শ্রমিক লীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষনায় বিভ্রান্তি- কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের বাকযুদ্ধ!

নাটোর অফিস ॥
নাটোরে নবগঠিত শ্রমিক লীগের নাজিল কমিটির ঘোষনা নিয়ে শুরু হয়েছে তুঘলকি কারবার। একদিনের ব্যবধানে দলের কেন্দ্রিয় কমিটির প্যাডে পাল্টাপাল্টি দুটি কমিটি পাঠানো হয়। কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কর্তৃক আলাদাভাবে স্বাক্ষর করা দুটি কমিটি ঘোষনায় দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সহ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নবগঠিত দুটি কমিটির পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের কমিটিকে বৈধ বলে দাবী করেছেন। দু’পক্ষই তাদের কমিটির বৈধতা দাবী করে পৃথক বলয় তৈরি করায় সংঘর্ষের আশংকা বিরাজ করছে।
এদিকে পাল্টাপাল্টি এই দু’টি কমিটির পক্ষ নিয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি নুর কুতুব আল মান্নান ও কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারন সম্পাদক আলহাজ কে এম আযম খসরুর মধ্যে শুরু হয়েছে বাক যুদ্ধ। দু’জনাই তাদের স্বাক্ষরিত কমিটিকে বৈধ কমিটি বলে দাবি করেছেন। সংগঠনের কেন্দ্রিয় সভাপতির অভিযোগ সাধারন সম্পাদক ঘরে বসে কমিটরি অনুমোদন দিচ্ছেন। অপরদিকে কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারন সম্পাদকের অভিযোগ সংগঠনের কেন্দ্রিয় সভাপতি মনগড়াভাবে নাটোর জেলা কমিটি স্বাক্ষর করে অবৈধ শ্রমচর্চা করেছেন ।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়,৭ জানুয়ারী জাতীয় শ্রমিক লীগ নাটোর জেলা শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও নতুন কমিটি ঘোষনা না করে নেতৃবৃন্দ ঢাকায় ফিরে যান। পরে গত ১২ জানুয়ারি নাটোর চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচিত সভাপতি সাইফুল ইসলামকে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এবং জাহাঙ্গীর আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষনার একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই পত্রে স্বাক্ষর রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক আলহাজ কে এম আযম খসরুর। পত্রে বলা হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি ও নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের সুপারিশের ভিত্তিতে ৭১ সদস্যের এই কমিটি তিন বছরের জন্য অনুমোদন করা হলো এবং পুর্বের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করা হলো। এই পত্র প্রাপ্তির পর ঘোষিত কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারন সম্পদক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে শহরে আনন্দ র‌্যালি করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নবগঠিত এই কমিটিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারন সম্পাদক আলহাজ কে এম আযম খসরু ১৩ জানুয়ারী এই কমিটি অনুমোদন দিয়ে স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু আলহাজ কে এম আযম খসরুর ঘোষিত কমিটির দুই দিন পর

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পাল্টা কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি নুর কুতুব আল মান্নানের স্বাক্ষরে পাল্টা নবগঠিত কমিটি ঘোষনা করা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি (শনিবার) বিকেলে সংগঠনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আব্দুর রহিম এবং রেজাউল ইসলাম নিজেদের ওই কমিটির জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন। তাদের নেতৃত্বে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৭ জানুয়ারী জাতীয় শ্রমিক লীগ নাটোর জেলা শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে বিগত কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি, সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান, শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, জাতীয় শ্রমিক লীগ নাটোর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি মইনুল হক ও সাবেক সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তজা আলী বাবলুকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ১২ জানুয়ারীতে কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক স্বাক্ষরিত নাটোর জেলা শ্রমিক লীগের কমিটি অনুমোদন সংক্রান্ত একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। সেই কমিটি অসাংগঠনিক, অসৎ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক হওয়ায় তা কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করে নতুন ৭১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটির অনুমোদন দেয়া হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
এদিকে রোববার জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক আলহাজ কে এম আযম খসরু স্বাক্ষরিত .কমিটি শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে তারা একটি সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের বৈধ কমিটি দাবি করেন। তারা আব্দুর রহিম এবং রেজাউল ইসলামের কমিটিকে অবৈধ বলে দাবি করে বলেন ওই কমিটি অর্থের বিনিময়ে ঘোষনা করা হয়েছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে ১২ জানুয়ারী ঘোষিত কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন,তাকে সভাপতি ঘোষনা করে কমিটির আত্মপ্রকাশের পর জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও পাল্টা কমিটির কথিত সভাপতি আব্দুর রহিম নিজেই আমাকে (১২ জানুয়ারী) ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো সহ আনন্দ র‌্যালিতে অংশ নেন।
জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক আলহাজ কে এম আযম খসরু বলেন,তিনি কার্যনিবার্হী কমিটির প্রধান হিসেবে অনুমোদিত কমিটি স্বাক্ষর করেছেন। দেশের ৪৩টি জেলা কমিটি তিনি স্বাক্ষর করেছেন। নাটোর কমিটি সহ দেশের যেসব জেলা কমিটি স্বাক্ষর করেছেন সেগুলোই বৈধ। সংগঠনের কেন্দ্রিয় সভাপতি নুর কুতুব আল মান্নান মনগড়া ও অগঠনতান্ত্রিকভাবে নাটোর জেলা কমিটি স্বাক্ষর করে অবৈধ শ্রমচর্চা করেছেন। আমাকে নিয়ে তার আলোচনার কোন সত্যতা নেই। তার কোন বক্তব্য থাকলে তিনি আমাকে বলতে পারতেন। আমার স্বাক্ষরিত কমিটি বৈধ হিসেবেই কাজ করবে।
জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নুর কুতুব আল মান্নান বলেন, তিনি নিয়ম বর্হিভুত কিছুই করেননি। কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপি ,সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান,শ্রমিক লীগের সাবেক জেলা সভাপতি মইনুল হক .সাবেক সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তজা আলী বাবলু ,সাবেক প্রতিম›ত্রী আহাদ আলী সরকারের সুপারিশকৃত কমিটিকেই অনুমোদন দিয়েছেন। ঘরে বসে স্বাক্ষর করা প্রায় ১৪টি কমিটি ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। তিনি ৫৩ বছর ধরে জাতীয় শ্রমিক লীগ লালন করছেন। অবৈধ কোন শ্রমচর্চা করেননি। বর্তমানে হাইব্রিডদের দাপটের কারনে সংগঠনগুলো হুমকির মুখে পড়েছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *