ফেসবুকে পরিচয়ে শিক্ষার্থীকে বিয়ে করলেন কলেজ শিক্ষিকা!


নাটোর অফিস॥
নাটোরের গুরুদাসপুরে ছয়মাস প্রেমের পর কলেজ শিক্ষক খাইরুন নাহারকে (৪০) বিয়ে করেছেন মামুন (২২) নামে এক শিক্ষার্থী। এই বিয়ের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনা রুপকথার গল্প রহিম বাদশা-রুপবানকেও হার মানিয়েছে। এই নব দম্পত্তি মনে করেন, বয়স হিসাব করে ভালোবাসা হয়না। ভালোবাসা স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করেও হয় না। ভালোবাসার সম্মোহনী শক্তি সব প্রতিকূলতাকেই হার মানায়। সমাজের চোখে যা অসংগতিপূর্ণ, প্রেমের ক্ষেত্রে তা খুব সহজেই আশকারা পায়। বয়সের বিস্তর ফারাক এই নব দম্পত্তির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের পর ৬ মাস প্রেম, তারপর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সাড়া ফেলেছেন নাটোরের এই কলেজছাত্র ও শিক্ষিকা। নতুন এই দম্পতির বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায়।

জানা যায়, উপজেলার খুবজীপুর মোজাম্মেল হক ডিগ্রি কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খাইরুন নাহার তার বাড়ী উপজেলার খামারনাচকৈর এলাকায়। প্রথমে বিয়ে করেছিলেন রাজশাহী বাঘা উপজেলায়। প্রথম স্বামীর ঘরে একটি সন্তান রয়েছে। পারিবারিক কলহে সংসার বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারেননি। একাকিত্ত আর হতাশায় প্রতিটি দিন কাটতো খাইরুন নাহারের। একাকিত্তের মাঝেই ২০২১ সালের ২৪ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় ২২ বছরের যুবক কলেজছাত্র মামুন হোসেনের সাথে। মামুনের বাড়ি একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামে। মামুন নাটোর এন এস সরকারী কলেজের ¯œাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রেমের ছয় মাসের মাথায় (২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর) তারা দু’জন বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। গত ১৩ মাসের সম্পর্কে রয়েছে গভীর ভালবাসার । আর এই গভীরতা থেকেই বিয়ে করেন তারা। ৬ মাস আগে বিয়ে করলেও সেটি গোপনেই ছিলো। অতি সম্প্রতি বিয়ের খবরটি ছড়িয়ে পরে এলাকায়।
খাইরুন নাহার বলেন, প্রথম স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পরেছিলাম। প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহুর্ত মানষিক কষ্টে কাটতো। একবার আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ঠিক সেই সময় ফেসবুকে পরিচয় হয় মামুনের সাথে। মামুন আমার খারাপ সময় পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছেন এবং নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। মামুন মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসে আমাকে। আর সেই ভালবাসা থেকেই দুজনের সিদ্ধান্তে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আমাদের বিয়ে মামুনের পরিবার মেনে নিলেও আমার পরিবার থেকে মেনে নেয়নি। সামাজিক ভাবে বিভিন্ন মহলে নানা কুৎসিত মন্তব্য থাকলেও তোয়াক্কা না করে নতুন সংসারে সুখেই দিন কাটাচ্ছি। আজীবন মামুনের সাথে সংসার করে যেতে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন এই দম্পতি।

মামুন হোসেন বলেন, মানুষের মন্তব্য কখনও গন্তব্য ঠেকাতে পারেনা। কে কি বললো সেগুলো মাথায় না নিয়ে নিজেদের মত সংসার গুছিয়ে নিয়ে জীবন শুরু করেছি। দাম্পত্য জীবনের সকলের দোয়া চাই।
ধারাবারিষা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, মামুন নাটোরে থেকে এনএস কলেজে পড়ালেখা করে জানি। আজ ফেসবুকে দেখলাম কলেজ শিক্ষিকাকে বিয়ে করেছে। শুনেছি ওই মেয়েটাও (খায়রুন নাহার) নাটোরে বাসা নিয়ে থাকে। সেখান থেকেই কলেজ করে। তাই বিয়ে করলেও ঘটনা জানাজানি হয়নি।
খুবজীপুর মোজাম্মেল হক ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাইদ বলেন, খায়রুন নাহার আমার প্রতিষ্ঠানের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। রোববার ফেসবুকের এই খবর দেখে প্রথমে ঘটনা জানলাম। ওই শিক্ষিকা বছর খানেক আগে বলেছিলেন, তিনি নাটোর শহরে বাসা নিবেন। এতটুকুই জানতাম। কলেজে আসলে ওই শিক্ষিকার সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানা যাবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *