নাটোরের ‘অপয়া’ দিন

নাটোর অফিস॥
আজ ১৩ সেপ্টেম্বর। নাটোরের মানুষদের কাছে দিনটি ‘অপয়া’ হিসেবে চিহ্নিত। বছর ঘুরে দিনটি এলেই অনেকের মনে অজানা আশংকা বিরাজ করে। ১৯৮১ সালের এই দিনে নাটোরের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রথম মর্মান্তিক, হিংসাত্মক ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। ওই সময়ের বিএনপির’র অভ্যন্তরিন বিরোধের জেরে রাজনীতিতে তর তর করে উঠে আসা টগবগে যুবক যুবদল নেতা শহরের লালবাজার এলাকার ডাঃ রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল ওহাব রাজনৈতিক বলির শিকার হন। প্রতিপক্ষরা প্রকাশ্য দিবালোকে ওহাবকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। নাটোরের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রকাশ্য দিবালোকে কোনো রাজনৈতিক কর্মী খুনের ঘটনা এটাই প্রথম ।
১৯৯৫ সালের ১৩ সেপ্টম্বর ছিল নাটোর সহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের কাছে প্রিয়জন হারানোর ব্যাথা। এদিন নাটোরবাসী হারায় তাদের প্রিয় এবং অবিসংবাদিত নেতা বাবু শংকর গোবিন্দ চৌধুরীকে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামীলীগ নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরী ছিলেন নাটোরের সব ধর্মের মানুষের প্রিয়জন। অন্যের দুঃখে তিনি হতেন ব্যথিত। বিপদগ্রস্থ মানুষের সাহায্যে ছুটে যেতেন। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের কাছেও তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে এনে দেয় শুন্যতা। বছর ঘুরে দিনটি ফিরে এলে নানা আয়োজনের মাধ্যমে প্রিয় এই মানুষটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করা হয়। এবারও বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজনে প্রয়াত এই নেতাকে স্মরন করার ঘোষনা দিয়েছে।
১৯৮৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন পারভেজ নামে অপর এক যুবদল কর্মী । কলেজ ছাত্র পারভেজকে সন্ধ্যার পর বড়গাছা পালপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। অপর এক লোমহর্ষক খুনের ঘটনা ঘটে ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর শহরের বড়গাছা এলাকায়। বিএনপি কর্মী আসাদুল্লাহ বিটলীকে মোবাইল চুরির অপরাধে একই দলের কর্মী সমর্থকরা ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতনে হত্যা করা হয়। বিটলীকে ধরে একটি ঘরের মধ্যে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেদম মারপিট করা হয়। প্রায় দু’ঘন্টাব্যাপী এভাবে উল্টো করে ঝুলিয়ে মারপিট করায় বিটলী মারা যায়। এই লোমহর্ষক ও বর্বরোচিত হৃদয়বিদারক ঘটনা নাটোরের মানুষদের এখনও নাড়া দেয়। এসব বিয়োগান্ত ঘটনার পর থেকে নাটোরের মানুষ ১৩ সেপ্টেম্বরকে ‘অপয়া’ দিন হিসেবে মনে করে থাকে।
১৩ সংখ্যাটি নাটোরের মানুষের কাছে ‘অপয়া’ হয়ে থাকবে আমৃত্যু কাল। কেননা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৩ এপ্রিল থেকে পাক বাহিনী ও তাদের দোসর অবাঙ্গালীরা বাঙ্গালী নিধনের নামে শুরু করে হত্যাযজ্ঞ। এই দিন থেকে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তারা নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে প্রায় ৯ হাজার বাঙ্গালী নারী -পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করে। ফলে এই অপয়া ১৩ এপ্রিলকে নাটোরের মানুষ কালো দিন হিসেবে জানে। (পুনঃ সংকলিত)

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *