নাটোরে শ্লীলতাহানির বিচার না পেয়ে অপমানে গৃহবধুর আত্মহত্যা

বড়াইগ্রাম: অপমানের বিচার না পেয়ে লজ্জা আর অভিমানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন শিপ্রা কস্তা (৩০) নামে এক গৃহবধু। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের সরাবাড়িয়া গ্রামে মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। শিপ্রা কস্তা ওই গ্রামের ডমিনিক রোজারিও’র স্ত্রী।
বড়াইগ্রাম থানা ও প্রতিবেশেী হাবিবুর রহমান জানান, শিপ্রা কস্তা তার স্বামীর বাড়ি সরাবাড়িয়া গ্রামে দুই কন্যাকে নিয়ে বসবাস করতেন। তার স্বামী ডমিনিক রোজারিও চাকুরী সূত্রে ফরিদপুরে থাকতেন। এসময় পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ের জন্য বাড়ির অদুরে মোড়ের উপর শাহআলমের (৩২) মুদি দোকন ঠিক করে দিয়ে যান ডমিনিক। সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় সদায় কেনাকাটা করতেন শিপ্রা।
এদিকে প্রতিবেশী রমজান ফকিরের ছেলে আলম ফকির (২৮), মান্নান আলীর ছেলে সবুজ সরকার (৩৩) ও আনার কুলির ছেলে আবু হানিফ (৩৫) নানা ভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ জুলাই রাত ৯টার দিকে দোকানদার শাহআলম শিপ্রার ফোন পেয়ে কিছু সদায় দিতে তার বাড়িতে যায়। এসময় আলম ফকির ও সবুজ সরকার সেখানে গিয়ে শিপ্রা ও শাহআলমের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক আছে মর্মে অভিযোগ তুলে তাদেরকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে শিপ্রার সয়ন ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে দুজনকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে এরপর উভয়কে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে মোবাইলে ছবি তুলে। এরপর তারা শিপ্রার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, উভয়ের মোবাইল ফোন সিনিয়ে নেয়। বিষয়টি কাউকে জানালে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায় তারা।
রাতেই বিষয়টি শিপ্রা তার স্বামী ডমিনিককে মোবাইল ফোনে জানান। তার পরামর্শে পরেরদিন সকালে বিষয়টি স্থানীয় মাতুব্বর হাবিবুর রহমান, ইউনিয়ন আওয়ামীলীহের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলমে মৌখিক ভাবে জানালে তারা এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ প্রদান করেন।
প্রতিবেশী এবং বোর্ণী ধর্ম পল্লীল পালকীয় সদস্য যোসেফ পালমা জানান, বিষয়টি নিয় স্থানীয় ভাবে মিমাংশা করে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন শিপ্রার মা শান্তি পালমা। কিন্তু অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় তা সম্ভব হয় নাই।
ডমিনিক রোজারিও বলেন, আমার অসুস্থ্যতার কারনে সময়মত আসতে পরিনি। এখনো আমার শরীরে ১০৩ ডিগ্রী জ্বর তাই কোন মন্তব্য করতে পারবো না। সন্ধায় মেয়েদের সাথে নিয়ে মোড়ের ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম ওষুধ নিতে ফিরে এসে দেখি শিপ্রা গলায় দড়ি দিয়ে আতœহত্যা করেছে।
শ্রিপ্রার মা শান্তি পালমা বলেন, ১২ বছর আগে বিয়ে দিয়েছি মেয়ের। জামাই ডমিনিক বাহিরে থাকে। শিপ্রা তার দুই মেয়ে দিয়া রোজারিও (১০) আর দিঘি রোজারিওকে (৫) নিয়ে বাড়িতে থাকে। তাই ভেবেছিলাম স্থাণীয়ভাবে বিষয়টি মিমাংশা করলে তারা ভবিষ্যতে বাড়িতে নিরাপদে ভাল থাকতে পারবে। মামলা করলে জামিনে এসে আরও অত্যাচার করবে। কিন্তু মিমাংশায় বিলম্ব হওয়ায় সবাইকে কাঁদিয়ে অভিমানে গলায় দড়ি দিয়ে আতœহত্যা করলো শিপ্রা। যাদের জন্য আমার মেয়ে আতœহত্যা করলো, তাদের কঠিন শাস্তি চাই।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলিপ কুমার দাস বলেন, শিপ্রা ও তার মা বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তারা মামলা না করে স্থাণীয় ভাবে মিমাংশার কথা বলেন। তবু তাদের নিকট থেকে শুনে পুলিশ পাঠিয়ে অভিযুক্তদ্বয়কে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয়েছে। তারা পলাতক থানায় ধরা সম্ভব হয় নাই। তিনি আরো বলেন, শিপ্রার লাশ উদ্ধার করে বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে অভিযুক্ত আলম ও সবুজ পলাতক এবং তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নাই।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *