চলনবিলের পরিবেশ রক্ষায় উদ্যমী ১১ জন!

নবীউর রহমান পিপলু,নাটোর অফিস ॥
চলনবিলের জীববৈচিত্র রক্ষায় নাটোরের সিংড়া উপজেলার উদ্যমী একদল যুবক গত প্রায় ৯ বছর ধরে প্রতিদিনই কাক ডাকা ভোর রাতে দুর্গম এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন পরিবেশ বিনষ্টকারী পাখি শিকারীদের ধরতে। বিলের মাছ-পাখি-শামুক-ঝিনুক সহ বন্য প্রাণী রক্ষায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী সহ বিল এলাকার মানুষদের সচেতন করতে চলনবিলের বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া -মহল্লায় ছুটে যাচ্ছেন। পরিবেশ রক্ষায় বিলি করছেন লিফলেট। ২০১২ সাল থেকে তারা নিজেদের ইচ্ছায় “চলনবিলের ঐতিহ্য ধরে রাখব, সবাই মিলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করব”-এই শ্লোগান নিয়ে তারা চলনবিলের জীববৈচিত্র রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের উত্তর জনপদের বৃহৎ চলনবিল বহুকাল আগে সমুদ্রসম, দিগন্তছোঁয়া চলনবিলের বিশালতœ ও ভয়ংকরীরূপ মানুষের মনে যেমনটি ভীতির সঞ্চার করত, তেমনি এর প্রশান্ত বুকে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক নৈসর্গিকতা মনে এক অফুরান্ত প্রশান্তি এনে দিত। বর্ষ মৌসুমে সমুদ্রের মত বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ত তীরে। এসময় পানিতে থৈথৈ করা চলনবিলকে সমুদ্রের মত মনে হতো। পাল তোলা নৌকা সহ ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা চলতো এই বিলে। এছাড়া তাল গাছের ডিঙ্গি ও মাটির তৈরি চাড়িতে করে স্বজনদের বাড়ি যাতায়াতের করতো বিলের মানুষ। সুদুর অতীতে বছরের ৬মাস পানি থাকতো চলনবিলে। বর্ষা মৌসুমে চলনবিলের মাঝে গড়ে ওঠা গ্রামগুলোকে দ্বীপ গ্রামের মত মনে হত। শিশু সহ সব বয়সী মানুষ থৈ থৈ করা বিলের পানিতে সাঁতার কাটতো। শীত মৌসুমে ভিনদেশী নানা জাত ও প্রজাতির পাখি আসতো এই বিলে। এই চলনবিলে রূপালী সম্পদ নানা প্রজাতির মাছের অবাধ বিচরণ, গাংচিল, বালিহাস, পানকৌড়ি, ডাহুক আর শীত মৌসুমে অতিথি পাখিদের কলরব, গুঞ্জন, নাম না জানা হাজারো পঙ্খী মালার ন্যায় নীল আকাশে ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো, ঋষি বকের ধ্যান মগ্ন ছবি মানুষের মনে অনাবিল সুখানূভুতির সৃষ্টি করত। এ বিলের নৈস্বর্গিক পরিবেশে আকৃষ্ট হয়ে মোঘল, পাঠান, ইংরেজ শাসকদের অনেকেই এই বিলে এসেছেন মৎস্য শিকার, নৌবিহার ও পাখি শিকার করতে। কিন্তু কালের বিবর্তন এবং মানুষের প্রয়োজনে রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ কার্লভার্ট এবং নদী তীরে বন্যনিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মানের কারনে উত্তর জনপদের বিশাল এই চলনবিল কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়লে ঐতিহ্য হারাতে বসে বিলটি। এছাড়া সরকারী খাল ও জলা অবৈধ দখল সহ অর্থলোভীরা মৎস্য শিকারে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করায় দেশী মাছ সহ জলজ প্রাণি বিলুপ্ত হতে থাকে। বিলের পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় শামুক নিধন এবং ফাঁদ পেতে অবাধে পাখি শিকার করা হয়। ফলে হুমকির মুখে পড়ে চলনবিলের জীববৈচিত্র। এই সময়ের ১১ উদ্যমি যুবক চলনবিলের পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী হন। চলনবিল অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণী ও পাখি রক্ষায় গড়ে তোলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন‘ চলনবিলের জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটি। চলনবিল অধ্যুষিত ৩ জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির কর্ম এলাকা নির্ধারণ করা হয়। জেলাগুলো হলো নাটোর,সিরাজগঞ্জ ও পাবনা। উপজেলা সমুহ হলো নাটোরের সিংড়া,গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা,সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ,রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলা এবং পাবনা জেলার চাটমোহর ,ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলা। চলনবিলের বিলহালতি ত্রিমোহনী কলেজের ভূগোলের শিক্ষক আখতারুজ্জামানকে সভাপতি এবং সাংবাদিক সাইফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট “চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি”র কার্য নির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। এই কমিটির অপর ৯ সদস্য হলেন ড. নূর আহমেদ শেখ,মোঃ সাকিবুল হাসান, প্রভাষক হারুন-অর-রশিদ,মোঃ সাইফুল ইসলাম বাবু,মহসিন আলম,প্রভাষক জাকিয়া পারভীন ও মোছাঃ ফজিলাতুন্নেছা (শাপলা)। এই কমিটি গঠনের পর গঠিত কমিটির সদস্যরা চলনবিলাঞ্চলে মা মাছ ও পোনা মাছ নিধনে বানার বাঁধ, সোঁতি ও বাদাই জালের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং বিলের বক, বন্যপ্রাণীসহ অন্যান্য অতিথি পাখি শিকারের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করণসহ বৃক্ষ রোপন ও গণসচেতনতামূলক কর্মসূচী পালন করতে শুরু করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ঢাকা, রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বিলের পাখি-শামুক-ঝিনুক-বন্যপ্রাণী রক্ষায় জনগণ ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে সচেতনামূলক সভা, সেমিনার আয়োজন ও চলনবিলে পাখি শিকারীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান ও ইয়ারগান জব্দে প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা করতে থাকে। এসব পরিবেশ আন্দোলনের পাশাপাশি চলনবিলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ও বানভাসি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন সময় দুস্থ এবং শীতার্তদের মাঝে নগদ অর্থ, শীতবস্ত্র বিতরণ এবং সমাজের নির্যাতিত ও অবহেলিত মানুষকে সহযোগিতা করে আসছে।
২০১৪ সালে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোল্যা রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগসহ তাঁকে নিয়ে সেমিনার ও মানব প্রাচীর রচনা করার মাধ্যমে কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। ক্রমেই সংগঠনটি বিস্তৃতি লাভ করে পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন। চলনবিলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় কমিটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১০১ জন। কমিটিতে রয়েছেন শিক্ষক, সমাজসেবক, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষার্থী,যুবক ও তরুন। সদস্যদের সকলেই পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে চলেছেন। এসব সদস্যদের অনেকেই চলনবিলের দুর্গম গ্রামে বাস করেন। কমিটির সদস্যের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ও সহযোগীতায় পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে চালানো হয় অভিযান। গত কয়েক বছরে এই কমিটির সদস্যদের অভিযানে বক, বালিহাস, গাং শালিক, চাকলা, ঘুঘু, তিতির, শামুককল ও টিয়া পাখিসহ প্রায় ৬ সহ¯্রাধিক অতিথি পাখি শিকারীদের কাছে থেকে উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয়। এর মধ্যে কেবল মাত্র চলতি বছরের এই ক’মাসে এক হাজারেরও বেশী পাখি শিকারীদের কাছে থেকে উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া হিমালয়ী গৃধিনী বিপন্ন প্রজাতির ১টি শকুন, ১টি বাগদাশ বন্যপ্রাণী ও ৩টি মেছো বাঘের ছানা ও ১টি গন্ধগোকুল উদ্ধার করে অবমুক্তকরা হয়। অভিযানে পাখি শিকারে ব্যবহৃত ৩টি ইয়ারগান জব্দ সহ কয়েকশ’ফাঁদ ধংস করা হয়। আটক করা হয় অন্তত ৫০ জনকে। উপজেলা প্রশাসনের সহোযোগীতায় এদের সবাইকে জরিমানা সহ মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
চলনবিল জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন,চলনবিলেন জীববৈচিত্র রক্ষার কাজে শুরুতে তারা সচেতনতামুলক প্রচারনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ উঠোন বৈঠকসহ লিফলেট বিতরণ করেছেন। প্রথমদিকে পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে গেলে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়। কিন্তু তারা ভিত না হয়ে প্রায় প্রতিদিনই দুর্গম গ্রামে গিয়ে অভিযান চালিয়েছেন। তারা স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় তারা অভিযান পরিচালনা করছেন। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ তাদের সার্বিক সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছেন। চলনবিলের পরিবেশ বিপন্ন হতে দেখে তারা নিজ উদ্যোগে এই কাজ শুরু করেছেন। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ঢাকা, রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বিলের পাখি-শামুক-ঝিনুক-বন্যপ্রাণী রক্ষায় জনগণ ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে সচেতনামূলক সভা, সেমিনার আয়োজন ও চলনবিলে পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ঢাকা, রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগও তাদের সহায়তা দিচ্ছেন। পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা ছাড়াও তারা চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় পাখিদের আবাস তৈরি করে দিয়েছেন। গাছে গাছে মাটির হাড়ি টানিয়ে পাখিদের আবাস বানিয়ে দিয়েছেন। ২০১৭ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল আহসানের সহায়তায় গাছে গাছে শতাধিক মাটির হাঁড়ি টানিয়ে পাখিদের আবাসস্থল বিনির্মান করা হয়। এছাড়া বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। পরিবেশ রক্ষার্থে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীতেও তিনি অংশগ্রহণ করে প্রসংশনীয় ভুমিকা রাখেন। ২০১৫ সালে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেমন্ত হেনরী কুবি এবং ২০১৬ সালে সে সময়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদেকুর রহমানও পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে আমাদের সংগঠন চলনবিল জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটিকে সহায়তা করেছেন। গত বছর বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবসে চলনবিলের জীববৈচিত্র্য ও পাখি রক্ষায় ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নেয়া হয়। শীতে চলনবিলের পাখি শিকারীকে ধরিয়ে দেওয়ায় পুরস্কার হিসেবে কুড়িটি শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করা হয়। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম.এম সামিরুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া) সার্কেল মো. জামিল আকতার এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.রকিবুল হাসান তাদের নিয়মিত সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। চলনবিলকে পরিবেশ মুক্ত রাখতে আমরা নিবেদিত। সংগঠনের প্রতিটি সদস্য নিস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন কোন না কোন দুর্গম গ্রামে ছুটে গিয়ে পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। সকালের সুর্য ওঠার আগেই আমরা কজন চলনবিলের দুর্গম পথ পেরিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিকারীদের বন্দিদশা থেকে পাখিদের মুক্ত করছি। শিকারীদের আটক করে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে সোপর্দ করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতে তাদের বিচার করা হচ্ছে। বিচারক জেল-জরিমানা করছেন তাদের।
১১ সদস্য চলনবিল জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাষক হারুন-অর -রশদি,অর্থ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবু ও প্রচার সম্পাদক মুহসিন আলী বলেন, তারা স্বইচ্ছায় ও আন্তরিকভাবে চলনবিলকে পরিবেশ দুষনমুক্ত রাখার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। চলনবিলের জীববৈচিত্র রক্ষায় মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের পরিবেশ বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার কাজও করে যাচ্ছি। আমরা শপথ নিয়েছি চলনবিলের ঐতিহ্য ধরে রাখব,সবাই মিলে রক্ষা করব চলনবিলের জীববৈচিত্র। আমরা মনে করি আমরাই আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে পারি। আমরাই পারি পরিবেশ সচেতন এক ঝাঁক তরুনকে গড়তে। আমরাই পারি আমাদের চলননবিলের ঐতিহ্য রক্ষার গুরু দায়িত্ব নিতে। আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ ও নিস্বার্থ প্রয়াস চলনবিলের পরিবেশ রক্ষা পাবে এম প্রত্যাশা আমাদের।
কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জান বলেন, চলনবিলের জীববৈচিত্র রক্ষার কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে পারায় নিজেকে ধন্য মনে করি। এই কাজে আনন্দ পাই। তাই দুর্গম গ্রামে ছুটে যেতে কোন অলসতা লাগেনা। ভাল লাগে তাই তরুনদের সাথে ছুটে যাই পাখি শিকারীদের ধরতে। আমাদের কমিটি শুধু পাখি শিকারীদের ধরার কাজে নিয়োজিত থাকেননা। চলনবিলের সর্বত্র পরিবেশবাদী মানুষ তৈরি বা তাদের খুজে বের করা এবং চলনবিলের জলজ উদ্ভিদের নাম, ১৩০ প্রজাতির মাছের নাম, চলনবিলের হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন প্রজাতির ধানের নাম, চলনবিলের ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি, চলনবিলের আগত পাখি ও বসবাসকারী পাখির নাম সংগ্রহে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের নাম (বিশেষত শতবর্ষী বৃক্ষের নাম),চলনবিলে উৎপাদিত বিভিন্ন শস্য এবং চলনবিলের জেলেদের বর্তমান অবস্থা ও চলনবিলে যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন নৌ যান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার কাজও করা হচ্ছে।
কমিটির অন্যতম সদস্য হাসান ইমাম বলেন, চলনবিল জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটি হচ্ছে চলনবিলের পরিবেশ বিনষ্টকারী গোষ্ঠি ও পাখি শিকারীদের কাছে একটি আতংকের নাম। আমাদের কর্মকান্ডে চলনবিল অঞ্চলের মানুষ একদিন সচেতন হবে এবং পরিবেশ দুষনমুক্ত চলনবিল তার পুর্বের রুপে ফিরে আসবে এমন প্রত্যাশায় আমরা নিস্বার্থভাবে এবং আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছি।
সিংড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রকিবুল হাসান বলেন,চলনবিল জুড়ে পাখি শিকারীদের কাছে আতংকের নাম চলনবিল জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির নাম। এই কমিটির সকল সদস্য চলনবিলের জীববৈচিত্র রক্ষায় আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। তাদের ডাকে আমাকেও প্রায় ২ /৩ দিন পর পর সময় দিতে হয়। চলন বিলের দুর্গম গ্রাম থেকে ধরে আনা হয় পাখি শিকারীদের।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া) সার্কেল মো. জামিল আকতার বলেন, এই কমিটির সকল সদস্য নিস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছেন। চলনবিলে পাখি নিধন রোধে চলনবিল জীববৈচিত্র কমিটির বড় ভুমিকা রয়েছে। পুলিশ যেখানে সময় মত যেতে পারেনা অথচ এই কমিটির সদস্যরা দ্রুত সেই সব দুর্গম গ্রামে গিয়ে পাখি শিকারীদের ধরে ফেলে। পুলিশও এদের সহযোগীতা করে থাকে। এদের আগ্রহের কমতি নেই। প্রায় প্রতিদিনই এরা অভিযান চালায় পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম বলেন, চলনবিলের সুরক্ষায় চলনবিল জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির প্রতিটি সদস্য নিবেদিত প্রান। চলনবিলের দুর্গম এলাকায় যেভাবে তাদের ছুটে চলা তা ঈর্ষনীয়। তাদের কারনে চলনবিলে পাখি শিকারীদের দৌরত্ম কমে গেছে। তাদের কর্মকান্ডে অনেকেই উৎসাহী হচ্ছেন। চলনবিলের পরিবেশ রক্ষায় চলনবিল জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটি একটি মডেল।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম.এম সামিরুল ইসলাম বলেন, চলনবিল জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির সকল সদস্য নিবেদিত প্রান। প্রায় প্রতিদিন ভোর রাতে চলনবিলের দুর্গম এলাকায় গিয়ে পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। উপজেলা প্রশাসন তাদের সব ধরনের সহযোগীতা করে থাকে। তারুন্য নির্ভর এই কমিটি পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো ছাড়াও বৃক্ষ রোপণ, পাখিদের আবাস স্থাপন, শামুক নিধন রোধে কাজ করে। তারা সবাই আন্তরিক এবং নিস্বার্থকর্মী। চলনবিলের পরিবেশ রক্ষায় তাদের কর্মকান্ড চলনবিল এলাকায় পাখি নিধন অনেকাংশেই সফলতা পেয়েছে। সকলের সহযোগীতায় তারা আরো সফল হবে এবং তাদের দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *