করছেন।
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, টিপু সুলতান তার কাছে কখনোই সাহায্য নিতে আসেননি। ছাত্রলীগ বা দলের কোনো নেতা বলে নয় বরং তার কাছে যে কেউ সাহায্য নিতে আসেন। তাদেরকে তিনি আর্থিকভাবে সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। যদি টিপু সুলতান তার কাছে আসতো তাহলে তাকেও তিনি সহযোগিতা দেওয়াসহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু তার কাছে না এসে টিপু কারো ইন্ধনে মিথ্যা প্রচারণা চলিয়ে তার এবং দলের সুনাম নষ্ট করেছেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *